সম্পূর্ণ ডিজিট্যাল পদ্ধতিতে স্কুল চালিয়ে নজির গড়লো বীরভূমের এই সরকারি স্কুল

নিজস্ব প্রতিবেদন : হোয়াটসঅ্যাপে গ্রূপ করে বা ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে নয়, যেখানে জেলার অনেক প্রাইভেট স্কুল সম্পূর্ণ ডিজিট্যাল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বীরভূমের একটি সরকারি স্কুল তা করে নজির গড়লো। ডিজিট্যাল পদ্ধতি বলতে একেবারে ডিজিট্যাল। এই স্কুলে সরাসরি শিক্ষকের সাথে পড়ুয়াদের যোগাযোগের মাধ্যমে চলছে পড়াশোনা। যাকে আমরা সম্পূর্ণ ডিজিট্যাল পদ্ধতি আখ্যা দিয়ে থাকি।

এমনটা করে দেখিয়েছে বীরভূমের প্রত্যন্ত এলাকা ইলামবাজারের বেলোয়া গ্রামের নিউ ইন্টিগ্রেটেড গভমেন্ট স্কুল। এই স্কুলের বেশিরভাগ পড়ুয়াই আদিবাসী অধ্যুষিত ও পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে উঠে আসা। কিন্তু তারাই এখন সম্পূর্ণ ডিজিট্যাল পদ্ধতিতে লকডাউনের সময় নিজেদের পড়াশোনা চালাচ্ছে রুটিন মাফিক। শিক্ষক একদিকে অনলাইনে পড়ুয়াদের পড়াচ্ছেন আর পড়ুয়ারা অন্যদিকে সরাসরি সেই পড়াশোনা আয়ত্ত করছে। অনলাইনেই তাদের খাতা দেখা, উত্তর নেওয়া, সর্বোপরি সরাসরি ব্ল্যাকবোর্ডে অঙ্ক অথবা অন্যান্য পড়াকে তুলে ধরা। যেমন পড়ার পদ্ধতি হয়তো আমরা দেখেছি নামিদামি বড় শহরের প্রাইভেট স্কুলের ক্ষেত্রে। যেসব স্কুলে নিজেদের সন্তানদের পড়াশোনার জন্য অভিভাবকদের গুনতে হয় মাসে মাসে গোছাভরা টাকা।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপগোপাল মুখার্জি জানান, “সম্পূর্ণ অনলাইনে পড়াশোনা করানোর পরিকল্পনা আমরা আগেই নিয়েছিলাম। এমনটা করার পরিকল্পনা ছিল গ্রীষ্মের ছুটি অথবা অন্যান্য লম্বা ছুটির ক্ষেত্রে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বর্তমানে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও করোনা তার থাবা বসিয়েছে। আর এই মুহূর্তে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এখন সম্পূর্ন অনলাইন পদ্ধতিতে পড়াশোনা চলছে। আগামী সোমবার থেকে পড়ুয়াদের আরও আকর্ষণ বাড়াতে অ্যানিমেটেড পদ্ধতিতেও ক্লাস নেওয়া শুরু করা হবে। আর এই সম্পূর্ণ পর্যায়ে যুক্ত রয়েছেন স্কুলের ৮ থেকে ৯ জন শিক্ষক শিক্ষিকা।”

স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আরও জানা যায়, আপাতত প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এবং বিকাল সাড়ে চারটে থেকে সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত এই ক্লাস নেওয়া হচ্ছে রুটিন অনুযায়ী।আগামী দিনে সকাল সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ক্লাস নেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। প্রতিদিন অনলাইন ক্লাসের সাথে যুক্ত হচ্ছেন ৩০ থেকে ৪০ জন পড়ুয়া। তারা তাদের মোবাইলে Zoom (Paid) অথবা Adobe Connect অ্যাপের মাধ্যমে এই ক্লাসে যুক্ত হচ্ছে।প্রত্যেক পড়ুয়াকে আলাদা আলাদা করে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হয়েছে সবকিছু সুরক্ষিত ও কেন্দ্র সরকারের নির্দেশিকা মেনে। আর এই সম্পূর্ণ বিষয়টি দেখভালের জন্য সিউড়িতে প্রধান শিক্ষকের বাড়িতেই একটি কন্ট্রোল রুমের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীপগোপাল মুখার্জি আরও জানান, “অনলাইনে এই ক্লাস চালানোর জন্য যেহেতু ইন্টারনেট বা মোবাইল ডেটা খরচের একটা বিষয় থেকে যায় তাই আমরা আগামী দিনে আমাদের স্কুলের যে সকল দুঃস্থ পড়ুয়ারা রয়েছেন তাদের জন্য আমাদের বিনামূল্যে মোবাইল ডেটা দেওয়ার বন্দোবস্ত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। যাতে করে কেউ যেন এই ক্লাস থেকে বঞ্চিত না হন যতদিন না স্কুলের স্বাভাবিকভাবেই প্রথম পাঠানো শুরু হচ্ছে।”