প্রসূন কান্তি দাসঃ রাম সেতুর রহস্য ভেদ! উদ্ধার করল ISRO। রাম সেতু (Ram Setu) ভারতের পৌরাণিক কাহিনীর সাথে সংযুক্ত একটি ঐতিহাসিক সেতু। যার গঠন এবং টিকে থাকা সবকিছুই রহস্যজনক। অনেকদিন ধরেই এই রহস্যের সমাধানে উঠে পড়ে লেগেছিল নাসা এবং ইসরোর গবেষকরা। শেষমেষ গবেষণায় সফলতা পেল তারা। নাসার আইসিইস্যাট টু স্যাটেলাইটটিকে ব্যবহার করে সমুদ্রের নিচে রাম সেতুর মানচিত্র তৈরি করা হলো। মানচিত্র তৈরি করেছে ইসরোর হায়দ্রাবাদ এবং যোধপুর ন্যাশনাল রিমোট সেন্টারের গবেষকরা। ২০১৮ সাল থেকে চলছে গবেষণা। শেষমেশ ২০২৩ সালে এসে স্যাটেলাইটের সাহায্যে রাম সেতুর ১০ মিটার রেজলিউশনের মানচিত্র তৈরি করা সম্ভব হয়েছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশনের পক্ষে।
রাম সেতুর গঠন নিয়ে একটু মতবিরোধ রয়েছে। ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণে উল্লেখ রয়েছে রাম সেতুর। সেখানে বলা হয়েছে মাতা সীতাকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে শ্রীলঙ্কায় যাবার জন্য ভগবান রাম বানর সেনার সাহায্যে তৈরি করেন রাম সেতু। কিন্তু অনেকেই বলেন এই রাম সেতু (Ram Setu) প্রাকৃতিকভাবে তৈরী হয়েছে। এখানে ভগবান রামের কোন হাত নেই। গবেষণা করতে গিয়ে দেখা গেছে রাম সেতুর ৯৯.৯৮ শতাংশ অংশই নিমজ্জিত রয়েছে অগভীর অথবা অতি অগভীর জলের তলায়। মাত্র ০.০২ শতাংশ সেতু জলের উপর ভেসে থাকতে দেখা যায়। গবেষণা করতে গিয়ে আরো জানা গেছে, সম্পূর্ণ সেতুটি জুড়ে রয়েছে ১১ টি চ্যানেল। যার মধ্যে দিয়ে জল প্রবাহিত হয়। এই চ্যানেলগুলিই রাম সেতুকে এত বছর ধরে অক্ষত থাকতে সাহায্য করেছে। সমুদ্রের ঢেউ রাম সেতুর কাঠামোর কোন ক্ষতি করতে পারেনি।
গবেষক দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন গিরিবাবু দন্ডাবাথুলা। গবেষণা করতে গিয়ে তারা দেখেন রাম সেতুর (Ram Setu) দুই ধারের তির্যক ঢালে সামঞ্জস্যতা নেই। পকপ্রনালী এবং মান্নার উপসাগরের জলের বস্তুগত শক্তির পার্থক্য থেকেই এই অসামঞ্জস্যতার প্রমাণ পাওয়া যায়। কিন্তু এই মুহূর্তে আলোচনার মূল বিষয় হলো, রাম সেতু প্রাকৃতিকভাবে নাকি কৃত্রিমভাবে তৈরি হয়েছে? ইসরোর বিজ্ঞানীদের মতে অবশ্য রাম সেতু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট। ভারতের ধনুশকোডি থেকে শ্রীলংকার মধ্যে জলের নিচে স্থলভাগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার একটি মাধ্যম হলো রাম সেতু। এই সেতুর দুপাশে প্রায় দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকা রয়েছে। যা ভীষণভাবেই ঢেউ খেলানো। জলের মধ্যে অতি অগভীর জায়গাগুলির মাঝে মাঝে আচমকাই রয়েছে গভীর খাদ।
আরও পড়ুন ? Cooking Gas: জলের দরে রান্নার গ্যাস দেবে রাজ্য সরকার, নবান্নে হয়ে গেল বৈঠক
রাম সেতু (Ram Setu) সম্পর্কিত মানচিত্র তৈরি করতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে ইসরোকে। প্রথমদিকে স্যাটেলাইটের আলোর সাহায্যে রাম সেতুর উপরের যে অংশটি দেখা যায় সেই অংশটির একটি মানচিত্র তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে জলে নিমজ্জিত অংশের মানচিত্র তৈরি করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন গবেষকরা। এই সেতু সংলগ্ন এলাকায় জলস্তর খুব একটা গভীর নয়, কোথাও এক মিটার অথবা কোথাও ১০ মিটারের গভীরতা রয়েছে। তাই এই এলাকায় জাহাজে করে ঘুরে বেড়ানো প্রায় অসম্ভব। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় সাধারণ জলযান ব্যবহার করা যায় না। আবার জলে না নামতে পারলে সেতুর পুঙ্খানুপুক্ত তথ্য গ্রহণ করাও সম্ভব হবে না। সব দিক চিন্তা করে শেষ পর্যন্ত নাসার স্যাটেলাইটটিকে কাজে লাগানো হলো। নাসার এই স্যাটেলাইটের আলো সমুদ্রের তলায় ৪০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত যেতে পারে। সেই স্যাটেলাইটের আলো ফেলেই তৈরি করা হয়েছে রাম সেতুর নতুন মানচিত্র।
Ram Setu: ISRO's latest study reveals the most detailed map of the submerged Ram Setu confirming it as a continuous ridge from Dhanushkodi to Talaimannar. This 29km limestone chain is 99.98% underwater! pic.twitter.com/zzsphQTx3m
— Ishaan Saxena (@irony_ishaan) July 9, 2024
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রামসেতুর উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণে। পরবর্তীতে খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে ভারতে আসেন পারস্যের বাসিন্দারা। তারা ভারতে এসে এই সেতুর নতুন নামকরণ করেন। তারা এসে এর নাম দেন সেতু বান্ধাই বা জলের উপর ভেসে থাকা সেতু। রাম সেতু (Ram Setu) সম্পর্কিত একটি ঐতিহাসিক তথ্য লিপিবদ্ধ রয়েছে রামেশ্বরম মন্দিরের ইতিহাসে। তামিলনাড়ুর এই মন্দিরটির ইতিহাসে উল্লেখিত রয়েছে যে রাম সেতু ১৪৮০ সাল পর্যন্ত সকলের চোখের সামনে সমুদ্রের উপরেই অবস্থিত ছিল। হঠাৎই একটি বড় আকারের সাইক্লোন দেখা দেয়। এবং সেই স্লাইক্লোনের ফলেই রাম সেতুর বেশিরভাগ অংশ জলের তলায় ডুবে যায়।