লাল্টু : দুর্গাপুজোর প্রাচীনত্ব এবং ঐতিহ্যের দিক দিয়ে নানান ভেদাভেদ রয়েছে। আর এই সকল প্রাচীনত্বের দিক দিয়ে বনেদি বাড়ির দুর্গোৎসবগুলির রীতিনীতিতে রয়েছে নানান ফারাক। এই সকল ফারাক অর্থাৎ পার্থক্যের দিক দিয়ে বীরভূমের দুবরাজপুরে রয়েছে একটি নিম কাঠের দুর্গা প্রতিমা। প্রতিমার ক্ষেত্রে যেমন ফারাক লক্ষ্য করা যায় এই দুর্গাপুজোয়, তেমনই আবার রীতিনীতির ক্ষেত্রেও রয়েছে আলাদা ঐতিহ্য।
এই দুর্গা পুজোয় মহাষ্টমীতেই সম্পূর্ণ আলাদা এক রীতি। যেখানে মহাষ্টমীর দিন দেবীর ইচ্ছাই ভোগ হয় হলুদ মুড়ি, ৮ রকমের কলাই ভাজা এবং আদা কুচি দিয়ে। এমন আলাদা ধরনের দুর্গাপুজোর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেন বাড়ির বা মুন্সী বাড়ির দুর্গাপুজোয়।
এই পরিবার সূত্রে জানা যায়, “মা দুর্গা অষ্টমীর দিন হলুদ মুড়ি, ৮ রকমের কলাই ভাজা এবং আদাকুচি চেয়ে নিয়েছিলেন। আর তারপর থেকেই মহাঅষ্টমীতে এগুলি দিয়েই ভোগ হয়। আর এগুলি সেদিনই ভাজা অর্থাৎ তৈরি করা হয়। অন্যদিকে এই মুন্সী বাড়ির দুর্গাপুজোয় আরও একটি বিশেষত্ব হলো এখানে কুমারী পুজো হয় অষ্টমঙ্গলায়।
অন্যান্য পুজোর থেকে আলাদা গ্ৰাম বাংলার এই পুজো আনুমানিক ২০০ বছরের প্রাচীন। জানা যায়, ঈশান মুন্সী ওরফে কুচীল চন্দ্র সেন রাজনগরের রাজার মুন্সেফ থাকাকালীন এই পূজোর প্রতিষ্ঠা করেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বপ্নাদেশে ঈশান মুন্সি ওরফে কুচীল চন্দ্র সেন এই পূজো আরম্ভ করেছিলেন। যদিও আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে তিনি প্রথমে রাজি হননি। কিন্তু মায়ের ইচ্ছে ছিল সাধ্যমত তাকেই পূজো করতে হবে। তারপরই ভেদে গুসকরার কোনো এক গ্ৰামে প্রতিষ্ঠিত হয় সেন বাড়ির দুর্গা। পরে ওই গ্রাম থেকে হেতমপুরের সেন বাড়ির পৈতৃক ভিটেই পূজিত হয় মুন্সী বা সেন বাড়ির দুর্গা। প্রথম দিকে পটে আঁকা দুর্গার পূজা হলেও এখন নিম কাঠের তৈরি দুর্গার পূজা হয়।
পূজো চারদিন শুধুমাত্র সেন পরিবারের সদস্যরাই নয়, এই পূজোকে ঘিরে গ্ৰামবাসীদের উদ্দিপনা চোখে পড়ার মতো। তবে এবছর রাশ টেনেছে করোনা। চিন্তিত পরিবারের সকলেই। মায়ের আগমন থেকে বিদায় কিভাবে কাটবে সেই চিন্তাই ভাবিয়ে তুলেছে সেন পরিবারের সদস্যদের।