Jhuku Bauri: সম্বল বলতে ছিল শুধুমাত্র পৈতৃক সামান্য জমি তাও তিনি দান করে দিলেন গ্রামের স্কুলের পড়ুয়াদের স্বার্থে। তার এই কাজ সত্যিই অনুপ্রেরণা যোগাবে বহু মানুষকে। জানলে অবাক হয়ে যাবেন যে স্কুলে জমি দান করার পরেও স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে নিজে ভাঙা ঘরে কোনও মতে মাথা গুঁজে রয়েছেন। আজকের প্রতিবেদনে যার সম্পর্কে আলোচনা করা হবে তিনি হলেন নিতুড়িয়ার বিন্দুইডি গ্রামের ঝুকু বাউরি। ঝুকু হলেন পেশায় একজন দিনমজুর। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন মহল থেকে শুরু করে শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের দরজায় দরজায় ঘুরেছেন বাড়ির জন্য। কিন্তু ঘর করার স্বপ্নপূরণ হয়নি তার।
গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সৌমেন্দ্রনাথ মণ্ডল এই বিষয়ে জানিয়েছেন যে, স্কুলের পড়ুয়াদের মিডডে মিলের ডাইনিং শেড না থাকায় কখনো খেতে হতো খোলা জায়গায় নয়তো গাছের তলায়। শতাধিক পড়ুয়ার এই পরিস্থিতি মেনে নিতে পারেনি ঝুকুর (Jhuku Bauri) । এক অভাবনীয় কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন তিনি। সম্বল বলতে ছিল স্কুলের পেছনে থাকা তাঁর পৈতৃক সাড়ে তিন ডেসিমেল জমি। সেটাও দেওয়ার ইচ্ছার কথা জানান স্কুলকে।বছর ছয়েক আগে অফিসে এসে নিজের ইচ্ছার কথা জানান তিনি।
বিদ্যালয়কে জমি দেওয়ার আগে তার শর্ত ছিল একটাই, এই জমিতে শুধুমাত্র পড়ুয়াদের খাবার খাওয়ার জন্য যেন ছাউনিই তৈরি করা হয়। তার (Jhuku Bauri) মতো একজনের মুখ থেকে এই প্রস্তাবের কথা শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল সকলেই। কোনো দিনমজুর যে এমন প্রস্তাব রাখতে পারে তা কখনো কেউ ভাবতেও পারেনি। যার পক্ষে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর সে খুব সহজে নিজের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে দিল এই বিদ্যালয়কে। বিভিন্ন মহলে তদ্বিরের পরে অর্থের সংস্থান করে ঝুকুর দেওয়া জমিতেই ডাইনিং শেড তৈরি করা হয়েছে।
ঝুকুর (Jhuku Bauri) gস্ত্রী পদ্মা বলেছিলেন, নিজেদের বাড়ির অবস্থা যতদিন যাচ্ছে ততই খারাপ হচ্ছে। এমনকি বৃষ্টি হলেই ফুটো ছাদ থেকে জল পড়ে। ত্রিপল জোগাড় করে কোনরকমে ছাদ ঢেকে জলের হাত থেকে বাঁচছে তারা। শুধু যে ছাদ থেকে জল পড়ে তা নয় শীতের কনকনে হাওয়া রোখার সাধ্য নেই তাদের ভাঙা দরজা জানলার। এই কাঁচা নির্মাণ করা হয়েছিল বহু বছর আগে, অভাবের তাড়নায় এখন এই বাড়ির প্রায় জরাজীর্ণ অবস্থা। শরীরে সেভাবে বল না পাওয়ার জন্য কাজ ঠিকমতো করতে পারে না ঝুকু(Jhuku Bauri) । সংসার কোনরকমে চলছে ছেলের সামান্য আয় দিয়ে। বাড়ি ঠিক করার মত অর্থ তাদের কাছে নেই।
আপনিও কি আবাস যোজনায় বাড়ি পাননি? ঝুকুর (Jhuku Bauri) কথা অনুযায়ী, আবাস যোজনার বাড়ি পেয়েছে অনেক মানুষই, কিন্তু তার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে কোনভাবে ঠাঁই খোঁজার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে তাকে। সরকার থেকে আবাস যোজনার যে তালিকা প্রকাশিত হয় তাতে আদৌ তার নাম আছে কিনা সেটাও জানা নেই। গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য দাবি জানিয়েছে যে, প্রথম তালিকায় ঐ ব্যক্তির কোনোরকম নাম নেই। প্রথম তালিকায় নাম নেই ঝুকুর কিন্তু পরের তালিকাতে আছে কিনা সে বিষয়ে এখন অব্দি কেউ বলতে পারছে না।
স্থানীয় দীঘা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সাবিত্রী গরাঁই বলেন, আবাস যোজনার তালিকা তৈরি হওয়ার সময় তিনি ছিলেন না এই কাজে। কেন ওই ব্যক্তি আবাস যোজনার সুবিধা ভোগ করতে পারবে না তা বলতে পারছে না কেউ। আশা করা যাচ্ছে বিষয়টি গুরুত্ব নিয়ে দেখা হবে। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শান্তিভূষণপ্রসাদ যাদবও জানান, স্কুলের উন্নয়নে জমি দান করা ওই দুঃস্থ ব্যক্তির আবাস যোজনাতে বাড়ি পাওয়া একান্ত দরকার ছিল। যাতে ঝুকু তার স্বপ্নের বাড়ি পায় সেই চেষ্টা করবে সকলেই। নিতুড়িয়ার বিডিও বলেছেন যে, ওই ব্যক্তি যদি আবাস যোজনায় আবেদন করে থাকেন বা নতুন করে আবেদন করেন, তাহলে ভবিষ্যতে বাড়ি বাড়ি পরিষেবার সুবিধা লাভ করতে পারবেন