Even if you don’t know how to swim in this ocean, you won’t drown: সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪২০ মিটার গভীরে অবস্থিত বিশ্বের নিম্নতম স্থলভূমি, যা পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লবণাক্ত জলের প্রাকৃতিক আধার। এটি আসলে মৃত সাগর (Dead Sea) নামেই খ্যাত। এই সাগরটি জর্ডন নদীর একটি শাখা হ্রদ। হিব্রু ভাষায় যাকে বলে ইয়ম হা-মাভেত, যার মানে হলো মৃত সাগর। এই সাগরের জল সমুদ্রের জলের চেয়ে ৮.৬ গুণ বেশি লবণাক্ত।
অনেকেই হয়তো জানেন না যে ইসলামিক বিশ্বাস অনুসারে, এই মৃত সাগরটি (Dead Sea) লুত নবীর দাওয়াত অস্বীকার করেছিল এবং সমকামিতা পাপের জন্য জিবরায়েল ফেরেশতা এর আশেপাশের এলাকার মাটিতে প্রবেশ করে যায়। তারপর পুরো এলাকাটি শূন্যে তুলে ধরে উপরকে নীচে এবং নীচকে উপরে তুলে সজোরে ফেলে দেন। সেই কারণেই সৃষ্টি হয়েছে এই মৃত সাগর। বাইবেলের মতে, মৃত সাগর হল সমুদ্রের রাজা ডেভিডের আশ্রয়স্থল।
এই মৃত সাগরের (Dead Sea) উৎপত্তি হয়েছিল প্রায় ২০ লক্ষ বছর আগে। কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে এই সাগরের? আনুমানিক তিরিশ লক্ষ বছর আগে জর্দান নদী, মৃত সাগর এবং ওয়াদি আরাবাহ অঞ্চল লোহিত সাগরের জলে বারবার প্লাবিত হত। ফলে সৃষ্টি হয়েছিল একটি সংকীর্ণ উপসাগর। এই সংকীর্ণ উপসাগরটি জেজরিল উপত্যকায় একটি সংকীর্ণ সংযোগের মাধ্যমে লোহিত সাগরের সঙ্গে মিলিত হয়। প্রাকৃতিক মতে, পূর্ব উপত্যকা এবং ভূমধ্যসাগরের মধ্যবর্তী স্থলভাগ যথেষ্ট উচ্চতা লাভ করে। ফলে মহাসাগরের প্লাবনে এই অঞ্চলে সৃষ্ট হয় এই হ্রদের।
আশ্চর্য বিষয় হলো এই মৃত সাগরের (Dead Sea) জায়গাটি তৈরি হয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে। কারণ মৃত সাগরের কাদা বহু রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। সবথেকে বড় কারণ হলো হ্রদের জলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ দ্রব্যাদি এবং বাতাসে রয়েছে এলার্জি উৎপাদক পদার্থ, পরাগরেণু, উচ্চ ভূ-মণ্ডলীয় চাপ, সৌর বিকিরণে অতি বেগুনি উপাদানের কম উপস্থিতি। শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের জন্য খুবই কাজে আসে। এই অঞ্চলে রয়েছে অতি বেগুনি রশ্মির স্বল্পতা সেই কারণে সান বাথ নেওয়ার জন্য অনেকেই এখানে আসেন। সোরিয়াসিস চর্মরোগ এর জন্য অনেকক্ষণ ধরে সানবাথ করা উপকারী।
এই মৃত সাগরের জলে থাকে লবণ এবং সেই লবণে থাকে ১৪% ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ৪% পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ৫০% ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড এবং ৩০% সোডিয়াম ক্লোরাইড। মৃত সাগরের লবণাক্ততা শতকরা ৩০%। ফলে জলের ঘনত্ব ১.২৪ কিলোগ্রাম/লিটার। জলে ভেসে থাকার মূল কারণ হলো উচ্চ প্লবতা। এই মৃত সাগরকে যতই অশুভ মনে করা হোক কিন্তু পর্যটকদের কাছে এটি বিশেষ আকর্ষণ। শুধুমাত্র এই মৃত সাগরের জলে ভেসে থাকবে বলেই অ্যাডভেঞ্চার প্রেমী পর্যটকরা এখানে হানা দেয়। মনে করা হয় এখানকার জলে স্নান করলে নানা রকমের রোগ মুক্তি ঘটে। কিন্তু অতিরিক্ত লবণ হার্ট এবং কিডনির পক্ষে যথেষ্ট ক্ষতিকর।