করোনা আবহেও জারি রাজ্যপাল-মুখ্যমন্ত্রী দ্বন্দ্ব, যা নিয়ে সংবিধানে বক্তব্য কি

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা মোকাবিলা করতে গিয়েও রাজ্য সরকার ও রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান অর্থাৎ রাজ্যপালের মধ্যেই যুদ্ধ লেগেই রয়েছে। হ্যাঁ, পত্রযুদ্ধ! এই রকম ভয়ঙ্কর আবহে এই যুদ্ধ কিন্তু মোটেই কাম্য নয়। তবুও এমনটা ঘটছে বারংবার। এই বিষয়টি রাজ্যের মানুষকে অস্বস্তিতে ফেলেছে।

করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিরোধী দলগুলির ও রাজ্যপালের অনেক প্রশ্ন ছিলো। রাজ্যপাল ২২শে এপ্রিল সকালবেলা মুখ্যমন্ত্রীকে একটি কড়া চিঠি করেন, এতে ছিল নানা রকম প্রশ্ন। এরপর ২৩ এপ্রিল বিকেলে সেই চিঠির উত্তর দেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্যপালের দেওয়া চিঠি ও প্রত্যুত্তরে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া চিঠি এবং তারপর রাজ্যপালের পাঠানো চিঠি সবেরই উল্লেখ ছিলো ঐ চিঠিতে। মুখ্যমন্ত্রী যে পাঁচ পাতার চিঠি লেখেন সেই চিঠিতে রাজ্যপালের সাংবিধানিক অবস্থান উল্লেখ করেন এবং এরপরই রাজ্যপালের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। আশ্চর্যজনক ভাবে
মুখ্যমন্ত্রীর সেই পাঁচ পাতার চিঠি পেয়ে অল্প সময়ের ব্যবধানে রাজ্যপাল আরেকটি চিঠি লেখেন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে। এই চিঠিটিও ছিলো পাঁচ পাতার। এই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর সাংবিধানিক দায়িত্ব ও তা পালন না করার অভিযোগ তোলেন রাজ্যপাল। এরপর তিনি চিঠির বিস্তারিত পরবর্তী অংশ জনসমক্ষে আনার কথাও বলেন।

২৪ এপ্রিল জগদীপ ধনখড় ১৪ পৃষ্ঠার একটি চিঠি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠান। সেই চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী সাংবিধানিক এক্তিয়ারের কথা উল্লেখ করেন ও নানা অভিযোগে বিদ্ধ করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। এমনকি ‌২৩ এপ্রিল মুখ্যমন্ত্রীর ঐ চিঠিও যে করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থ মুখ্যমন্ত্রীর জণগণের নজর ঘোরানোর সচেতন প্রচেষ্টা তাও ঐ চিঠিতে উল্লেখ ছিল। রাজ্যপালের থেকে এই দ্বিতীয় চিঠি পেয়েও মুখ্যমন্ত্রী এখন চুপ।মুখ্যমন্ত্রীর এই নীরবতা সত্যি অর্থবহ! এই নীরবতা কি সংযমের লক্ষণ? নাকি ঝড়ের আগে শান্ত পরিবেশ বোঝা কঠিন!

রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে গত দুই দিনে মোট তিনটে চিঠি আদান-প্রদান হয়। এটি নিঃসন্দেহে একটি পত্রযুদ্ধ। এই চিঠিতে দেখা যাচ্ছে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংবিধানের একটি অংশকে সামনে রেখে রাজ্যপালের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন আবার রাজ্যপাল সংবিধানের আর একটি অংশকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে চিঠির পাঠিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিতে ১৬৩ অনুচ্ছেদের উপরে জোর দেন আর রাজ্যপাল ১৬৭ অনুচ্ছেদের উপর। এই দুটি অংশই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংসদীয় ব্যবস্থা পূর্ণতা পায় ঐ দুইটি অনুচ্ছেদের সুষম প্রয়োগের উপরই। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদই রাজ্যের মধ্যে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী এ কথা যেমন সাংবিধানিক।ঠিক তেমনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান অর্থাৎ রাজ্যপালকে সরকার তার যাবতীয় কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত করবে এইরকম সাংবিধানিক দায়িত্ব মখ্যমন্ত্রীর উপর রয়েছে। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের দুটি স্তম্ভ। একজন মানুষ যদি একটি অনুচ্ছেদকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেন এবং অপর অনুচ্ছেদটি এড়িয়ে চলেন তবে এটি অবশ্যই সংবিধান বিরুদ্ধ।