শর্মিষ্ঠা চ্যাটার্জী : বিভিন্ন রাজ্য তথা দেশে বিবাহের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম রীতি। তেমনই রাজস্থানি বিয়েতে একটি উল্লেখযোগ্য নিয়মের কথা শোনা যায়। নিয়মটির নাম মায়রা, যে নিয়ম অনুযায়ী ভাগ্নে বা ভাগ্নির বিয়েতে মামারা মায়রা ভর্তি করে টাকা বোনের হাতে তুলে দিয়ে থাকে।
এই নিয়মকে মেনেই এক তাজ্জব ঘটনা দেখা গেলো রাজস্থানের নাগাউর জেলায়। তিন মামা মিলে ভাগ্নের বিয়ের অনুষ্ঠানে দুটি ঝুড়ি ভর্তি করে টাকা নিয়ে বোনের বাড়িতে হাজির। বিপুল অঙ্কের ওই টাকা দীর্ঘদিন যাবৎ ওই কৃষক পরিবারটি ভাগ্নের বিয়ে উপলক্ষে জমিয়েছিলেন। অবশেষে বিয়ে উপলক্ষে সেই টাকা নিয়ে তিন মামা হাজির হয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, ঝুড়িতে থাকা টাকার মধ্যে সবই ছিল দশ টাকার নোট, দুটি ঝুড়ি মিলিয়ে মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ লাখ ১৫ হাজার যা দেখে সবাই অবাক হয়ে যান। এত বিপুল পরিমাণে টাকা ভাগ্নের বিয়ের উপহার হিসেবে নিয়ে এসেছেন তিন মামা মিলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় তারপর থেকেই রীতিমতো ভাইরাল মায়রা দানের সেই ভিডিও।
রাজস্থানের নাগাউর জেলার দেশবল গ্রামে বাস করেন ওই পরিবার। ওইদিন সিপু দেবীর ছেলে হিম্মতরামের বিয়ে উপলক্ষ্যে তার তিন মামা রামনিবাস জাট, কানারাম জাট, শোতানরাম জাট মিলে প্রায় ছয় লাখ পনেরো হাজার টাকা দেন যা গুনতে ৮ জনের তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়।
মুঘল শাসনকালের সময় রাজস্থানে এই মায়রা প্রথা চালু হয়েছিল যা নিয়ে একটি প্রচলিত কাহিনীও শোনা যায়। কর সংগ্রহ করে দিল্লির দরবারে জমা দেওয়ার কাজ করতেন ধর্মরাম জাট ও গোপালরাম জাট নামে দুই ভাই। এমনই একদিন কর সংগ্রহ করে ফেরার রাস্তায় এক দুখী মহিলা কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কোনো ভাই না থাকার কথা জানিয়েছিল। তা শুনে করুন হয় ওই দুই জনের।
তখন তারা কর সংগ্রহের সমস্ত টাকা ওই মহিলার সন্তানের বিয়ের জন্য মায়রা হিসেবে দান করেছিলেন। তারপর থেকেই এই প্রথার প্রচলন। এই প্রথা চলাকালীন আবার মহিলারা লোকগীতি ও গেয়ে থাকেন।এই রীতি দীর্ঘকাল যাবৎ রাজস্থানে প্রচলিত হয়ে আসছে।