ভারত চীন সীমান্তে বিবাদের জেরে সেনাদের মধ্যে হাতাহাতি হলেও কেন হয়না গোলাগুলি

নিজস্ব প্রতিবেদন : মাস কয়েক ধরেই ডোকলাম নিয়ে চীন ও ভারতের মধ্যে বিরোধ চলছে। কিন্তু তাহলেও ভারত পাকিস্তান সীমান্তের মত অশান্ত নয় ভারত চীন সীমান্ত। ভারত চীন সীমান্তে বিবাদের জেরে হাতাহাতি হলেও গোলাগুলির পর্যায়ে তা সাধারণত যায়না। এই বিষয় আগেও লক্ষ্য করা গেছে, এমনকি গত সোমবার রাতের ঘটনা মর্মান্তিক হলেও সেখানেও গোলাগুলি হয়েছে বলে কোনো খবর নেই। কিন্তু কেন! জানেন কি এর পিছনে কি কারণ রয়েছে?

অটল বিহারী বাজপেয়ীর সময় থেকেই চীন এবং ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় যা পরবর্তীকালে মনমোহন সিংয়ের আমলেও সেই একই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। এই সমঝোতায় দুই দেশই সিদ্ধান্ত নেয় যে ফ্রন্টলাইনের সেনাদের কাছে কোনরকম অস্ত্র থাকবেনা। সেনা র‍্যাঙ্ক অনুযায়ী যদি কোনো আফিসারের কাছে অগ্নেয়াস্ত্র রাখা হয় সেক্ষেত্রে তার নল মাটির দিকে ঘুরিয়ে রাখতে হবে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের এরকম কোনও চুক্তি নেই। এর জন্যেই ভারত-চীন সীমান্তে গোলাগুলি চলেনা, হাতাহাতি বা কুস্তির ছবি উঠে আসে।

তবে শুধু এটুকুই নয়, এই হাতাহাতিরও কিছু নিয়ম আছে। কেউ কাউকে চড় বা থাপ্পড় মারতে পারবেন না। কারণ এটা তাকে অপমান। একে অপরকে ধাক্কা দেয়, কেউ পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ায়। কিন্তু কেউ কাউকে চড়-থাপ্পড় মেরেছে, এটা দেখা যায় না। তাই ধাক্কাধাক্কির সময়েও কেউই হাত ব্যবহার করে না। নিজেদের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যই সেনা সদস্যরা এটা করে থাকেন।

১৯৭৫ সালেই শেষবার ভারত এবং চীনের মধ্যে গোলাগুলি চলেছিল। যদিও তাতে কোনো পক্ষের ক্ষতি হয়নি। পরবর্তীতে দুই দেশের মধ্যে অনেক বিরোধ হলেও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়নি বরং নিয়মিত সমঝোতা ও আলোচনার মধ্যে দিয়েই সমস্যার সমাধান করেছে দুই দেশ।

ভারত এবং চীনের চুক্তি

১৯৯৩ সাল : ১৯৯৩ সালে নরসিমহা রাও ভারতের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন চীন ও ভারতের মধ্যে মেইন্টেন্যান্স অফ পিস এন্ড ট্র্যাঙ্কুয়েলিটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। (Agreement of maintenance of peace and tranquility along the LAC)।

১৯৯৬ সাল : ১৯৯৬ সালে আস্থা বর্ধক ব্যবস্থাপত্র স্বাক্ষরিত হয়। (Agreement of confidence-building measures in the military field along the LAC)।

২০০৩ সাল : ২০০৩ সালে একটি শান্তিমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

২০০৫ সাল : ২০০৫ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে আরও একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
(Protocol on the modalities of confidence-building measures in the military field along the LAC)।

২০১২ সাল : ২০১২ সালে ভারত ও চীনের মধ্যে একটি নতুন চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।(Agreement on the establishment of a working mechanism for consultation and coordination on India-China border affairs)।

২০১৩ সাল : ২০১৩ সালে বর্ডার ডিফেন্স কোঅপারেশন এগ্রিমেন্টের শেষ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। (Border defence cooperation Agreement)।

এই সকল চুক্তিগুলির জন্যই সীমান্তে সাধারণত হাতাহাতি বা কুস্তি দেখা গেলেও কিন্তু গোলাগুলি দেখা যায়না। বর্তমান পরিস্থিতিতেও দুই দেশ তাদের চুক্তি অনুযায়ী পরিস্থিতি বহাল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে।