নিজস্ব প্রতিবেদন : দিন দিন জিনিসপত্রের দাম এমনিতেই আকাশছোঁয়া হয়ে যাচ্ছে। আবার এরপরেও সঠিক মূল্য দিয়েও সব সময় সঠিক জিনিস পাওয়া যায় না। কিছু ব্যবসায়ীর অসাধুতা, ব্যবসাতে অধিক লাভ করবার প্রবণতার জন্য সাধারণ মানুষ অনেক সময় ন্যায্য মূল্য দিয়েও পরিমাণে কম জিনিস পেয়ে থাকেন।
আবার অনেক সময় আমরা নিজেদের অজান্তেই এই ভাবে দিনের পর দিন প্রতারিত হয়ে থাকে। যে সকল জিনিসগুলি আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয়, নিত্যব্যবহার্য তার ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। ঠিক যেমন পেট্রোল-ডিজেলের ক্ষেত্রেই বলা যায়।পেট্রোল-ডিজেলের বর্ধিত দাম দেওয়ার পরেও অনেক সময় সাধারণ মানুষ সঠিক পরিমাণের পেট্রোল পান না। সাধারণ মানুষ যখন পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল ভরতে যান তখন কিছু অসাধু পেট্রোল পাম্প কর্মচারী ও মালিক তাদের প্রতারিত করেন নানা উপায়ে। কী কী উপায়ে তারা পেট্রোলের পরিমাণ কম দিয়ে আপনার সাথে প্রতারিত করে থাকে তা জানতে পারলে এই ঝুঁকি অনেক কম হয়। কারণ উপায়গুলি জানা থাকলে সাধারণ মানুষ সতর্ক হয়ে যেতে পারেন।
১) অনেক পেট্রোল পাম্পে গিয়ে দেখবেন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি লম্বা পাইপের ব্যবহার করা হচ্ছে তেল ভরার জন্য। এক্ষেত্রে তেল চুরির সম্ভাবনা থেকে যায়। নিখুঁত মিটার রিডিংকে ফাঁকি দিয়েই এটি করা সম্ভব। কারণ মিটারে যখন দেখায় যে এক লিটার তেল দেওয়া হয়ে গিয়েছে, তখনও বেশ কিছুটা তেল ওই লম্বা পাম্পে থেকেই যায়। এক লিটারে ৫০ থেকে ৬০ মিলিলিটার তেল এক্ষেত্রে চুরি করা যায়।
এখন একজনের ক্ষেত্রে পরিমাণটা যদি ৫০ থেকে ৬০ মিলি লিটার হয় তাহলে সারাদিনে এরকম ১০০ জনের থেকে পেট্রোল চুরি করলে কত লিটার তেল চুরি হচ্ছে ভাবতে পারছেন?
এ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের কী করনীয়?
এরপর থেকে যখন পেট্রোল পাম্পে তেল ভরাতে যাবেন তখন ১২০ টাকা বা ১৩৫ টাকার হিসেবে তেল দিতে বলুন। অথবা ১.৪৫ লিটার বা ৩.৫৬ লিটার হিসেবে তেল ভর্তি করার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে তারা কারচুপি করতে পারবে না।
২) আপনি যখন তেল নিতে যাবেন তখনই কর্মচারীকে বলে দিন যে সে যেন ট্যাঙ্কে পাইপ ঢুকানোর সময়েই ফিলিং পাইপটি অন করে দেয়। কারণ অনেক সময় ফিলিং পাইপে সুইচ বারবার নামিয়ে তেলের কারচুপি করা হয়, যা মিটার রিডিংও ধরতে পারে না। তাই পেট্রোল পাম্পে গিয়ে যদি দেখেন তেল ভরার সময় কর্মচারী বারবার ফিলিং পাইপের সুইচ নামিয়ে ফেলেছে তাহলে সেটাকে কখনোই অবহেলা করবেন না।
৩) অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আবার পেট্রোলের সাথে ন্যাপথা মিশিয়ে ভেজাল তেল দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে কারচুপি সহজে ধরা পড়ে না।
৪) অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে আমরা পেট্রোল পাম্পে গিয়ে যে দামের পেট্রোলের কথা বলি কর্মচারী যেন শুনতেই পায়নি। ভান করে তার থেকে কম টাকার পেট্রোল ভরে দেয়। এরপর কর্মচারীকে তার ভুল ধরিয়ে দিলে সে পুরোনো মিটারের রিডিং মুছে না দিয়েই আবার আপনাকে বাকি তেলটা ভরে দিতে থাকে। সাধারণ নজরে এখানে মানুষের সন্দেহ হবে না। কিন্তু এই যে মিটারের রিডিং না মুছেই আবার তেল দেওয়া, এর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আসল কারচুপি।
ধরুন পেট্রোলপাম্পে গিয়ে বললেন ৬০০ টাকার তেল ভরাবেন কিন্তু পেট্রোলের কর্মচারী আপনার কথা যেন শুনতেই পায়নি এমন ভান করে ২০০ টাকার তেল দিয়ে বন্ধ করে দিল। এরপর যখন আপনি বললেন যে আমি ৬০০ টাকার তেল ভরাবো তখন সে আবার মিটারের রিডিং ডিলিট না করেই ৪০০ টাকা ইন্টার করে আপনার বাইকে বা গাড়িতে তেল ভরে দিলো।এটা দেখে মনে হবে যে আপনাকে মোট ২০০+৪০০ টাকার তেল ভরা হচ্ছে কিন্তু এটাও তেল চুরির একটা গোপন কারসাজি। তাই আপনার ক্ষেত্রে যদি এমনটা হয় তাহলে পেট্রোল পাম্পের কর্মচারীকে বলুন মিটার রিডিং নতুন করে শুরু করে তারপর ৪০০ টাকার তেল দিতে।
৫) অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আবার মিটারের সাথে ইলেকট্রনিক চিপ লাগিয়ে তেলের পরিমাণে কারচুপি করেন। এক্ষেত্রে তারা কীভাবে চুরি করেন? মিটারের গায়ে ইলেকট্রনিক চিপ লাগিয়ে তারা মিটারের রিডিং ইচ্ছামত বাড়িয়ে নিতে পারেন যদিও তেল সেই পরিমাণে দেওয়া হয় না।
এক্ষেত্রে কী করণীয়?
যদি তেলের পরিমাণ নিয়ে আপনার সন্দেহ হয় তাহলে নিজের সাথে করে এক লিটারের তেলের বোতল নিয়ে যান। আর তারপরেই বোতলের মধ্যেই তেল ভরে নিন। এর ফলে তেলের পরিমাণটা আপনি দেখেই বুঝে নিতে পারবেন।