বুকে ক্ষত নিয়ে রাস্তার গর্ত দেখলেই বুজিয়ে দেন ইনি

নিজস্ব প্রতিবেদন : শোক এমনই একটা জিনিস যা প্রতিটি মানুষকেই কমবেশি পরিবর্তন করে দেয়। এই পরিবর্তনের প্রভাবটাও আবার ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন। শোক পেয়ে কেউ খারাপ পথ বেছে নেন, কেউ ভালো কিছু করার চেষ্টা করেন। সবটাই নির্ভর করে আমরা কোন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আমাদের জীবনে আসা অনভিপ্রেত শোককে গ্রহণ করছি তার উপরে।ঠিক যেমন পুত্র শোক বুকে চেপে দাদারাও এক ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

২০১৫ সালে নিজের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে ফেলেন দাদারাও। রাস্তায় থাকা গর্তের কারণেই সেদিন দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল তার ১৬ বছরের ছেলে। ছেলে হারানোর শোককে অনুভব করে দাদারাও সেদিন প্রকৃত জনকের মতই চেয়েছিলেন যে, পৃথিবীতে আর কোন সন্তানের যেন এরকম পরিণতি না হয়। শুধু চেয়েই ক্ষান্ত হননি তিনি, কোনো বাবা-মা যাতে তাদের মতই সন্তানকে না হারান তার জন্য তিনি নিরলস প্রচেষ্টা করে গেছেন। হ্যাঁ, এরপর থেকে তিনি সম্পূর্ণ নিজের উদ্যোগে সিমেন্ট, বালি কিনে রাস্তায় থাকা গর্তকে মেরামত করে দেন।

মুম্বাইয়ের বহু রাস্তার গর্ত তিনি এভাবেই মেরামত করেছেন দিনের পর দিন। তার এই মহৎ কাজের প্রচারের আগেও বহু মানুষ করেছেন। সম্প্রতি ভারতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার ভিভিএস লক্ষ্মণ আরও একবার দাদারাওয়ের রাস্তা মেরামতের ছবি ট্যুইট করেন।

লক্ষণ এদিন দাদারাও ছবি পোস্ট করার পাশাপাশি এই মহৎ উদ্যোগের জন্য দাদারাও এর প্রশংসাও করেছেন। তিনি লিখেছেন, “ইনি নিজে একমাত্র ছেলেকে পথদুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেন। পুত্রশোকে তিনি একসময় ভেঙে পড়েছিলেন। সেই শোক সামলে তিনি এই মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দিনের পর দিন ধরে তিনি নিজের পয়সায় সিমেন্ট, বালি, সুরকি কিনে মুম্বাইয়ের রাস্তার গর্ত বুজিয়ে দেন। তার এই সাধু উদ্যোগের প্রশংসা করার জন্য কোন ধন্যবাদজ্ঞাপক শব্দই যথেষ্ট নয়।”

সত্যি দাদারাও এর মত ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ যারা সমাজকে বাণী দিয়ে নয়, আচরণের মধ্যে দিয়ে শেখান, তাদের জন্য কোনো ধন্যবাদই যথেষ্ট নয়। শোক মানুষকে পাথর করে, শোক অনেক সময় মানুষের মধ্যে ঈর্ষার জন্ম দেয়, তৈরি করে অবসাদ। আবার শোক কখনো শুভ্র সাদা হয়ে মানুষকে দেবত্বে উন্নীত করে। সবটাই নির্ভর করছে আমাদের সাথে হওয়া অনাহুত শোকগুলিকে আমরা কীভাবে গ্রহণ করছি তার ওপর। দৃষ্টিভঙ্গি বদলালেই আমরা নিজেদের বদলাতে পারবো, আর সেই সাথে বদলাতে পারবো নিজেদের ভবিষ্যৎও। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সেই সাথে নেতিবাচক মনোভাব ঝেড়ে ফেলে সবকিছুকে ইতিবাচক ভাবে গ্রহণ করুন।