দুর্ঘটনায় চিরতরে হারিয়েছেন ছেলেকে, বৌমার বিয়ে দিলেন নজির গড়লেন শ্বশুর

নিজস্ব প্রতিবেদন : বছর সাতেক আগে দুর্গাপুরের বাসিন্দা অজয় শাসমলের বড় ছেলে উত্তমের সাথে বিয়ে হয় মেদিনীপুরের বাসিন্দা দেবশ্রী মাইতির। পেশায় ট্রাকচালক উত্তমের সাথে সংসার বেঁধে সুখেই দিন কাটছিল তাদের। সংসারকে আলো আরও উজ্জ্বল করে আসে এক পুত্রসন্তানও। কিন্তু তার পরেই সবকিছু কোথায় যেন বিগড়ে যায়।

একটি দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে উত্তমের। আঘাতের জেরে মানসিক ভারসাম্য হারায় উত্তম। চলতে থাকে চিকিৎসা। কিন্তু চিকিৎসা চলাকালীন বছর তিনেক আগে মানসিক অবসাদে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় উত্তম।আর তারপর স্বামীর মৃত্যু হলেও শ্বশুর বাড়িতে থাকা শ্বশুর ও শ্বাশুড়িকে একা ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যাওয়ার পথ বেছে নেয় নি দেবশ্রী। বরং তাদের দুজনকে বাবা মায়ের মত পরিচর্যা করতে থাকে। স্বভাবতই কন্যা সন্তান হয়ে ওঠে দেবশ্রী।

কিন্তু কন্যাসম পুত্রবধূর এত অল্প বয়সে এমন পরিনতির কথা মেনে নিতে পারেননি অজয় বাবু। আর তারপরেই পুত্রবধূর নতুন করে বিয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেন ওই শাসমল দম্পতি। তারপর অনুমতি নিতে পুত্রবধূর বাপের বাড়ির সাথে যোগাযোগ করেন তারা। আর এমন অনুমতি চাওয়ার প্রসঙ্গে হতবাক হয়ে যান দেবশ্রীর বাপের বাড়ির লোকজন। প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে অনুমতি দেন। তারপরেই শুরু হয় পাত্রের খোঁজ।

অজয় শাসমলের একসময় বাসের ব্যবসা ছিল। সেই ব্যবসায় একটি বাস চালাতেন সন্তোষ লায়েক নামে এক যুবক। যদিও তিনি এখন নিজেই একটি ছোট গাড়ি চালান। তার সাথেই দেবশ্রীর বিয়ে দেওয়ার মনস্থির করেন অজয় বাবু। এই বিয়েতে সম্মতিও মেলে সন্তোষের তরফ থেকে। তারপরেই ঘটা করে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন দুজন। যে বিয়ের মূল উদ্যোক্তা দেবশ্রীর শ্বশুরমশাই অজয় বাবু।

গত বুধবার দুর্গাপুরের একটি কালী মন্দিরে বিয়ের আসর বসে। সেখানেই চারহাত এক হয়। বিয়ে উপলক্ষে ওই কালী বাড়িতে অতিথিদের ঢল নামে। উপস্থিত ছিলেন দেবশ্রীর মা মিত্রা মাইতিও। অজয় বাবু তাঁর সাধ্যমত পাত্রের হাতে তুলে দেন কুড়ি হাজার টাকা, সোনার গয়না ও একটি নতুন বাইক। আর এই বিয়েতে খুশি হয় দেবশ্রীও।

বর্তমান অবক্ষয়ের সমাজে এমন ঘটনা সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না বললেই চলে। যেখানে নিজের ছেলে মারা যাওয়ার পর পুত্রবধূকে সন্তানসম ভেবে নতুন করে নতুন জীবনের জন্য বিয়ের পিঁড়িতে বসানো। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনদের বক্তব্য, সমাজকে আরো সুষ্ঠু ও সুন্দর করে তুলতে এরকম খবর বহুল প্রচারিত হওয়া প্রয়োজন।