নিজস্ব প্রতিবেদন : রেল পরিষেবার উপনির্ভর করে প্রতিদিন দেশের কোটি কোটি মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত করেন। কিন্তু ভারতীয় এই রেল পরিষেবায় বেশ কিছু নিয়ম এবং কাহিনী রয়েছে যা অনেকেই জানেন না। ঠিক সেই রকমই ভারতে রয়েছে একটি রেলস্টেশন, যে রেলস্টেশনটি চালানোর দায়িত্ব ভারতীয় রেলের নয়। বরং এই রেলস্টেশন চালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন গ্রামবাসীরাই।
দেশের একমাত্র এই রেল স্টেশনটি অবস্থিত রাজস্থানে। এটিকে রেলস্টেশন না বলে হল্ট বলা হয়। তবে এই হল্টের মতো ভারতে আর কোথাও কোনো হল্ট অথবা রেলস্টেশন নেই, যা চালানোর দায়িত্ব ভারতীয় রেলের নয়, গ্রামবাসীদের। এই হল্ট স্টেশনটি হলো রাজস্থানের নগৌর জেলার অন্তর্গত জলসু নানক হল্ট রেলওয়ে স্টেশন।
এটি গ্রামবাসীদের দ্বারা সংগৃহীত অনুমোদনের মাধ্যমেই চলছে। আনুমানিক ১৫ থেকে ১৭ বছর ধরে চলছে এই হল্ট স্টেশন। এই দীর্ঘ সময়ের বেশি ধরেই গ্রামবাসীরা এই হল্ট স্টেশনের দায়িত্বভার বহন করার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করেন। স্টেশনের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি গ্রামবাসীরাই এখানকার টিকিট কালেক্টর। যদিও সম্প্রতি এই দায়িত্বভার থেকে গ্রামবাসীরা সরে আসার জন্য রেলের দ্বারস্থ হয়েছেন।
একসময় এই হল্ট স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে লোকসানে চলার কারণে ভারতীয় রেল তা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু গ্রামবাসীরা তা চালানোর দায়িত্ব নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামবাসীদের পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ভারতীয় রেল তাতে সম্মতি দেয়। বর্তমানে এই রেলস্টেশন থেকেই কয়েক হাজার টাকার মুনাফা আসে ভারতীয় রেলের খাতায়। গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়।
২০০৫ সালে এই ফল্ট স্টেশনটি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে বদ্ধপরিকর হয়েছিল ভারতীয় রেল। কিন্তু ভারতীয় রেলের সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি গ্রামবাসীরা। এর প্রতিবাদে তারা ১১ দিন ধরে ধরনা দেন। তখন ভারতীয় রেল গ্রামবাসীদের একটি শর্ত দিয়ে জানান, তারা এই হল্ট স্টেশন বন্ধ করবে না যদি সেই শর্ত গ্রামবাসীরা মেনে নেন। শর্ত ছিল, এই স্টেশনের যাবতীয় দায়ভার গ্রামবাসীকেই নিতে হবে। ভবিষ্যতে ইন্ডিয়ান রেল এতে হস্তক্ষেপ করবে না। দৈনিক নূন্যতম ৫০টি হিসেবে মাসে ১৫০০টি টিকিট বিক্রি করতে হবে।
গ্রামবাসীরা তাদের এই হল্ট স্টেশন বাঁচানোর জন্য রেলের এই শর্ত মেনে নেন এবং গ্রামবাসীরা এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুদান তুলে ১৫০০টি দেড় লক্ষ টাকায় কেনেন। বাকি টাকা সুদের ভিত্তিতে নেওয়া হয়। এর পাশাপাশি টিকিট বিক্রির জন্য গ্রামবাসীরা স্থানীয় একজনকে মাসে ৫০০০ টাকা বেতন দিয়ে নিয়োগ করেন। এরপরেই গ্রামবাসীদের একান্ত প্রচেষ্টায় এই হল্ট স্টেশন বাঁচানো সম্ভব হয়।