নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতের মতো দেড়শ কোটির দেশে প্রতিদিন ৫০ লক্ষের বেশি মানুষ ট্রেনের উপর নির্ভরশীল। তারা প্রতিদিন এই রেল পরিষেবার ওপর ভর করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করেন। যে কারণে রেল পরিষেবাকে ভারতের লাইফ লাইন বলা হয়ে থাকে। ভারতের এই রেল নেটওয়ার্ক এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক হওয়ার পাশাপাশি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম রেল নেটওয়ার্ক।
তবে প্রতিদিন এই রেল পরিষেবার ওপর নির্ভর করে হাফ কোটির বেশি মানুষ যাতায়াত করলেও অনেকেই রেলের অনেক নিয়ম-কানুন এবং ব্যবস্থা সম্পর্কে জানেন না। না জানাটাই স্বাভাবিক। কারণ ব্যস্ততার মাঝে এই সকল নিয়ম-কানুন এবং ব্যবস্থা সম্পর্কে অতটা নজর দেওয়া সম্ভব হয় না।
ট্রেন চলাচলের ক্ষেত্রে আমরা প্রত্যেকেই জানি একটি ইঞ্জিন গোটা ট্রেন টেনে নিয়ে যায়। অর্থাৎ একটি ইঞ্জিনের নিয়ন্ত্রণে গোটা ট্রেনটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে চলে। এই ট্রেনের ইঞ্জিন চালানোর জন্য থাকেন লোকো পাইলট। এমন পরিস্থিতিতে একবার ভেবে দেখুন তো, যদি ওই ইঞ্জিনের চালক বা লোকো পাইলট ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে কি পরিস্থিতি হতে পারে!
ভাবা তো দূরের কথা এই কথাটি কানে এলে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। কারণ ট্রেনে চালক ঘুমিয়ে পড়লে কত বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং কতশত মানুষের প্রাণ যেতে পারে। আর এই কারণেই যাতে করে ট্রেনের চালক বা লোকো পাইলট তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে না পড়েন তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ভারতীয় রেলের তরফ থেকে।
এই পরিস্থিতির সম্মুখীন যাতে হতে না হয় তার জন্য প্রতিটি ট্রেনের ইঞ্জিন পরিচালনার জন্য একজন চালক থাকার পাশাপাশি তার সঙ্গে থাকেন আর একজন সহকারী চালক। দুজন একসঙ্গে থাকার ফলে যেমন তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ার মতো ঘটনা কম ঘটে, তেমনই আবার চালক তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে সহকারী চালক তাকে জাগিয়ে তোলেন এবং যদি চালকের কোনরকম গুরুতর সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তী স্টেশনে খবর দেওয়া হয় এবং সেখান থেকে নতুন চালকের ব্যবস্থা করা হয়।
তবে এর পাশাপাশি প্রশ্ন জাগতে পারে, যদি চালক এবং সহকারী চালক দুজনেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তাহলে কি হবে? এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুব কম। তবে যদিও এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ভারতীয় রেলের তরফ থেকে ইঞ্জিনে ভিজিল্যান্স কন্ট্রোল ডিভাইস বসানো হয়েছে। এই ডিভাইসে ড্রাইভার যদি এক মিনিটের জন্য কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখান তাহলে ১৭ সেকেন্ডের মধ্যে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল মেসেজ আসে। চালককে বোতাম টিপে সেই মেসেজ গ্রহণ করতে হয়। এখন যদি চালক সেই মেসেজ গ্রহণ না করেন তাহলে ১৭ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রেকিং শুরু হয়ে যায়। ঘটনা ঘটার এক কিলোমিটারের মধ্যে ট্রেনটি থেমে যাবে।