নিজস্ব প্রতিবেদন : ফকির মাস্টার ওরফে সুজিত চট্যোপাধ্যায়ের পদ্মশ্রী সম্মানিত হওয়ায় খুশি আপামর বাঙালি। প্রতিদিন যেখানে স্কুল, কলেজে গন্ডোগল, সম্মানে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে শিক্ষক শিক্ষাকীদের প্রতি তখন বার্ষিক ১ টাকা বেতনের শিক্ষক ফকির ওরফে সদাই মাস্টারের শিক্ষক হিসাবে পদ্মশ্রী সম্মান উজ্জ্বলতর করেছে শিক্ষক সমাজের মুখ।
স্কুলের ডিগ্ৰি শেষ করার পর শিক্ষকতাকেই পেশা হিসাবে বেছে নেন সুজিত চট্যোপাধ্যায়। লক্ষ্য সন্তানসম ছাত্রছাত্রীদের মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা। দূর করা অশিক্ষার অন্ধকারের। সেই ব্রত শিক্ষক হিসাবে অবসরের পরও থামাননি। ২০০৪ সালে শিক্ষক হিসাবে অবসরের পর স্কুলেরই একটি ঘরে বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতে চেয়েছিলেন। অনুমতি না মেলায় দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের ঘরেই পড়াতে শুরু করেন। বার্ষিক বেতন বছরে ১ টাকা। অচিরেই যা পরিচিতি লাভ করে সদাই ফকিরের পাঠশালা হিসাবে।
সুজিত চট্টোপাধ্যায় বসবাস করেন পূর্ব বর্ধমানের আউস গ্ৰামের উত্তর রামনগর গ্ৰামে। রামনগর জুনিয়র হাইস্কুল থেকে প্রাথমিক পাঠ শেষ করে বোলপুরের বাধগড়া হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিকে কৃতিত্বের সঙ্গে পড়াশোনা শেষ করেন। বর্ধমান রাজ কলেজ থেকে তিন স্নাতক ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্ৰি অর্জন করেন।
তাঁর শিক্ষকতা জীবন শুরু হয় রামনগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। জলপাইগুড়ি থেকে বিটি পাস করেন। তিনি তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিক স্তরে বাংলা, ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস পড়ান। উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে পড়ান বাংলা।
এছাড়া সামাজিক সেবাতেও বাড়িয়ে দিয়েছেন হাত। বছরে একবার করেন থ্যালেসেমিয়া আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জন্য শিবির। এই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তদের জন্যই বছরে ১ টাকা গুরু দক্ষিণা নেওয়া শুরু করেন। তবে সেই রেট এখন বেড়েছে।
কারণ মাস্টারমশাইয়ের বক্তব্য, ‘বাজার আগুন, এখন তাই দক্ষিণা বেড়ে হয়েছে ২ টাকা!’ বছরখানেক আগে থ্যালাসেমিয়াই আক্রান্ত তাঁর এক ছাত্রের জন্য তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বাড়িতে আছেন স্ত্রী মীরা চট্যোপাধ্যায়। ছেলে সরকারি কর্মী, মেয়ে শিক্ষিকা। থাকেন অন্য ভাইদের সঙ্গে যৌথভাবে।
স্ত্রী মীরা চট্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘ছাত্রছাত্রী করেই জীবন কাটল ওর। কী করে সংসার চলে খেয়াল করেননি। ওকে অনেকবার বলেছি বেশি টাকা নেওয়ার। জবাব পেয়েছি, ‘তাহলে শিক্ষক হলাম কিসের।’
পদ্মশ্রী সম্মান পেয়ে খুশি হলেও মাস্টারমশাই সুজিত চট্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, তিনি বিশাল মহৎ কাজ কিছু করেননি। পালন করেছেন শুধুমাত্র শিক্ষকের দায়িত্ব।
তবে সুজিত চট্যোপাধ্যায়ের পদক প্রাপ্তিতে গর্বিত তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রী সমাজ। আনন্দিত শিক্ষিত বাঙালি সমাজ। কারণ এখনো টিকে আছে সদাই ফকিরের মতো পাঠশালা।