সম্পূর্ণ বন্ধ করা হল হাওড়ার ৪ থানা এলাকা, শুরু নয়া অপারেশন

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে লকডাউনকেই মোক্ষম দাওয়াই হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ভারতবর্ষ ও তার ব্যতিক্রম নয়। ভারতবর্ষে করোনা সংক্রামিতদের সংখ্যা ২৮০০০ ছুঁতে চলেছে। সংখ্যাটা রীতিমতো ভয়ের। তবু কিছু মানুষ এখন অব্দি সচেতন হচ্ছেন না।

পশ্চিমবঙ্গেও করোনার ফলে কিছু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই কলকাতার কতগুলি এলাকাকে রেডজেন বলে ঘোষণা করেছে। করোনা সংক্রমিত সাতটি স্পর্শকাতর জেলার মধ্যে হাওড়া একটি। কিন্তু আজ সকালে হাওড়ার চারটি থানা এলাকায় সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। এই যে চারটি থানা এলাকায় সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করা হচ্ছে এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন কোভিড জিরো’।

এই সম্পূর্ণ লকডাউন অবস্থায় ফলে কী কী হবে?

এতদিন অবধি ওই সমস্ত এলাকায় ওষুধ এবং মুদিখানা করতে যাওয়ার জন্য মানুষকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আজকের পর বাজার মুদিখানা এমন কি ওষুধ ও বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। অর্থাৎ কোনোভাবেই ওই চারটি এলাকার কোন মানুষ কোন কারনেই বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না, তাদের যা প্রয়োজন থাকুক না কেন সেই প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে।

এই চারটি থানা এলাকা কি কি?

যে চার থানা এলাকাতে সম্পূর্ণভাবে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে সেই চারটি থানা এলাকা হলো গোলাবাড়ি, হাওড়া, শিবপুর, মালিপাঁচঘরা।

কেন এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো?

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আগামী ১৪ দিনের মধ্যে হাওড়া জেলাকে রেড জোন থেকে গ্রিন জোনে আনতে হবে এবং এই নির্দেশ পালন করার জন্য সম্পূর্ণ লকডাউন করা ছাড়া আর কোন গতি ছিল না। আমরা সকলেই জানি রেড জোনের অর্থ হল করোনা সংক্রামিত এলাকা। গ্রীন জোনের অর্থ হল যে এলাকায় এখনো অব্দি করোনা প্রবেশ করেনি অর্থাৎ করোনা সংক্রমণের ভয় যেখানে আর আজ নেই। হাওড়াতে গ্রীন জোন করার জন্য তাই পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে হাওড়ার পুরো কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বাবু বলেন, “এই পুরো কর্মসূচিটি পালন করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বিশেষ মনিটরিং দল ও আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। ৬ জন সদস্যের এই দল ও বাড়ি যাবেন এবং পুরো প্রক্রিয়াতে আমাদের সাহায্য করবেন।”

কিন্তু এই সকল এলাকাতে যে ১০০% লকডাউন কার্য করা হবে তাহলে সেখানকার বাসিন্দাদের কি কোন রকম অসুবিধা হবে না? এবিষয়ে জানা গিয়েছে এই চারটি থানা‌ এলাকায় কোনো কিছুই খোলা থাকবে না। তবে প্রশাসনের ফেসবুক পেজ ও ওয়েব পোর্টালে চারটি থানা এলাকার বাজার, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দোকানের নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে। সেখানে ফোন করলে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসা হবে।

কিন্তু করোনা আবহের মধ্যে ওই রেড জোন এলাকাতে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসার কাজটি কারা করবে?

জানা গিয়েছে এই কাজটি করার জন্য কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অনলাইন হোম ডেলিভারি কাজে লাগানো হবে।

অর্থাৎ করোনা এই সংক্রমণ রোখার জন্য পুলিশ প্রশাসন স্বাস্থ্যকর্মী ডাক্তার-নার্সের পাশাপাশি ডেলিভারি বয়দেরও ভূমিকা অনস্বীকার্য। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা এই কাজটি করবেন তাদের অবশ্যই আমাদের তরফ থেকে একটি স্যালুট পাওয়া উচিত। আর এই মানুষগুলিকে সম্মান জানাতে আমরা যা করতে পারি তা হলো আমরা আমাদের এলাকাকে গ্রীন জোনের মধ্যেই রাখব এমন প্রতিজ্ঞা পালন করা। আমাদের এলাকাকে আমরা কোনো ভাবেই রেড জোনে পরিণত হতে দেবো না। আর আমাদের এলাকাকে গ্রীন জোনে রাখার জন্য কেউ প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমরা বাড়ির বাইরে বেরোবো না এবং বাইরে থেকে ঘরে এলে গরম জলে সাবান দিয়ে হাত, পা, মুখ, পরিষ্কার করার পাশাপাশি স্নান করে থাকবো এবং সর্বোপরি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবো। হ্যাঁ, লকডাউনকে মেনে চলুন। একমাত্র এই উপায়েই আমরা নিজেদের ও নিজেদের পরিবারকে, পাড়া-প্রতিবেশীকে এবং সর্বোপরি রাজ্য তথা দেশকে রক্ষা করতে পারি।