একনজরে কলকাতা যে সমস্ত জায়গাগুলিকে সিল করা হলো

Madhab Das

Published on:

নিজস্ব প্রতিবেদন : প্রথম দফাতে রেড জোনগুলিকে চিহ্নিত করা না গেলেও লকডাউনের দ্বিতীয় দফায় কলকাতা শহরের কতগুলি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই সমস্ত এলাকাগুলি সরকারের নির্দেশে সিল করে দেওয়া হয়েছে। এই সমস্ত এলাকার থেকে কাউকে বেরোনো ও সেই সমস্ত এলাকায় কারোর প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোন কোন এলাকাগুলি রেড জন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে চলুন দেখে নেওয়া যাক।

কলকাতার যে পাড়াগুলি সিল করা হয়েছে সেগুলি হলো

১) উত্তর কলকাতায়- কাশীপুর, বেলগাছিয়া,
বরাহনগর পৌরসভার ১০ ও ২৮ নং ওয়ার্ড,
দক্ষিণ দমদম পৌরসভার কয়েকটি এলাকা।

২) মধ্য কলকাতায়- কলুতোলা, মেছুয়া,
জোঁড়াসাঁকো ও লাগোয়া বৌবাজার এলাকা, আমহার্স্ট স্ট্রিট ও এপিসি রোডের মধ্যবর্তী অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, মুক্তারাম বাবুর স্ট্রিট, নারকেল ডাঙা মেন রোডের দু পাশের অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অতি স্পর্শকাতর নারকেলডাঙ্গা নর্থ রোড – গোটা এলাকাটি মূলত রাজাবাজার এলাকা হিসেবে পরিচিত। কলিন্স স্ট্রিট, রিপন স্ট্রিট, ম্যাকলয়েড স্ট্রিটের মত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে বেনিয়াপুকুর এবং কড়েয়ার সংযোগকারী অংশ। আহিরী পুকুর ফাস্ট লেন, হাতি বাগান রোড, গিরিশ পার্ক, মানিকতলা, শ্যামপুকুর স্ট্রীট, তালতলা, মুচিপাড়ার বেশ কিছু এলাকা।

৩) পূর্ব কলকাতা- এন্টালী থানা এলাকার সঙ্গে ট্যাংরা এবং বেনিয়াপুকুর এলাকার সংযোগস্থল, তপশিয়া রোড এলাকার কয়েকটি এবং তিলজলা রোডের তিনটি জায়গা। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট, ডক্টরসলেন, বেলেঘাটা এবং রিপন স্ট্রিটের কয়েকটি এলাকা।

৪) দক্ষিণ কলকাতা- গড়চা, কাকুলিয়া রোডের অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, সংলগ্ন গড়িয়াহাটের কয়েকটি জায়গা এবং পন্ডিতিয়া রোড, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড এবং সংলগ্ন প্রিন্স গোলাম মহঃ শাহ রোডের কয়েকটি জায়গা, আলিপুর, চেতলা, মেটিয়াবুরুজ, নয়াবাদ, মুদি আলী, ভবানীপুর, নিউ আলিপুরের বেশ কিছু এলাকা।

৫) বন্দর – ওয়াটগঞ্জ, দক্ষিণ বন্দর এলাকা হয়ে গার্ডেনরিচ এবং মেটিয়াবুরুজের অতি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা।

৬) দক্ষিণ পশ্চিম কলকাতা- ঢালীপাড়া, কবর ডাঙ্গার কয়েকটি ছোট এলাকা, বেহালা ও পর্ণশ্রীর কয়েকটি জায়গা, কলকাতার পার্শ্ববর্তী মহেশতলার কয়েকটি ছোট এলাকা।

রেড জোন গুলিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?

