নিজস্ব প্রতিবেদন : বর্তমান করোনা অতিমারির থেকে রেহাই পেতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ তাকিয়ে রয়েছেন টিকার দিকে। তবে এমত অবস্থায় রাশিয়া প্রথম টিকা আনার কথা প্রকাশ করলেও সেই টিকা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে রাশিয়ার এই টিকা কেবলমাত্র ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত ব্যক্তিদের জন্য। কারণ বাকিদের ক্ষেত্রে এই টিকা নাকি ট্রায়াল করা হয়নি। তবে এ সকল নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও রাশিয়া তাদের টিকার সুরক্ষা নিয়ে বিশ্ববাসীকে নিশ্চয়তা দিয়েছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে তৈরি প্রথম টিকা Covaxin বর্তমানে ট্রায়ালে রয়েছে। আর এই ট্রায়ালের ফলাফল অভূতপূর্ব বলে জানা গিয়েছে চিকিৎসক মহল সূত্রে।
ICMR এবং ভারত বায়োটেক-এর যৌথ উদ্দ্যোগে ভারতের তৈরি এই করোনা টিকা আসতে বাজারে চলেছে সমস্ত পর্বের ট্রায়াল শেষ হবার পরই। ইতিমধ্যেই পাটনা, দিল্লি সহ দেশের ১২টি স্থানে ট্রায়াল প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। গত ২২শে জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভুবনেশ্বরেও ট্রায়ালের জন্য সেচ্ছাসেবকদের স্ক্রিনিং শুরু হয়েছে এবং গত ২৭শে জুলাই কোভ্যাকসিনের প্রথম পর্বের ঝুঁকিপূর্ণ ট্রায়াল মানবশরীরে প্রয়োগের কাজও শুরু হয়। আর সেই ট্রায়ালে ডাক পেয়ে পশ্চিমবঙ্গের নিকটবর্তী ICMR অনুমোদিত ট্রায়াল সেন্টার ওড়িশার ভুবনেশ্বরের ‘The IMS’ ও ‘SUM’ হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে দুর্গাপুরের শিক্ষক চিরঞ্জিত ধীবর রওনা দেন গত ২৪শে জুলাই। ট্রায়ালের জন্য তিনি উপযুক্ত কি না নিশ্চিত হতে ডায়াবিটিস, হাইপার টেনশন, হার্টের সমস্যা, কিডনি এবং লিভারের রোগ-সহ প্রায় ৫০ ধরনের টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট সবকিছু ঠিক থাকাই গত ২৯ শে জুলাই চিরঞ্জিত বাবুর শরীরে প্রয়োগ করা হয় ওই কোভিড ভ্যাকসিন। এরপর প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ডোজও গত ১২ই আগস্ট বুধবার চিরঞ্জিত বাবুর শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে তিনি আপাতত স্থিতিশীল আছেন।
ভুবনেশ্বরের ওই হাসপাতালে এই টিকার ট্রায়ালে অংশগ্রহনকারী সেচ্ছাসেবকদের রাখা হয়েছে পর্যবেক্ষণে। তবে ট্রায়ালের সমস্ত প্রক্রিয়া গোপন রাখা হচ্ছে। এমনকি সেচ্ছাসেবকদের মোবাইল ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
প্রথম পর্বে দেশের মোট ৩৭৫ জন সেচ্ছাসেবকের উপর ট্রায়াল প্রক্রিয়া চালানোর জন্য ICMR-এর মাধ্যমে প্রায় ১২টি সংস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ট্রায়ালের স্থান হিসেবে। তার মধ্যে অন্যতম ভুবনেশ্বরের এই ‘The IMS’ ও ‘SUM’ হাসপাতাল। আর এই সেন্টার থেকে পর্যবেক্ষক ডঃ ভেঙ্কট রাও কোভিড ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য আসার অনুমতি দিয়েছিল দুর্গাপুরের শিক্ষক চিরঞ্জিতকে। গত এপ্রিল মাসে ICMR-কে মেল করে দুর্গাপুরের স্কুলশিক্ষক ও সমাজসেবী চিরঞ্জিত ধীবর নিজের দেহ উৎসর্গ করেন কোভিড ভ্যাকসিন ট্রায়ালের জন্য। প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকা সত্ত্বেও তিনি পশ্চিমবঙ্গের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আবেদন জানিয়েছিলেন ICMR কে। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে চিরঞ্জিত বাবুর সাথে যোগাযোগ করা হয় ICMR-এর তরফ থেকে। চিরঞ্জিত বাবুকে মানসিক ভাবে তৈরি থাকতে বলা হয়।
ওই হাসপাতালের ডঃ ভেঙ্কট রাও জানিয়েছেন, “সমস্ত প্রোটোকল মেনে গত সপ্তাহে ভুবনেশ্বরের ‘The IMS’ ও ‘SUM’ হাসপাতালে সমস্ত আগ্রহী স্বাস্থ্যবান স্বেচ্ছাসেবকদের শরীরে ট্রায়াল আরম্ভ হয়েছে। তাদের প্রত্যেকেই সুস্থ আছে এবং এখনও পর্যন্ত কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাইনি। পুরো প্রক্রিয়াটির গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে প্রোটোকল মেনেই। যাদের উপর প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হয়েছে তাদের কারোর নাম প্রকাশ করা হবে না। কিছু জনের উপর প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষা হবে। প্রথম ধাপে ট্রায়ালের প্রথম দিনে ০.৫ মিলি ডোজ দেওয়ার ১৪ দিনের মাথায় দ্বিতীয় ডোজ ০.৫ মিলি ইনজেক্ট করা হয়েছে সেচ্ছাসেবকদের শরীরে। মূল প্রক্রিয়া শেষ হতে ১ মাস এবং পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে প্রায় ৭ মাস লাগবে। প্রথম ১ মাস হাসপাতালেই পর্যবেক্ষণে রাখার পর শুধু ট্রায়ালের ১০৪ তম দিনে ও ১৯৪ দিনের মাথায় রিপোর্টিং করতে হবে সেচ্ছাসেবকদের।”
আর এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারী চিরঞ্জিত ধীবর দুর্গাপুরের ‘এ’ জোন টাউনশিপ নিবাসী। পেশায় স্কুল শিক্ষক চিরঞ্জিত ধীবর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন স্বয়ংসেবক। আগেই জানিয়েছেন যে তিনি সংঘের অনুপ্রেরণায় সমগ্র মানব কল্যাণের জন্য এ মহান কাজে ব্রতী হয়েছেন।দেশের জন্য জীবনকে বাজি রাখতেও প্রস্তুত সে। সেবামূলক কাজে তিনি বরাবরই অগ্রণী ভূমিকা নেন। আপামর জনতা স্বয়ংসেবক চিরঞ্জিত বাবুকে তার আত্মত্যাগের জন্য কুর্নিশ জানাচ্ছেন ও সাফল্য কামনা করছেন।