This time, disease-resistant Black Rice will be cultivated in West Bengal: ভাত আদৌ কি শরীরের পক্ষে ভালো? জানলে আশ্চর্য হবেন যে এক বিশেষ ধরনের চালের ভাত যদি নিয়মিত খান তাহলে শরীরের ক্ষয় খুব সহজেই রোধ করা সম্ভব। আপনাকে খেতে হবেনা কোনো কড়া কড়া ওষুধ। গবেষকরা বলেছেন যে, উন্নত ধরনের কালো চালের(Black Rice) চাষ চলছে উত্তর দিনাজপুরে। কিভাবে তৈরি করা হয়েছে এই চাল? জংলি ধান ‘রুফি পগোন’-এর সঙ্গে দেশজ বাতসাভোগ এবং চেঙ্গা ধানের আন্তঃপ্রজাতির সংকরায়ণ ঘটিয়ে নতুন মডেলের কালো চালের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে যা অদূর ভবিষ্যতে কৃষিবিজ্ঞানের উন্নতি সাধন করবে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ডিন তথা উদ্ভিদবিদ্যার (Botany) অধ্যাপক সুভাষচন্দ্র রায় এক অভাবনীয় পদক্ষেপ পার করেছেন এই বিষয়ে।
আসুন জেনে নিই বিস্তারিতভাবে, উত্তরবঙ্গের এই গবেষক কালিয়াগঞ্জের সীমান্তবর্তী ধনকৈল্য পঞ্চায়েতের উত্তর কাচনা গ্রামের নিজের পৈতৃক কৃষি জমিতে প্রায় ৯ বছর ধরে এই সংকরায়ণ ধান চাষ করে নতুন কালো ধান আবিষ্কারের জন্য নানা ধরনের পরীক্ষা করেছেন। জুন-জুলাই মাসে বর্ষার মরশুমে যখন আমন ধানের নবম প্রজন্ম পর্যন্ত উৎপাদিত কালো চালে (Black Rice) বিভিন্ন ধরনের জিনগত বৈশিষ্ট্যগুলি দেখা গেছে যা চমকপ্রদ সাফল্য এনেছে। এই আবিষ্কার করা হয়েছে মাত্র বিঘা তিনেক জমিতে। ১৩০ থেকে ১৪০ দিনের মধ্যে গাছে ফলন আসে। এক একটা ধানের শিসে ২০০ থেকে ৩০০টি করে ধানের দানা। সেখানে জেলার নিজস্ব তুলাইপাঞ্জি ধানের এক একটা শিসে সর্বোচ্চ ৯০ থেকে ১০০ ধানের দানা মেলে। এই নয়া কালো চাল তৈরির আবিষ্কারের অভূতপূর্ব স্বীকৃতি এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
আন্তঃপ্রজাতির নবম প্রজন্মের উৎপাদিত কালো ধানের খোসা ছাড়ালেই দেখতে পাবেন লালচে এবং সাদা, বাদামি রং-সহ বিভিন্ন ধরনের চাল। গবেষক প্রকাশ্যে তুলে ধরেছে এই নজিরবিহীন সাফল্য। উত্তর দিনাজপুরের জমিতে ফলানো নতুন মডেলের কালো ধান ইতিমধ্যে মুম্বই আইআইটির (Mumbai IIT) কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে পাওয়া গেছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট-সহ বিভিন্ন ভিটামিন, সেইসঙ্গে পাওয়া গেছে অ্যান্টি ক্যানসারের বিভিন্ন উপকরণ। পাশাপাশ প্রতিরোধ হবে হৃদরোগ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ-সহ শরীর চাঙ্গা রাখার যাবতীয় উপকরণ রয়েছে এই নতুন ধানে। যারা ড্রাগের নেশায় আসক্ত তাদের এতদিনকার প্রাত্যহিক জীবনযাত্রা বদলে নতুন জীবন দেবে এই আবিষ্কার।
গবেষক সুভাষচন্দ্র রায় নতুন ধান ফলানোর প্রাথমিক স্বীকৃতি হিসাবে ‘ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচার সায়েন্স’ আয়োজিত নভেম্বরে বেঙ্গালুরুতে ২০ তম আন্তর্জাতিক আলোচনা সভায় ‘জংলি ধানের সঙ্গে আঞ্চলিক ধানের সংকরায়ণে নতুন মডেলের কালো ধান তৈরি’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তৃতায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ওরাইজা রুফি পগোন জংলি ধানের সঙ্গে স্থানীয় ধানের ক্রস করে নাইন জেনারেশনের কালো ধান তৈরি করা এখনো পর্যন্ত পৃথিবীতে কোনও বৈজ্ঞানিক করে দেখাতে পারেননি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জের জংলী ধান ‘রুফি পগোন’ থেকেই মূলত বিশ্বের কালো ধানের (Black Rice) উৎপত্তি হয়েছে।
দিল্লিতে ‘প্রোটেকশন প্ল্যান্ট ভ্যারাইটিজ এন্ড ফার্মাস অ্যাক্ট ২০০১’-এর অনুযায়ী এই নতুন ধরনের ধানগুলি প্ল্যান্ট ভাইটিজ রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্ল্যান্ট অথরিটির কাছে জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া এই অভাবনীয় আবিষ্কার জাতীয় জিন ব্যাঙ্কে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। কি বলেছেন উদ্ভিদবিদ দিলীপ দে সরকার? ধান গবেষণায় যুগান্তকারী সৃষ্টি হয়েছে। পুষ্টিকর ধানের কালো চাল (Black Rice) সাধারণ মানুষজনের খাবারের পাতে যদি নিয়মিত পড়ে তাহলে রোগ নিরাময় হতে বাধ্য। জেলা কৃষি অধিকর্তা সফিকুল ইসলাম বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই গবেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। প্রয়োজনে সরকারি ফার্মে ওই বিশেষ ধান ফলানোর চেষ্টা করতে হবে। রায়গঞ্জ শহরের অদূরে কাশীবাটি এলাকার জলাভূমি জুড়ে জংলি ধান রুফি পগোন দেখা যেত। কিন্তু সেগুলোকে কোনোভাবে সংরক্ষণ করার উদ্যোগ দেখানো হয়নি।