নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতীয় রাজনীতির দিক বদলে দেওয়া রাজনীতিক যশবন্ত সিং দীর্ঘ রোগভোগের পর ৮২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ভারতীয় জনতা দলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, প্রাক্তণ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। দীর্ঘ সংসদীয় সদস্য হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৮০, ১৯৮৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯ ও ২০১৪ সাল রাজ্য সভায় ও ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৯ সালে লোকসভায় প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৩৮ সালের ৩ রা জানুয়ারি রাজস্থানের বারমের জেলার জাসোল গ্ৰামে এক রাজপুত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। সেনাবাহিনীতে দীর্ঘ কাজ করার পর তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি সক্রিয় সংসদীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ির মন্ত্রিসভায় অর্থ, বিদেশ, প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের পদে দায়িত্বভার সামলান।
১৯৯৮-৯৯ সালে যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ার ম্যানের দায়িত্বভার সামলান। ২০০৪ সালে বিজেপির ক্ষমতা হাতছাড়া হলে তিনি বিরোধী দলনেতার ভূমিকা পালন করেন।
রাজনৈতিক হিসাবে ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান, বাজপেয়ির আমলে পরমাণু পরীক্ষা হলে আমেরিকার সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাত শুরু হলে পুরো বিষয়টি তিনি দক্ষতার সঙ্গে সামলান। বিশ্বরাজনীতির মঞ্চ আমেরিকা ও ইউরোপের প্রবল বিরোধিতার মধ্যেই পরমাণু শক্তিধর দেশ হিসাবে ভারতের প্রতিষ্ঠা করার কূটনৈতিক সাফল্য লাভ করেন।
৯/১১ এ আমেরিকায় সন্ত্রাসবাদী হানা হলে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ ও আফগানিস্তান যুদ্ধে আমেরিকা ভারতের সহযোগিতা চাইলে ভারত এক জটিল রাজনৈতিক অবস্থার মধ্যে পড়ে। ভারত প্রথম জোট নিরপেক্ষতার রাজনীতি থেকে সরে আমেরিকার দিকে ঝোঁকার প্রক্রিয়া শুরু হয় যশবন্ত সিংয়ের নীতিগত অবস্থান থেকে। যদিও ভারতের তিন সেনাবাহিনী ও প্রধানমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তে প্রাথমিক ভাবে বিরোধী ছিলেন।
২০০৯ সালে মহঃ আলি জিন্না সম্বন্ধে তিনি তাঁর বইয়ে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। যা বিজেপির রাজনৈতিক মতাদর্শের সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। তাঁর ফলে তিনি দলে অপ্রিয় হয়ে পড়েন।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দল তাঁকে ভোটে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে তিনি নিজের জেলা বারমের থেকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেন। দল তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে তাঁকে বহিষ্কার করে। ঘটনার কিছুদিন পরেই তিনি বাথরুমে পড়ে গুরুতর আহত হন ও কোমায় চলে যান। দীর্ঘ অসুস্থতার পর রবিবার সকালে যশবন্ত সিংহের প্রয়াণ ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শোক প্রকাশ করে জানান, “যশবন্ত সিং জি ভারতকে সেবা করেছেন প্রথমে একজন সৈনিক হিসাবে ও পরবর্তী ক্ষেত্রে দীর্ঘ রাজনৈতিক ব্যাক্তি হিসাবে। অটলজীর মন্ত্রিসভায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিশ্ব অর্থনীতি, বিদেশ ও প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রে রেখে গেলেন তাঁর অসাধারণ ভূমিকা। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি।”
বিজেপি তথা ভারতীয় রাজনীতির এই দিকপাল একদিকে যেমন রেখে গেলেন তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ, তেমন নিজের দলের ভিতরেই ব্রাত্য হয়ে এক ট্রাজিক রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব হিসাবে ইতিহাসের পাতায় থেকে গেলেন।