CAA আর NRC দুয়ের পার্থক্য? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা

Shyamali Das

Updated on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : সিএএ বা সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট এবং এনআরসিকে কেন্দ্র করে সারা দেশ, বিশেষ করে উত্তর পূর্ব ভারত এবং পশ্চিমবঙ্গে যে বিপুল জনরোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের একটু বিশদে জানা উচিত।

Advertisements

Advertisements

CAA অনুযায়ী পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘু (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টান, পারসি এবং শিখ) মানুষেরা ৩১ শে ডিসেম্বর ২০১৪ র আগে ভারতে এসে থাকলে তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারেন সহজেই। এখানে যেহেতু মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম নেই তাই দিনের পর দিন ক্ষোভ বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Advertisements

কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই তিন দেশের মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষেরা কি ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারেন না? অবশ্যই পারেন। তার জন্য ইন্ডিয়ান সিটাইজনশিপ অ্যাক্ট ১৯৫৫ বলবৎ রয়েছে, যার মাধ্যমে পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের নাগরিকরাও ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।

অন্যদিকে NRC বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জী একটি সম্পূর্ণ আসাম কেন্দ্রিক বিষয় যেখানে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অনুসারে ২৪ শে মার্চ ১৯৭১’র আগে ভারতে আসা যেকোন বাংলাদেশি মানুষই ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন। এক্ষেত্রে তার ধর্মীয় পরিচয় বিবেচ্য নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভারতবর্ষের মত ধর্মনিরপেক্ষ দেশে, যেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় সংবিধানের স্তম্ভ বলা যেতে পারে, সেখানে সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট কিছু বিশেষ ধর্মাবলম্বী মানুষকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় তা ভারতীয় সংবিধান বিরোধী বলে মনে করছেন বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী তথা সচেতন নাগরিক সমাজের একাংশ।

কিন্তু আসাম, মনিপুর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতে যে জনরোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার কারণ কিন্তু একটু আলাদা।বিগত কয়েক দশক ধরেই আসামের ভূমি পুত্ররা অভিযোগ করছেন, যে বাংলাদেশ থেকে আগত বাংলাভাষী অনুপ্রবেশকারী জনসংখ্যার চাপে তাদের নিজস্ব জীবন-জীবিকা তথা সংস্কৃতি কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তাদের কয়েক দশক ধরে করে আসা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ভারতীয় নাগরিক পঞ্জি বা NRC লাগু হয়, যার মাধ্যমে প্রায় ১৯ লাখ মানুষ অবৈধ নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত হন। এখন সেই অবৈধ নাগরিকদের মধ্যে মুসলমান বাদ দিয়ে বাকি সবাই বর্তমান সিটিজেনশিপ আমেন্ডমেন্ট অ্যাক্টের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে পারেন। তাই অসমীয়ারা মনে করছেন যে NRC এবং CAA পরস্পর বিরোধী এবং এটি তাদের দীর্ঘদিনের দাবিকে নস্যাৎ করছে।

অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সমাজের একাংশ যেভাবে রাস্তায় নেমে বিরোধিতা করছেন, তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার যে তারা হয় ভুল বুঝছেন বা তাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। যারা ভারতীয় নাগরিক, তা সে হিন্দুই হন আর মুসলমানই হন, কোনোভাবেই এই নতুন আইন তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে পারে না। কিন্তু অদ্ভুতভাবে বাঙ্গালী মুসলিম সমাজের একাংশ ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তা বা অনিশ্চয়তার শিকার হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Advertisements