লাল্টু : স্বাধীনতা সংগ্রামের অনেক কাহিনী রয়েছে যেগুলি আজও স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে এবং সেই সকল কাহিনীর শুনলে গায়ের লোম কাঁটা দিয়ে ওঠে। ঠিক সেই রকমই একটি-দুটি কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুর আদালতের সঙ্গে। তখন এই আদালত ছিল মুন্সেফ কোর্ট হিসাবে। সেই পুরো বিষয়টিই তুলে ধরেছেন সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপক পার্থ শঙ্খ মজুমদার।
ব্রিটিশ আমলে দুবরাজপুরের এই মুন্সেফ কোর্টের এলাকা ছিল দেওঘর থেকে কাটিহার পর্যন্ত। সেই সময় ঘোড়ায় চড়ে পেয়াদারা সমন নিয়ে যেতেন। এরপর বিভিন্ন জায়গা থেকে গরুর গাড়ি চড়ে সাধারণ মানুষেরা এখানে আসতেন এবং দু-তিন দিন থেকে তাদের মামলা রুজু করতেন। জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামে বীরভূমের এই দুবরাজপুর আদালতেই প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত। যদিও এই পতাকা উত্তোলনের দিনক্ষণ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে।
প্রচলিত কাহিনী থেকে জানা যায়, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর দুবরাজপুর মুন্সেফ কোর্টে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল। যদিও গোয়েন্দা রিপোর্ট বলছে দুবরাজপুরের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ আগস্ট। তবে এই দুটি দিনই স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে দুবরাজপুরে আলাদা ইতিহাস তৈরি করেছিল। পরপর দুটি ঘটনা কাঁপিয়ে দিয়েছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে।
১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর প্রায় ৫০০ জন স্বাধীনতা সংগ্রামী একটি মিছিল করে প্রথমে দুবরাজপুর থানা এবং পরে দুবরাজপুর আদালতের সামনে আসেন এবং দু’জায়গাতেই বন্দেমাতরম সহ নানা স্লোগান তুলতে থাকেন। তারপর তারা সেখানে অবস্থিত ডাকঘরে ভাঙচুর করেন এবং দুপুর ১টা নাগাদ মুন্সেফ কোর্টে আক্রমণ করেন। সেখানে থাকা নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং বেঞ্চ, চেয়ার ইত্যাদি ফেলে দেওয়া হয় পাশের পুকুরে। এই ঘটনা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল এবং তারা এখানে পাঠিয়েছিলেন মিলিটারি। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য প্রায় ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। যাদের অর্ধেক জনই শাস্তি পেয়েছিলেন।
অন্যদিকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ২৮ আগস্ট সুরেন্দ্রনারায়ণ সেন, শ্রীপতি পাতর সহ অন্যান্যদের নেতৃত্বে এই আদালতে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরপর এই দুটি ঘটনায় নাম জড়িয়ে রয়েছে আর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী হারান খাঙ্গারের। যার নাম এখনো স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে আন্দামান সেলুলার জেলে। এছাড়াও স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে দুবরাজপুরে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়, পতিত চ্যাটার্জী শম্ভুনাথ কবিরাজ প্রমুখরা।