ইরফান খান চলে গেলেন নিউরোএন্ডোক্রিন টিউমার রোগে, এটি কি এমন রোগ

Madhab Das

Updated on:

Advertisements

নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজপরিবারের জন্মেছিলেন অথচ অভাব তাঁর পিছু ছাড়েনি। স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হ‌ওয়ার অথচ হয়ে গেলেন অভিনেতা। ১৯৬৭ সালের ৭ই জানুয়ারি রাজস্থানের জয়পুর জন্মেছিলেন ইরফান খান। বলিউডের প্রথম ছবি ছিল ‘সালাম বোম্বে’, এরপর বলিউড থেকে হলিউডেও পাড়ি দেন তিনি। সেই আশির দশকের বিখ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান মারা গেলেন বুধবার সকালে‌। দীর্ঘদিন ধরে নিউরোএন্ডোক্রিন টিউমারে ভুগছিলেন তিনি। গতকাল হঠাৎ করে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করায় মুম্বাইয়ের আম্বানি হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে তাঁর পরিবার। রাতে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল। আর আজ সকালেই আসে দুঃসংবাদ।

Advertisements

Advertisements

২০১৮ সালের ৫ই মার্চ তিনি নিজে ট্যুইট করে তাঁর রোগের কথা বলেন। ২০১৮ সালের ১৬ ই মার্চ আরও একটি ট্যুইট করেন তিনি। “আমার নিউরোএন্ডোক্রাইন টিউমারের চিকিৎসা চলছে। কঠিন হলেও প্রচুর শুভেচ্ছা আশীর্বাদে আমি আশাবাদী। আরেকটা কথা হল নিউরো মানেই ব্রেন নয়। গুজব ছড়াচ্ছে ব্রেন টিউমারের। জানতে গুগোল করতে পারেন। আমার আশা আমি শীঘ্রই ফিরব।”

Advertisements

আশাবাদী ছিলেন এই কঠিন রোগকে পরাজিত করে সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। কিন্তু আর পারলেন না। আজ সকালেই তিনি জান্নাতবাসী হন। বিখ্যাত এই অভিনেতার থেকে আমাদের আরও অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। কিন্তু হারালাম আমরা তাকে!

বলিউডের প্রত্যেকটি মানুষ এই অভিনেতার চলে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে চলে গেলেন তিনি এক বিরল রোগে। হ্যাঁ, এই রোগটি যে বিরল ইরফান ট্যুইট করে জানিয়েছিলেন, হাসপাতাল থেকে ট্যুইট করে তিনি লিখতেন, এই রোগটি একটি বিরল রোগ। এই রোগের সমাধানের জন্য সেরকম কোনো গবেষণা আজ অব্দি হয়নি। যে জন্য তাঁকে ট্রায়াল এন্ড এরোর মেথডের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রথমে এই রোগের কথা শোনার পর তিনি আতঙ্কিত হয়েছিলেন। তবে এখন তিনি বুঝতে পেরেছেন যে তার হাতে কিছুই নেই‌। তিনি যেন একটি বিশাল সমুদ্রের মাঝে এসে পড়েছেন। একজন নাবিক হিসেবে তিনি স্রোত বরাবর এগিয়ে চলেছেন শুধু। যতদিন না ডুবে যাচ্ছেন ততদিন অবধি তিনি সৈনিক।

একজন সৈনিকের মতোই লড়াই করে গেছিলেন তিনি। লাখ লাখ দর্শকের ভালোবাসায় ছিল তার অগাধ আস্থা। এই মানুষগুলিরর শুভকামনা জড়িয়ে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি রাখতেন তাই তিনি ট্যুইট করে লিখেছিলেন, পরিচিত-অপরিচিত বিভিন্ন মানুষের প্রার্থনাই এখন তাঁর বেঁচে থাকার শক্তি।

২০১৯ সালে ভারতে ফিরে আসেন তিনি আংরেজি মিডিয়াম ছবির শ্যুটিং করতে। কিন্তু ছবির প্রমোশনে থাকতে পারেন না এই রোগের কারনে। ট্রেলার রিলিজের সময় তিনি বলেছিলেন, বন্ধুরা আমি ইরফান। আজ আপনাদের সাথে নেই আবার আছিও। আপনারা বিশ্বাস করুন যতটা ভালবেসে এই ছবির কাজ করেছিলাম ঠিক ততখানি ভালোবাসা নিয়ে এই ছবির প্রমোশন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু উপায় নেই। শরীরে রোগ বাসা বেঁধেছে। এরপর খানিক থেমে বলেছিলেন, ‘আমার জন্য অপেক্ষা করুন।’

তিনি যে ফিরে আসবেন এ বিশ্বাস তাঁর ছিল। বিশ্বাস ছিল আমাদেরও। কিন্তু ফিরে আর এলেন না। আমাদের অপেক্ষা শেষ হয়ে গেল। স্ত্রী সুতপা এবং দুই ছেলেকে ফেলে রেখে তিনি পাড়ি দিলেন অনন্তের জগতে। ছেলে এবং স্ত্রীর জন্যই বাঁচতে চেয়েছিলেন তিনি।

একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “সুতপার ব্যাপারে আমি আর কি বলবো। ২৪ ঘন্টা ও আমার পাশে আছে। আজ যে আমি সুস্থ হয়েছি। মনোবল ফিরে পাচ্ছি। সে সবটাই ওর অবদান অবদান। এই অবদান বলে বোঝানোর নয়।ওর জন্যই এখন আমি বাঁচতে চাই।”

কিন্তু বলিউডের অন্যতম সেরা এই অভিনেতা যে রোগে ভুগছিলেন সেই নিউরোএন্ডোক্রিন টিউমার আসলে কী? কী বা উপসর্গ এর? আর এই টিউমারে বাঁচার সম্ভাবনাই বা কতটা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিউরোএন্ডোক্রিন টিউমার একটি বিরল রোগ। এই টিউমার আসলে এন্ডোক্রিন গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রের কোষ থেকে জন্মায়। এই টিউমার থেকে এক রকমের হরমোন নিঃসৃত হয়। ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, অন্ত্রে এছাড়াও শরীরের যে কোন জায়গায় হতে পারে এই টিউমার। হরমোন ক্ষরণকারী কোষ থেকে এই টিউমার তৈরি হওয়ার কারণে এটি নিজেও হরমোন ক্ষরণ করতে পারে। আসলে এই টিউমার থেকে সেরোটোনিন নামে এক রকমের হরমোন নিঃসৃত হয়। এর ফলে শরীরে নানারকম উপসর্গ দেখা যায়। এই উপসর্গগুলি হলো হুঠ করে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, শরীরের প্রদাহ তৈরি হওয়া, ত্বকের সমস্যা, হৃদ স্পন্দন আচমকা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি। অন্ত্রে এই টিউমার বেশি হয়। অন্ত্রের ক্ষুদ্রান্তে এই ধরনের টিউমার হলে তাকে বলা হয় কার্সিনয়েড টিউমার। এই টিউমারের কোষ সারা শরীরে যদি ছড়িয়ে পড়ে তবে বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম বলা যেতে পারে। তবে সাধারণভাবে দেখা যায় যে ৬০ বছরের উপর বয়স হলে সেক্ষেত্রে রোগীরা পাঁচ বছর বেঁচে থাকেন এই রোগে। ‌

Advertisements