জেনারেশন জেড যে এইচটিএম ঘড়ি (hmt Watches) -এর নাম খুব বেশি শোনেনি তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু নব্বই-এর দশকে এটির আকর্ষণ ছিল আলাদাই। বিয়ে বাড়ির গিফট, জন্মদিনের উপহার – সবক্ষেত্রেই এগিয়ে ছিল hmt ঘড়ি। এমনকি আজ এই স্মার্ট ওয়াচের (Smart watch) যুগেও অনেকে এইচএমটি ঘড়িকে (hmt Watches) একটি পুরনো স্মৃতির ঘড়ি হিসেবে নিজের বাড়িতে যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। প্রায় ৫০ বছর ধরে ঘড়িটি বাজারে নিজেদের পোক্ত অবস্থান বজায় রেখেছিল। কিন্তু হঠাৎই এই ঘড়ি হারিয়ে গেলো কিভাবে জানেন?
জানা যায় যে, ১৯৫০ র দশকে জওহরলাল নেহেরুকে (Jawaharlal Nehru) কেউ একটা সুইস ঘড়ি (Swis watch) গিফট করে, আর সেটা দেখে তার মনে হয়, আমরা কেন এরম ঘড়ি বানাতে পারিনা যেটা সাধারণ লোকে কিনতে পারবে। সেই ভাবনার ফলশ্রুতি হলো hmt। hmt -এর পুরো নাম হলো হিন্দুস্তান মেশিন টুলস (Hindusthan Mechine Tools)। তবে তারা শুধু ঘড়ি বানাতো না, এদের ট্র্যাক্টর (Tractor) এবং আরো কিছু অন্য প্রোডাক্টসও ছিল।
hmt -এর মূল লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষের জন্যে আফোর্ডেবল ঘড়ি তৈরি করা। কিন্তু মূল সমস্যা ছিল টেকনোলজি। তারা প্রথমে কন্টাক্ট করে Seiko কে, কিন্তু Seiko পাত্তা দেয়নি। তখন তারা যোগাযোগ করে Citizen এর সাথে। CITIZEN রাজি হয় hmt কে টেকনোলজি সাপ্লাই করার জন্যে। তারপর কোম্পানি থেকে টেকনিসিয়ানরা জাপান এ যায় ট্রেনিং নেওয়ার জন্যে।
আর ইন্ডিয়া তে hmt Watches ডিভিশন স্থাপন করা হয় ১৯৬১ এ বেঙ্গালুরুতে। hmt এর প্রথম ঘড়ি ছিল জনতা। প্রথমে hmt সিটিজেন এর ক্যালিবার ০২০০ ইম্পোর্ট করে ব্যবহার করতো। কয়েক বছরের মধ্যে তারা নিজের মুভমেন্ট তৈরি করা শুরু করে আর নাম দেয় ০২৩০ মুভমেন্ট। পরে সেটা আপগ্রেড করা হয় সিটিজেন ০২০১ অথবা hmt ০২৩১ মুভমেন্ট নামে।
আশির দশকে টাইটান আসার পর আস্তে আস্তে তাদের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। আর একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে একেবারে মুখ থুবড়ে পড়ে তারা। যে কোম্পানির ঘড়ির জন্যে লোকে সারারাত লাইন এ দাঁড়িয়ে থাকতো, যে ঘড়ি একসময় মানুষের জীবনের মাইলস্টোন মার্ক করতো, সেই ঘড়ি বিক্রি হওয়া আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যায়। আর এক এক করে ফ্যাক্টরি গুলো বন্ধ হতে থাকে।
আসলে বিশ্বের অন্য দেশের কাছে ভারতীয় বাজার উন্মুক্ত হওয়ার পরেই বহু কোম্পানি ভারতের বাজারে চলে আসে। সাধারণ মানুষেরও সেই সব ঘড়ির প্রতি আগ্রহ বেড়ে। আর চাহিদা কম হয়ে যাওয়ার কারণে একের পর এক তাদের কারখানা গুলিতে তালা পড়তে থাকে। বাড়তে থাকে লোকসান ও ঋণের পরিমাণও। তবে ২৯১২-২০১৩ সালেও ঘড়িগুলির বার্ষিক টার্নওভার ছিল ২৪২ কোটি টাকার বেশি। যদিও ২০১৬ সালের পর পাকাপাকি ভাবে বন্ধ হয়ে যায় কোম্পানিটি। শেষ পর্যন্ত কোম্পানির উপর ঋণের বোঝা ছিল প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা। শেষমেষ ২০১৫ তে hmt-র প্রধান বেঙ্গালুরু ফ্যাক্টরিও বন্ধ হয়ে যায়।