বাঙালির অন্যতম প্রিয় খাদ্য বিরিয়ানি। পেটে খিদে থাকলেই বাঙালির মনে পড়ে বিরিয়ানির কথা। কিন্তু খাদ্য প্রেমী বাঙালি কি একটা বিষয় লক্ষ্য করেছেন, যে সবসময় বিরিয়ানির হাঁড়ি মোড়া থাকে লাল কাপড়েই। সাদা, নীল, সবুজ, হলুদ বা অন্য কোনো রং নয় কেন! লাল কাপড়েই মোড়া থাকে কেন সেই হাঁড়ি? এর পিছনে কি রয়েছে কোনো ইতিহাস! নাকি কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা!
নিজস্ব প্রতিবেদন : যেহেতু এখন অলিতে গলিতে দেখা যায় বিরিয়ানির হাঁড়ি সেহেতু লক্ষ্য হয়তো অনেকেই করেছেন কিন্তু সে নিয়ে ভেবে দেখার সেরকম সুযোগ হয়নি। আসলে এর পেছনে রয়েছে বিরিয়ানির ইতিহাস, যাকেই আসল কারন হিসাবে দাবি করেন বহু বাঙালি।
ঘটনা ১৮৫৬ সালের, সেই বছরের ৬ই মে কলকাতায় এসেছিলেন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ।তার হাত ধরেই কলকাতার মানুষ পরিচিত হয় বিরিয়ানির সাথে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, অনেক সময় আগে সম্রাট হুমায়ুনের খাদ্য পরিবেশনে এক ‘দরবারি রীতি’ মানা হতো যাতে, রূপোলি পাত্রের খাদ্যদ্রব্যগুলি জন্য লাল কাপড়েই ঢাকা হতো এবং অন্য কোনো ধাতুর বা চীনামাটির পাত্রগুলিকে সাদা কাপড়ে ঢাকা হতো। এরপর আকবরের আমলে মুঘল দরবারেও মানা হতো এই রীতি। পরবর্তীকালে লখনৌয়ের নবাব রাও সেই রীতির অনুসরণ করতেন এবং যেহেতু এক লখনৌ নবাবের হাত ধরেই বাংলায় বিরিয়ানি রাজত্ব গড়েছে সেহেতু বিরিয়ানির পাত্রের ক্ষেত্রে সেই রীতিই অনুসরণ করা হয়।
নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের সময় থেকেই বিরিয়ানির পাত্র লাল কাপড়ে মুড়ে রাখার রীতি মানা হয় বাংলায়। অনেকের মতে বিরিয়ানিতে আলুতে প্রচলনও করেছিলেন নবাব ওয়াজিদ আলি শাহ। আর সেই বিরিয়ানির আলুই এখন খাদ্যরসিক বাঙালির চোখের মণি।
তবে এক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করেন অনেকেই। অনেকের মতে ঐতিহাসিক কারণে নয় বরং বৈজ্ঞানিক কারনের জন্যই লাল কাপড়ে মুড়ে রাখা হয় বিরিয়ানির হাঁড়ি। লাল রং দুর থেকেই ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষন করবে বলেই এই উপায় বেছে নেন বিক্রেতারা।
তবে কারন যাই হোক সেই নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে পেটের খিদে কমাতে বিরিয়ানির দিকেই ছুটে যাবে বাঙালি। লাল কাপড়ে মোড়া হাঁড়ির থেকে তার ভেতরের বিরিয়ানির দিকেই যে বাঙালির নজর তা বলাইবাহুল্য।