নিজস্ব প্রতিবেদন : দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর ৮ আগস্ট ২০২৪ পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharya) ইহলোক ত্যাগ করলেন। অন্যান্য বারের মতো এবারও তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন এমনটা আশা করা হলেও তা হলো না। তার এইভাবে পরলোকগমন শোকের ছায়া নামিয়ে দেশের রাজনীতির পাশাপাশি রাজ্যের বাসিন্দাদের মনে।
রাজনৈতিক জীবনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বিতর্কিত এক ব্যক্তি হওয়ার পাশাপাশি ভদ্রলোক মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। তার জীবনে তার এমন পরলোকগমন যে ধাক্কা এনে দিয়েছে তার থেকেও বড় ধাক্কা কিন্তু তিনি খেয়েছিলেন তার জীবিত অবস্থায়। তার রাজনৈতিক জীবনের সেই ধাক্কা পুরো বদলে দিয়েছিল তাকে।
১৯৬৬ সালে সিপিএমের প্রাথমিক সদস্য পদ গ্রহণের পর ১৯৭৭ সালের নির্বাচনে প্রার্থী এবং তারপর সাধারণ বিধায়ক থেকে মন্ত্রী, দীর্ঘ বছর ধরে তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে এরপরেও রাজ্যের আরেক মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে ১৯৮২ থেকে পাঁচ বছর জনপ্রতিনিধি না থাকার জীবন তাকে কাটাতে হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে ফের স্বমহিমায় উদয় হয়েছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের।
পরবর্তীতে জ্যোতি বসুর প্রয়াণের পর তার রাজত্ব শুরু হয়। ২০০৬ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বসার পরই তার রাজনৈতিক জীবনে নতুন নতুন ধাক্কা আসতে শুরু করে। তার জীবনে সবচেয়ে বড় ধাক্কা ছিল সিঙ্গুরে টাটা ন্যানো কারখানা তৈরির জন্য টাটাদের জমি দেওয়া। সেখানে এক লাখি গাড়ি টাটা ন্যানো তৈরির জন্য ১০০০ একর জমি অধিগ্রহণ হয়। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেননি চাষীদের বড় অংশ।
আরও পড়ুন ? Mamata Cabinet: বদলে গেল মমতার মন্ত্রিসভা, কপাল খুললো বাবুল সুপ্রিয় থেকে মানস ভুঁইঞার
কৃষি নির্ভর সিঙ্গুরে কারখানা তৈরি হওয়ার পর চাষীদের কি হবে? এইসব নানান কথা ভেবে আস্তে আস্তে এলাকায় ধিকি ধিকি করে আগুন জ্বলতে শুরু করে। তারপরেই শুরু হয় বড় ধরনের আন্দোলন, রাজনৈতিক মহলের বিশেষজ্ঞরা সিঙ্গুরের এই আন্দোলনকে এই বাম জামানার পতনের জন্য দায়ী করে থাকেন। শেষমেষ আন্দোলন এতটাই মাথাচাড়া দিয়ে উঠে যে রতন টাটা সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেন।
সিঙ্গুরে এমন আন্দোলনের মধ্য দিয়েই রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে উঠতে শুরু করেন তার ফলাফল ধীরে ধীরে ২০০৯ এর লোকসভা নির্বাচন থেকেই মিলতে শুরু করে। আর তার পূর্ণ রেজাল্ট পাওয়া যায় ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। যেখানে ২০০৬ সালে বামফ্রন্ট ২৩৫টি আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরেছিল, সেই জায়গায় ২০১১ সালে বামফ্রন্ট থেমে যায় ৫৮তে। এদিকে তৃণমূল একাই ১৮৪ টি আসন দখল করে, জোৎসঙ্গী হিসাবে কংগ্রেসের দখলে যায় ৪২ টি আসন। এমনকি এই নির্বাচনে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকেও পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছিল।