নিজস্ব প্রতিবেদন : একদিকে নদীর পাড় যখন গড়ছে, অন্যদিক থেকে নেমে আসছে ভাঙ্গন। নিয়তির এই খেলা বাস্তবায়িত হলো বুধবার। এমন বাস্তবায়নের ঘটনা ঘটলো আহিরীটোলার গৃহবধূর ক্ষেত্রে। মেয়ের মৃত্যু দিন এই দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিলেন তিনি। দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের আনন্দ মুহূর্তে অবসাদে পরিণত হল। অথচ গতকাল রাত পর্যন্ত কেউ এমনটা টের পাননি।
গতকাল বৃষ্টি ভেজা রাতে একসাথে সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। আহিরীটোলার ওই দম্পতির পাশে ছিল একরত্তি খুদে, তাদের তিন বছরের শিশুকন্যা। অন্যদিকে মায়ের গর্ভে বড় হয়ে উঠছে আরেকজন। তারা তিল তিল করে স্বপ্ন দেখছিলেন, আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা তার পরেই তাদের কন্যা সন্তান তিন বছরের দিদি হয়ে উঠবে। কিন্তু বুধবার ভোররাতে সব লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
অতিবৃষ্টির কারণে এদিন ভোর নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে তাদের বাড়ি। সেই বাড়ির ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়েন সকলে। আহিরীটোলার ১০ নং স্ট্রিটের গৃহবধূ গঙ্গা ঘড়ুই কোলের সন্তানকে নিয়ে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলেও সক্ষম হননি। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই তার তিন বছরের শিশুকন্যা কোথায় যেন হারিয়ে যায়। এরপর বিপর্যয় মোকাবিলা দল এসে গঙ্গা ঘড়ুইকে প্রথমে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। গঙ্গা ঘড়ুই তখন সন্তানসম্ভবা গৃহবধূ।
কিন্তু তখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি তাদের শিশু কন্যাকে। এমন অবস্থায় গর্ভবতী গৃহবধূকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানো হলেও তিনি তার সন্তানকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত যেতে রাজি হননি। অবশেষে জোর করেই তাকে অ্যাম্বুলেন্সে চাপিয়ে আরজিকর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে হাসপাতলে ভর্তি হতে যাওয়ার আগেও তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল সন্তানের জন্য।
কিন্তু তখনও তার তিন বছরের কন্যা সন্তানকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে ৭ ঘন্টা পর বাড়ির ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে ওই কন্যা সন্তানকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। কন্যা সন্তানকে উদ্ধারের খবর ওই গৃহবধূর লেবার রুমে প্রবেশ করার আগে জানানো হয়। কিন্তু কন্যা সন্তানকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও সম্ভব হয়নি তার প্রাণ বাঁচানো।
West Bengal: A three-year-old toddler and a woman died after a building collapsed at Ahiritola Street in Kolkata today. They were rescued from under the debris of the building but later succumbed to their injuries.
Visuals from the spot. pic.twitter.com/TYLiIYLquz
— ANI (@ANI) September 29, 2021
ওই গৃহবধূ লেবার রুমে প্রবেশের কিছুক্ষণের মধ্যেই জন্ম দেন তাঁর দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। আর এই দ্বিতীয় সন্তানকে কোলে জড়িয়ে আনন্দ করবেন নাকি প্রথম সন্তান হারানোর দুঃখে বুক ফাটা কান্নায় ভেঙ্গে পড়বেন, সেই বোধ হারিয়েছেন গৃহবধূ। তিনি এখন বাকরুদ্ধ। অন্যদিকে প্রথম সন্তানের মৃত্যু দিনে দ্বিতীয় সন্তানের বাবা হওয়ার পর চোখের জলে ভাসছেন গঙ্গার স্বামী সুশান্ত।