‘ক্লাস্টার’ মডেল লাগু করে করোনা মোকাবিলায় সফল আগ্রা, জানুন এর সম্পর্কে

নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতে করোনা সংক্রমনের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এখন একটাই পথ সতর্কতা। করোনা সংক্রমণ রুখতে পথ দেখাচ্ছে ‘কেরল মডেল’ ও রাজস্থানের ‘ভিলওয়াড়া মডেল’। এছাড়াও রয়েছে দেশের ২৫ টি জেলার মডেল। করোনা সংক্রমণ রুখতে কেরল ও রাজস্থানের ভিলওয়াড়া তৈরী করেছে একটি চক্রবুহ্য। সেই চক্রবুহ্যতে ঢোকা বা বেরোনো নিষিদ্ধ। কড়া সতর্কতা দিয়েই কেরল ও ভিলওয়াড়া করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনছে। এবার কেরল ও ভিলওয়ারার পথে হেঁটেই এক অন্য রকম নজির তৈরী করলো আগ্রা। সারা দেশে প্রথম আগ্রা ‘ক্লাস্টার ম্যনেজমেন্ট’-এর সাহায্যে করোনা নিয়ন্ত্রনের বিকল্প দেখালো আগ্রা।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল এদিন বলেন, আগ্রা প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের করোনা নিয়ন্ত্রনের নির্দেশ মেনেই ‘কন্টেনমেন্ট প্ল্যান’ তৈরী করেছেন। একেবারে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আগ্রায় কন্ট্রোল রুম তৈরী করা হয়েছে। যেসব এলাকা করোনার রিপোর্ট পজেটিভ আসে সেসব এলাকায় চলছে দেদার স্ক্রিনিং ও র‍্যাপিড টেস্টিং। আগ্রার জেলাশাসক প্রভু এন সিং বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে এখনও ১৯১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। সবকটিই নেগেটিভ এসেছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে তৈরী করা হয়েছে ‘আগ্রা মডেল অব কন্টেনমেন্ট’।

এই ‘ক্লাস্টার কন্টেনমেন্ট প্ল্যান’ আসলে কি?

কোনও এলাকাকে ক্লাস্টার জোন হিসেবে চিহ্নিত করার অর্থ কেন্দ্রীয় সরকারের করোনা সংক্রমণ রোধ পরিকল্পনা বা ‘কন্টেনমেন্ট প্ল্যান’-এ নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। ক্লাস্টার বলতে বোঝায় কোনও একটা নির্দিষ্ট এলাকায় বা গণ্ডিতে যখন সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। বিদেশ ফেরত কোনো ব্যক্তির থেকে যদি তার পরিবারের ও প্রতিবেশীর করোনা সংক্রমণ হয় অথবা বিদেশে যাননি ও করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসেননি এমন মানুষের দেহে করোনা পাওয়া গেলে সেই এলাকাকে ক্লাস্টার এলাকা নির্বাচিত করা হবে। এই ক্লাস্টার এলাকায় স্ক্রিনিং ও নমুনা পরীক্ষা শুরু করা হবে। এই ক্লাস্টার জোনকে অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হবে। সংক্রমণ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোভিড ওয়ার রুম

আগ্রা ‘ক্লাস্টার কন্টেনমেন্ট’ ছাড়াও একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার মধ্যে একটি কোভিড ওয়ার রুম। আগ্রা এন্টিগ্রেটেড কন্ট্রোল অ্যান্ড কম্যান্ড সেন্টার (ICCC)-কে কোভিড ওয়ার রুমে পরিবর্তন করেছেন। আগ্রা কেন্দ্রের নির্দেশিকা মেনে গাইডলাইন তৈরী করেছেন। আগ্রার মোট ৩৮ টি এলাকাকে করোনা আঁতুড়ঘর অর্থাৎ ক্লাস্টার জোন চিহ্নিত করা হয়েছে। আগ্রার ১০টি এলাকা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। ১,২৪৮ জনের একটি মেডিক্যাল টিম তৈরী করা হয়েছে। এই মেডিক্যাল টিম ৯ লাখের বেশি মানুষের স্ক্রিনিং ও টেস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। আগ্রার দেড় লাখ মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরীক্ষা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ লকডাউন মানছেন কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য পরিষেবা

প্রশাসন আগ্রায় জরুরি তৎপরতায় ৪,০৫৪ টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার তৈরী করেছেন। এর মধ্যে ৩,০৬০ টি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে বিনামূল্যে রোগীর টেস্টিং করা হবে। এছাড়াও ক্লাস্টার এলাকা নির্বাচিত করার জন্য মাইক্রো প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এই ক্লাস্টার জোনের পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত বাফার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেইসব এলাকায় মেডিক্যাল টিম তৈরী করা হয়েছে যারা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখবেন।

নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর যোগান

আগ্রার সরকারি আধিকারিকদের সাহায্য নিয়ে ফুড ডিস্ট্রিবিউশন টিম তৈরী করা হয়েছে। এই ফুড ডিস্ট্রিবিউশন টিম আগ্রাবাসীর বাড়ি ঘুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকা সংগ্রহ করছেন। আধিকারিকরা বাড়ি গিয়ে খাবার ওষুধের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন।