Mid Day Meal: দুর্গাপুরের সরকারি স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিল দিয়ে নজির গড়ল

Prosun Kanti Das

Published on:

Advertisements

Mid Day Meal: সাধারণত অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা মিড ডে মিল পায় স্কুল থেকে। কিন্তু এই স্কুলের চেহারা একেবারে আলাদা, শুধুমাত্র অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নয় একেবারে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের মিড ডে মিল দেওয়া হয় এখানে। অবাক করার বিষয় হল কোনরকম কেনা সবজি দিয়ে নয় স্কুলের প্রাঙ্গণে চাষ করা সবজি দিয়ে রান্না করা হয় মিড ডে মিলের রান্না। দুর্গাপুরের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরকারি স্কুল যেন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে। রাজ্যের নামীদামি স্কুল যা করতে পারেনি তাই করে দেখাল দুর্গাপুরের নিউ টাউনশিপ থানা এলাকার জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠ ৷ বিদ্যালয়ে মিড ডে মিলের জন্য যে সবজি দরকার হয় তা নিজের হাতে চাষ করে পড়ুয়ারা। সেই পুষ্টিকর খাবার খায় গড়ে প্রত্যেকদিন প্রায় ৬০০ জন ছাত্রছাত্রী ৷

Advertisements

এই রাজ্যে যেখানে প্রায় উঠে আসে মিড ডে মিলে দুর্নীতির অভিযোগ সেখানে দাড়িয়ে এই স্কুলটি যেন এক নজির সৃষ্টি করেছে। একেবারে ব্যতিক্রমী চিত্র দুর্গাপুর- ফরিদপুর ব্লকের অখ্যাত এক পাড়াগাঁয়ের উচ্চ বিদ্যালয়ে । জেমুয়া ভাদুবালা বিদ্যাপীঠে বিশেষ কিছু নিয়ম পালন করে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে পড়ুয়ারা। প্রতিদিন সকাল দশটায় স্কুলে পৌঁছে তারা। স্কুলের প্রার্থনা শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে তারা একসঙ্গে স্কুলের বাগানে সবজির পরিচর্যা করে । সেই সবজি কাজে লাগে মিড- ডে মিলের (Mid Day Meal) রান্নার জন্য।

Advertisements

এখন চলছে শীতের মরশুমে, তাই বাজারে আলু, পেঁয়াজ, টমেটো,ফুলকপি বাঁধাকপি, পালং শাক, পেঁয়াজ সহ প্রায় কুড়ি রকমের সবজির চাষ করা হয়েছে। স্কুলে রয়েছে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১২০০ পড়ুয়া। সরকারি নিয়ম অনুসারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিলের খাবার খাওয়ানোর নিয়ম। কিন্তু এখানে একেবারে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়াদের খাওয়ানো হয় মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) খাবার। সোমবারের দিনটি বিশেষভাবে পালন করা হয়েছিল এই বিদ্যালয়ে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে চক্ষু পরীক্ষা, সঙ্গে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। দুপুরে শুধু পড়ুয়াদেরই নয়, অভিভাবকদেরও পাত পেড়ে খাওয়ানো হয়। স্কুলের বাগানের সবজি হেঁসেলে যোগান দিয়েছে । স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা এতটাই ভালো যে শুধুমাত্র পড়াশোনা নয় এখানে শেখানো হয় সবজি চাষ। ফলে ছাত্রছাত্রীরা নতুন কিছু শিখতে পারে। এখানে গ্রুপ করে বিভিন্ন কাজ করা হয়। সবাই একসঙ্গে সবজি গাছগুলির পরিচর্যা করে খুশি হয়।

Advertisements

আরও পড়ুন:DubrajpurDubrajpur: উপহার দেওয়ার ইচ্ছেটাই আসল কথা! নতুন বছরের আগেই যা করলেন এই ব্যক্তি

শুধু পড়ুয়ারা এই কাজ করে তা কিন্তু নয়, বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকারা পর্যন্ত সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জয়নুল হক বলেন, পড়ুয়ারা শিক্ষক-শিক্ষিকার সবাই মিলে একত্রিত হয়ে এই কাজ করি। স্বাস্থ্য ঠিক রাখাই হলো মূল উদ্দেশ্য। স্বাস্থ্য ঠিক রাখলেই পড়ুয়ারা সুরক্ষিত থাকবে। এখানে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিলের (Mid Day Meal) খাবার দেওয়া হয়। পড়ুয়ারা যাতে স্কুলমুখী হয় তার জন্যই এই প্রচেষ্টা। এই শীতের মরশুমে চাষ করা হয়েছে দুই হাজার ফুলকপি, একহাজার বাঁধাকপি, নানা রকমের শাকসবজি। এছাড়াও সরষেও চাষ করা হয়েছে। মিড ডে মিলের সবজি থেকে শুরু করে তেলের জোগান সমস্তটাই দেওয়ার চেষ্টা করা হয় এই বাগান থেকে। সরকারের পক্ষ থেকেও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সাহায্যের হাত। তবে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এগিয়ে দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের।

পড়াশোনার বাইরেও ছাত্রছাত্রীদের অন্যান্য কাজে যুক্ত করতে পারার আসল কৃতিত্ব কিন্তু প্রধান শিক্ষকের। সারা স্কুলে তিনি যেন একপ্রকার আশ্রমের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। স্কুলের এক শিক্ষিকা চৈতালি রায় বলেন, “প্রধান শিক্ষক হিসেবে জয়নুল হক এই স্কুলে যোগ দেওয়ার পর আমরা অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকারা বুঝতে পারলাম বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এতকিছু চাষ করা যায়। স্কুলের মধ্যে এই যে সবজি চাষ, গরমের ছুটিতে ছাত্র-ছাত্রীদের রং তুলি নিয়ে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন দেওয়ালে ছবি আঁকা, নাচ গান, এ সমস্ত কিছুই একটা আশ্রমের পরিবেশ এনে দিয়েছে স্কুলে। ছাত্র-ছাত্রীরা এর ফলে নতুন কাজে এক উদ্যম ফিরে পায়। এখানকার উৎপাদিত শাকসবজির গুণগতমান কিন্তু খুবই ভালো। স্বাভাবিকভাবে স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটবে। বর্তমানে সবার ভালোলাগার জায়গা এই বিদ্যালয় ।“

Advertisements