নিজস্ব প্রতিবেদন : নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে উত্তাল গোটা দেশ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যখন বিক্ষোভের আগুণ জ্বলছে, ঠিক তখন শুক্রবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে বেশ কিছু ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে নাগরিকত্ব প্রসঙ্গে।
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, সেই সকল ভারতীয় প্রাকৃতিক নিয়মেই ভারতীয় নাগরিক, যারা ১৯৮৭ সালের আগে এদেশে জন্মেছেন। কিন্তু তারপরেও এত বিক্ষোভের আগুন কেন? তার মূলে রয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের গোটা দেশে এনআরসি বলবৎ করার প্রসঙ্গে বক্তব্য। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। অমিত শাহের বক্তব্য থেকে অজস্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনে হয়েছে নাগরিক পঞ্জিকরণ থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে। ফলে তারা আর দেশের নাগরিক থাকবেন না, দেশ ছাড়তে হবে। এছাড়াও উদারপন্থীদের বক্তব্য, এইভাবে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংবিধান বিরোধী।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা ঘরোয়াভাবে নাগরিকত্ব নিয়ে ব্যাখ্যা দেন।তাদের বক্তব্য অনুযায়ী নাগরিকত্ব আইন ১৯৫৫ এবং তার পরবর্তী সংশোধনী আইনগুলিকে স্পষ্ট করে বলা আছে কারা ভারতের নাগরিক, কারা নয়। এমনকি তারা এ-ও জানান, কাউকেই অযাচিতভাবে নাগরিকত্ব থেকে বাতিল করার অভিপ্রায় সরকারের নেই। তাহলে প্রশ্ন, কারা ভারতের নাগরিক, আর কারা নাগরিক নন?
১) কোন ব্যক্তি যদি ২৬ শে জানুয়ারি ১৯৫০ অথবা তারপর থেকে ১লা জুলাই ১৯৮৭ সালের মধ্যে ভারতে জন্মগ্রহণ করে থাকেন তাহলে তিনি প্রাকৃতিক নিয়মেই ভারতের নাগরিক।
২) যদি কোন ব্যক্তি ১লা জুলাই ১৯৮৭ অথবা তারপরে থেকে ৩ রা ডিসেম্বর ২০০৪ এর মধ্যে ভারতে জন্মগ্রহণ করে থাকেন। আর তার বাবা-মা কেউ একজন ভারতের নাগরিক হয়ে থাকলে তিনিও ভারতের নাগরিক।
৩) কোন ব্যক্তি যদি ৩ রা ডিসেম্বর ২০০৪ তারিখে অথবা তারপরে জন্মগ্রহণ করে থাকেন। আর সেই ব্যক্তির বাবা অথবা মায়ের মধ্যে যেকোনো একজন ভারতীয় নাগরিক হয়ে থাকেন, অন্যজন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী নাহলে ওই ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।
৪) কোন ব্যক্তির যদি বিদেশে জন্ম হয়ে থাকে তাহলেও তিনি ভারতীয় হিসেবে বিবেচিত হবেন, যদি তার বাবা জন্মসূত্রে ভারতীয় হয়। এক্ষেত্রে যে নিয়ম রয়েছে তাতে বলা হয়েছে, ১৯৫০ সালের ২৬ শে জানুয়ারি বা তার পর ও ১০ই ডিসেম্বর ১৯৯২ বা তার আগে বিদেশে জন্মগ্রহণ করলে সেই ব্যক্তিকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবার জন্য তার বাবাকে জন্মসূত্রে ভারতীয় হতে হবে।
৫) ২০০৪ সালের ৩ রা ডিসেম্বর অথবা তারপর কোন ব্যক্তি যদি দেশে জন্মগ্রহণ করেন তাহলে তিনি ভারতীয় বলে বিবেচিত হবেন না। যদি না হলফনামা দিয়ে ওই ব্যক্তির বাবা মা জানান যে তাঁদের সন্তানের বিদেশি পাসপোর্ট নেই। এ ছাড়াও ওই শিশুটি বিদেশে জন্ম নেওয়ার এক বছরের মধ্যে স্থানীয় ভারতীয় কনসুলেটে তার নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা এও জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরনের জন্য কি কি শর্ত আরোপ করা হবে তা চূড়ান্ত হয়নি। তবে উপরোক্ত পাঁচটি শর্ত যদি কোন ব্যক্তি পূরণ করে থাকেন তাহলে তার ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে কোনো রকম চিন্তা করার কারণ নেই।