অ্যাওয়ার্ড কেনা থেকে বাবার সম্পর্কে সোজাসাপ্টা মন্তব্য, ঋষি কাপুরের ৮টি স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদন : বলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা ঋষি কাপুরের মৃত্যুতে শোকের ছাঁয়া বলিউডে। সত্তর ও আশির দশকে তাঁর অভিনীত হিন্দি সিনেমা জয় করে নিয়েছিল দেশের সিনেমা প্রেমীদের হৃদয়। বিখ্যাত কাপুর পরিবারের সন্তান, পিতামহ পৃথ্বী রাজকাপুর, বাবা রাজ কাপুরের হাত ধরে তাঁর বলিউডে প্রবেশ। নিজের অভিনয় দিয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন বলিউডে। ববি, চাঁদনি, দিওয়ানা, সাগরের মতো একের পর এক হিট ছবি দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন ক্যান্সারে। বৃহস্পতিবার সকাল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

ঋষি কাপুর তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্যের কারণে বিতর্কিত ছিলেন। এর জন্য যেমন প্রশংসা কুড়িয়েছেন তেমন সমালোচিতও হয়েছেন বহুবার।

ঋষি কাপুর তাঁর পরিবারের কেচ্ছা কাহিনী অবলীলায় তাঁর স্মৃতি কথাতে লিখেছেন। বিশেষ করে তাঁর বিখ্যাত বাবা রাজ কাপুরের বিভিন্ন বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে। উঠে এসেছে লেখায় নার্গিস ও বৈজন্তিমালার সঙ্গে তাঁর বাবার রোমান্সের কথা। তবে তিনি জানান, এতে তাঁর কোন প্রভাব পড়েনি কারণ তিনি সেইসময় খুব ছোট ছিলেন। তবে বৈজন্তিমালার সঙ্গে তাঁর বাবার প্রেম চলাকালীন পারিবারিক অশান্তি চরমে উঠেছিল। মা কৃষ্ণা রাজের হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এবং সেই সময় তাঁর মা ক্ষোভে দুঃখে একপ্রকার খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন।

তবে তাঁর সবচেয়ে স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য ছিল, ববি সিনেমার জন্য তিনি বেস্ট অ্যাক্টর অ্যাওয়ার্ডটা কিনে নিয়েছিলেন ৩০,০০০ হাজার টাকায়। যদিও এটার প্রাপ্য ছিল জঞ্জির সিনেমার জন্য অমিতাভ বচ্চনের।

তিনি জানান অভিনয় জীবনের প্রথমদিকে প্রেমে পড়েছিলেন ইয়াসমিন মেহেতা নামে এক পার্সি মেয়ের। কিন্তু মেয়েটির মনে হয়েছিল ববি সিনেমার নায়িকা ডিম্পল কাপাডিয়ার সঙ্গে তাঁর গোপন সম্পর্ক চলছে।কারণ এ বিষয়ে নিয়ে ফ্লিম পত্রিকাগুলোতে লাগাতার গসিপ চালানো হচ্ছিল। যদিও ডিম্পলের সাথে তাঁর কোনরকম গভীর সম্পর্ক ছিল না। এরপরই সেই সম্পর্কটা ভেঙে যায় তাদের। যদিও তাকে তিনি সত্যি ভালোবাসতেন।

অভিযোগ এনেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের বিরুদ্ধেও। সত্তর আশির দশকে অমিতাভ বচ্চনকে সামনে রেখে সিনেমার স্ক্রিপ্টগুলো লেখা হতো এবং মাল্টি স্টারার অভিনীত সিনেমাগুলির স্ক্রিপ্টে অমিতাভ বচ্চনকে যতটা গুরুত্ব দেওয়া হত অন্যদের তা দেওয়া হতো না। অমিতাভ নিজেও অন্য অভিনেতাদের কাজে স্বীকৃতি দিতে চাইতেন না।

ঋষি কাপুর অভিনয় জীবনে একটি মজার ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি সবসময় নিজের কস্টিউম নিজেই জোগাড় করতেন। একবার বেইরুটে ভুল করে এক মহিলার প্যান্ট পড়ে ফেলে অভিনয় করেছিলেন জেহেরিলা ইনসান সিনেমার জন্য।

ববির বিশাল সাফল্যের পর তাঁর অভিনীত অন্য সিনেমাগুলিতে যখন সাফল্য মিলছিল না, তিনি তখন হতাশার মধ্যে চলে গিয়েছিলেন বলা জানান এই অভিনেতা। আর এই ব্যর্থতার জন্য তখন তাঁর স্ত্রী নীতু কাপুরকে দায়ী করেছিলেন। নীতু কাপুর সেইসময় গর্ভবতী ছিলেন। পরে অবশ্য এজন্য তাঁর গভীর অনুশোচনা হয়।

ওম শান্তি ওম বা কর্জ-এর মতো সিনেমাগুলি বক্স অফিসে ঝড় তুললেও তাঁর মনে হয়েছিল এগুলিতে তিনি ভালো অভিনয় করতে পারেননি।

সাগর সিনেমা নতুন করে তাকে লাইমলাইটে নিয়ে আসে। ডিম্পল কাপাডিয়া এই সিনেমাতে থাকার কথা শুনে তাঁর স্ত্রী নীতু তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যাতে কোন রকম বেচাল কিছু না হয় বলে।

খুল্লাম খুল্লা অভিনয় ও বিতর্কিত বক্তব্য নিয়ে এক অন্য ধরনের তারকা হিসাবে চিহ্নিত ছিলেন এই অভিনেতা। সেই পরিচয় নিয়েই এবার বিদায় নিয়ে পৃথিবীর মঞ্চ থেকে।