পরিযায়ী শ্রমিকরা জামাই আদর চাইছে, মন্তব্য সাংসদ শতাব্দী রায়ের

চন্দন কর্মকার ও হিমাদ্রি মন্ডল : বীরভূম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ শতাব্দী রায় শনিবার বীরভূমের সাঁইথিয়া শহরে এসে মন্তব্য করেন ‘পরিযায়ী শ্রমিকরা সংখ্যায় হাজার হাজার, সবাইকে জামাই আদরে রাখা মুশকিল’। শতাব্দি রায়ের এহেন মন্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বললেন বীরভূম জেলায় বিজেপি সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল ও কংগ্রেস সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী।

শতাব্দী রায় এদিন সাঁইথিয়া আসেন বিভিন্ন এলাকার ব্লক সমষ্টি আধিকারিকদের সাথে দেখা করতে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার, করোনা টেস্ট ইত্যাদি নিয়ে পর্যালোচনা করার জন্য। পাশাপাশি পরবর্তী পর্যায়ে ১০০ দিনের কাজ কিভাবে মানুষের কাছে ভালভাবে পৌঁছে দেওয়া যায় ইত্যাদিও পর্যালোচনা করার জন্য। আর এর পরেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ‘জামাই আদর’ মন্তব্য করেন। যার পরেই তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে ঠিক কি বলেছেন শতাব্দি রায়?

শতাব্দি রায় বলেন, “হাজার হাজার লোকের প্রবলেম তো, সবাই যদি জামাই আদর চায় তাহলে মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। মাছ দিলে বলছে মাংস হয়নি, মাংস দিলে বলছে ডিম হয়নি। এখন সবাই অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে, এতদিন পরে ওখান থেকে ফিরছে, বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হচ্ছে। আপনার বাড়িতে যদি একজন আসে যে যত্নটা করতে পারবেন, হাজার লোক এলে তা করতে পারবেন না। সেজন্য এই ক্ষোভ-বিক্ষোভগুলি নিজস্ব তৈরি করা হয়েছে অথবা এখন তো বাঁচার লড়াই তাই বেশ কিছুটা মানিয়ে নিতে হবে। তারা বাড়ি যাওয়ার জন্য অস্থির হচ্ছে বলে এগুলি করছে।”

আর শতাব্দি রায়ের এমন মন্তব্যকে দুর্ভাগ্যজনক বলে বীরভূম জেলা বিজেপি সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল জানান, “বীরভূম জেলা সাংসদ হিসাবে তিনি ন্যূনতম কি করেছেন? এতদিন লকডাউন চলার পর আজ তাঁকে সাঁইথিয়ায় দেখা গেল। উনি পরিযায়ী শ্রমিকদের করুন অবস্থা জানেন না। উনি একজন সাংসদ, উনি ঠাণ্ডা ঘরে থাকেন, ঠান্ডা গাড়িতে ঘোরাফেরা করেন। পরিযায়ী শ্রমিকরা বাইরে থেকে এসে নিজেরাই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকতে চেয়েছেন। কিন্তু এমন অবস্থা দেখা গিয়েছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারগুলির যেখানে পাখা নেই, আলো নেই আর যত লোক থাকার কথা তার চারগুণ লোককে রাখা হচ্ছে। এমনকি খাবার নেই, সকালে ঢুকে বিকালে খাবার পাচ্ছে। এমন মন্তব্যে বীরভূম জেলার মানুষকে অপমান করা হয়েছে।”

বীরভূম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সঞ্জয় অধিকারী জানান, “পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে একজন সাংসদ হিসেবে যে মন্তব্য করেছেন তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বীরভূম জেলার পরিচয় শ্রমিকরা জল পাচ্ছে না, খাবার পাচ্ছে না। আর এমত অবস্থায় একজন সাংসদ হয়ে ওই সকল পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে যে মন্তব্য করলেন তার তীব্র নিন্দা করছি আমরা।”

পাশাপাশি সঞ্জয় অধিকারী শতাব্দি রায়ের পদত্যাগ দাবি করে জানান, “এক বছর আগে এই পরিযায়ী শ্রমিকরাই উনাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছিল। এই লকডাউনে বীরভূমের মানুষের কি অবস্থা তিনি একবারও এসে পাশে দাঁড়াননি। আমি বীরভূমের বাসিন্দাদের বলবো এই সাংসদকে বয়কট করুন, সামাজিকভাবে বয়কট করুন। পরিযায়ী প্রার্থীদের বয়কট করুক বীরভূমের বাসিন্দারা।”