১) এই সকল এলাকাগুলি থেকে যাতে কেউ বেরোতে না পারে এবং এই এলাকাগুলিতে যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে সেই কারণে পুলিশ ওই এলাকাগুলিতে ব্যারিকেড করে দিয়েছে।

২) উত্তর কলকাতা বেলগাছিয়া বস্তি সংলগ্ন এলাকা পুলিশ ব্যারিকেড করে দিয়েছে।

৩) রাজাবাজার, গার্ডেনরিচ নারকেলডাঙ্গা মেটিয়াবুরুজ এই সকল এলাকাগুলিতে পুলিশ টহলদারি দেওয়া শুরু করেছে।

৪) গার্ডরেল দিয়ে কলকাতা শহরের বিভিন্ন রাস্তা আটকে দেওয়া হয়েছে।

৫) করোনা সংক্রামিত কোনো ব্যক্তির খোঁজ পেলে সেই ওয়ার্ডটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে না করে সংক্রামিতকারীর বাড়ি রাস্তা ও সংযোগকারী গলিটি আটকে দেওয়া হচ্ছে।

৬) প্রতি বর পিছু পৌরসভা একজন করে নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছে।

৭) এই নোডাল অফিসাররা স্বাস্থ্য দপ্তরে সঙ্গে যাবতীয় পরিস্থিতির খোঁজখবর নিচ্ছেন।

৮) যে অঞ্চলগুলি ঘনবসতিপূর্ণ সেই অঞ্চলে কারোর প্রবেশ এবং প্রস্থানকে বন্ধ করার চেষ্টা চলছে।

৯) একাধিক জায়গায় পুলিশের চেকিং বাড়ানো হয়েছে।

১০) যে সমস্ত এলাকা খুবই ঘিঞ্জি সেই সমস্ত এলাকাতে বাজার বসতে দেওয়া হচ্ছে না। তার পরিবর্তে যে এলাকাগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে চওড়া রাস্তা আছে সেখানে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য বাজার খুলতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

১১) বাজারে যারা বাজার করতে আসছেন সেই সকল মানুষ মাস্ক পড়ছেন কিনা এবং একে অপরের সাথে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন কিনা সে বিষয়ে নজর রাখার জন্য পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

১২) বাজারগুলিতে বিক্রেতাদেরকে নির্দিষ্ট সমান দূরত্বে বসানো হচ্ছে।

১৩) যে বাড়িতে করোনা সংক্রামিতের সন্ধান মিলছে সেই বাড়িকে জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

১৪) প্রতিটি সংক্রামিত এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করছেন।

১৫) অতি ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে কেউ সংক্রামিত হচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

১৬) কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডের উপর নজর রাখছে সেখানে নতুন করে কেউ আক্রান্ত হলেন কিনা।

১৭) স্পর্শকাতর এলাকাগুলির গুরুত্ব বুঝে সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং সেখানকার রাস্তাগুলিকেও দু-তিন দিনের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে।

১৮) এই অবস্থায় পুলিশের অনুমতি ছাড়া সেখানকার কোন মানুষ বাইরে বের হতে পারবেন না।

১৯) কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা নিজে পুলিশ বাহিনী নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় টহল দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

২০) স্পর্শকাতর এলাকাগুলি বন্ধ করে দেওয়ার পর যদি সেখানকার কোন বাসিন্দার কোনরকম প্রয়োজন হয় এবং তারা যদি কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হন সেক্ষেত্রে পুলিশ আধিকারিকরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।

২১) ওসিদের রাতে থানায় থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

২২) পরিস্থিতি অনুযায়ী থানাগুলিতে ডিসিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতে বলা হয়েছে।

কলকাতার অবস্থা ধীরে ধীরে সঙ্গীন হয়ে উঠছে প্রথম দফায় যা হয়নি দ্বিতীয় দফার লকডাউন আসতে আসতে সেখানে সংক্রামিতদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। তাই এই সমস্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশ প্রশাসন ও রাজ্য সরকার উভয়ে মিলে চেষ্টা করছে এই পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার। কিন্তু
পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে এটি বোঝাই যাচ্ছে যে লকডাউনকে কঠোরভাবে না মানলে আমাদের অবস্থা দিনকে দিন আরও খারাপ হতে চলেছে তাই দয়া করে লোকজনকে হেলাফেলা করবেন না ঘরে থাকুন। সুস্থ থাকুন।