Jagannath Temple: পুরীর জগন্নাথদেবের সম্পত্তির পাহারাদার কে জানেন, তিনি কিন্তু মানুষ নন

পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের (Jagannath Temple) বিশাল ধনরাশির সিন্দুকের চাবির কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। বিগত ৫ বছর ধরেই এই চাবির কোনো খোঁজ নেই। এই চাবির খোঁজে ৫ বছর আগেই শুরু হয়েছিল তদন্ত। এমনকি কমিশন গঠন করেছিল ওড়িশার (Odisha) নবীন পট্টনায়কের সরকার। কমিশন তদন্ত রিপোর্ট জমাও দিয়েছে। কিন্তু, ওড়িশার নবীন পট্টনায়কের (Naveen Patnaik) সরকার এই তথ্য কখনোই সামনে আনেননি। তবে এই বিষয় নিয়ে এবার কড়া হয়েছে ওড়িশা হাইকোর্ট। কিন্তু চলতি বছরের জুলাই মাসের মধ্যেই জগন্নাথ মন্দিরের রত্নভাণ্ডারের চাবি বিষয়ক তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছে ওড়িশা হাইকোর্ট (Odisha High Court)।

অন্যদিকে, ওড়িশা হাইকোর্ট যখন চাবি নিখোঁজের ঘটনায় জবাব তলব করেছে তখনই জগন্নাথ মন্দিরের (Jagannath Temple) বিপুল রত্নভাণ্ডার সম্পর্কে এক গোপন রহস্য প্রকাশ্যে চলে এসেছে। জগন্নাথদেবের ধনরাশিকে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়- অন্তর্ভাণ্ডার ও বহির্ভাণ্ডার। দুটি ভাণ্ডার মিলিয়ে রয়েছে ৭টি ঘর। জগন্নাথদেব, বলভদ্র ও সুভদ্রাকে যেসব অলঙ্কার পরানো হয়, সবই থাকে বহির্ভাণ্ডারে। এখানে শুধু সেবায়তরা ঢুকতে পারেন। জগন্নাথদেবের মাথার যে ব্রহ্মজ্যোতি হীরা থাকে, এছাড়া বলভদ্রের নীলা ও সুভদ্রার মাথার মাণিক সবকিছু এখানেই থাকে। অন্তর্ভাণ্ডারে রয়েছে এর কয়েক গুণ বেশি মহামূল্য রত্ন। সেই কুঠুরি কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকার। দক্ষিণ ভারতের যেকোনো মন্দিরের ধনসম্পত্তি থেকে অনেক গুণ বেশি সম্পত্তি আছে পুরীর এই জগন্নাথ দেবের মন্দিরে।

রাজা গজপতি রামচন্দ্রের ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে যে তালিকা আছে সেটা অনুসারে, ওই রত্নভাণ্ডারে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার সোনার মুকুট সহ প্রায় ১৫০টি সোনার অলঙ্কার সহ ৮৩৭টি জিনিস রয়েছে। জানলে অবাক হবেন মোট সোনার ওজন ১৫ কেজির বেশি। সেই তালিকা করার পর প্রায় ১০০ বছর পার হয়ে গেছে। এর মাঝে অবশ্যই অলঙ্কারের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বিপুল পরিমাণ। রত্নভাণ্ডারে ঢুকতে না পারায় অলঙ্কারের সঠিক পরিমাণ এখন স্পষ্ট নয়। তবে রত্নভাণ্ডারের বিপুল রত্নের মাত্র ১০ শতাংশ জগন্নাথদেবকে পরানো হয় বলে জানা গিয়েছে। সেই জন্য বিপুল রত্নভাণ্ডারে ঢুকতে শরীরের সমস্ত অলঙ্কার, পোশাক খুলে শুধু গামছা পরে পরিদর্শকদের ঢুকতে হয়।

১৯৭৮ সালে শেষবার পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের (Jagannath Temple) রত্নভাণ্ডারের খতিয়ান নেওয়া হয়েছিল। তখন এই বিপুল রত্নভাণ্ডার খোলা হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে জগন্নাথদেবের মাথার রত্নচিতা ভেঙে যায়। সেই সময় শেষ রত্নভাণ্ডার খুলে সেখান থেকে কিছু পরিমাণ সোনা নেওয়া হয়েছিল। তারপর আর রত্নভাণ্ডার খোলা দরকার হয়নি। পরবর্তীকালে ২০১৮ সালে রত্নভাণ্ডারের মেঝে, ছাদ, দেওয়ালের অবস্থার যাচাই করার জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া-কে দরজা খোলার নির্দেশ দেয় ওড়িশা হাইকোর্ট। কিন্তু, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ওড়িশা সরকার ও জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিনিধিরা কেউ রত্নভাণ্ডারে পৌঁছাতে পারেনি বরং যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে আসেন। আসলে তাঁরা ভিতরে ঢুকতেই পারেননি। ঠিক সেই সময় চাবি হারিয়ে যাওয়ার কথাটি প্রকাশ্যে এসেছিল।

অনেকেই হয়তো জানেন না যে,পুরীর জগন্নাথদেবের রত্নভাণ্ডার খোলার জন্য দরকার মোট ৩টি চাবি। ১টি চাবি থাকে গজপতি রাজার কাছে, ১টি চাবি থাকে মন্দিরের সেবায়ত ভাণ্ডার মেকাপ-এর কাছে। আরেকটি অর্থাৎ তৃতীয় চাবি থাকে পুরীর কালেক্টর দায়িত্বে। এই তৃতীয় চাবিটি পাওয়া যাচ্ছে না। এই ছবিটি জমা করার কোন প্রমাণ নেই। কিন্তু চাবি হারিয়ে গেলেও প্রভু জগন্নাথের রত্নভাণ্ডারের পাহারা দিচ্ছে একাধিক বিষধর সাপ। গল্পের মত শুনতে লাগলেও ২০১৮ সালে শেষবার যখন রত্নভাণ্ডার খুলতে গিয়েছিলেন সরকারি প্রতিনিধি ও জগন্নাথ মন্দিরের (Jagannath Temple) সেবায়তরা, তখন তাঁরা চাক্ষুষ দেখতে পেয়েছিলেন ওই বিষধর সাপদের। এমনকি রত্নভাণ্ডারে পৌঁছনোর জন্য সরকারি প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছিলেন সাপের ওঝাও। সম্প্রতি রঘুবীর দাসের তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট কেন প্রকাশ্যে আসেনি, তা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা করে ওড়িশা হাইকোর্টে। সেই মামলার ভিত্তিতেই এবার এই বিষয়ে নবীন পট্টনায়ক সরকারের জবাব তলব করেছে ওড়িশা হাইকোর্ট। চলতি বছরের ১০ জুলাইয়ের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরই সাথে ২০১৮ সালে রত্নভাণ্ডারের নকল চাবি কী ভাবে মিলল, তা নিয়ে জবাব তলব করেছে হাইকোর্ট। সকলে অপেক্ষা করে আছে পট্টনায়ক সরকারের জবাবের জন্য।