লাল্টু : বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়ালজুড়ি গ্রামের ভুবন বাদ্যকরকে এখন চেনেন না এমন মানুষ পাওয়া মুশকিল। তার ভাইরাল হওয়া কাঁচা বাদাম গানের দৌলতেই তিনি এই পরিচিতি লাভ করেছেন। রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে ওঠার পাশাপাশি ধীরে ধীরে তিনি তার জীবনের শখ পূরণ করছেন। এই সকল শখ পূরণের মধ্যেই এবার তিনি তৈরি করাচ্ছেন তার স্বপ্নের বাড়ি।
কাঁচা বাদাম গান গেয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান থেকে তিনি যা রোজগার করেছেন তা দিয়েই একটি নতুন একতলা পাকা বাড়ি তৈরি করাচ্ছেন। বাড়িটিতে রয়েছে দুটি রুম এবং একটা বারান্দা রয়েছে। বারান্দা প্লাই দিয়ে নানান কারুকার্য করার কাজ চলছে, মেঝেতে বসানো হয়েছে মার্বেল এবং আলোর কারুকার্য থাকছে। পাশাপাশি অন্য দুটি রুমে মেঝে টাইলস দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সেখানেও আলোর কারুকার্য থাকছে। ভিতরের রুমগুলি প্লাস্টার সম্পন্ন হলেও এখনো রং করা বাকি রয়েছে। ঘরের বাইরের প্লাস্টার করাও এখনো বাকি, তবে কাজ চলছে জোরকদমে।
দরজা-জানলা নকশা সবই অ্যালুমিনিয়াম সিট দিয়ে তৈরি। দালান বাড়ির অর্থাৎ পাকা বাড়ির কাজ এখনো বাকি থাকলেও তিনি এখন নতুন বাড়িতেই উঠেছেন, কারণ পুরোনো জীর্ণ প্রায় খড়ের বাড়িটি এই বছর প্রথম ঝড়ের দাপটে নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে নতুন দালানবাড়িতে গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান না হওয়া সত্ত্বেও মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের অভাবেই নতুন বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছেন।
একসময় কাঁচা বাদাম বিক্রি করা ভুবন বাদ্যকর খড়ের চালা বাড়িতে থাকতেন। একটা রুমে কষ্টের মধ্যে দিন যাপন করতেন। কাঁচা বাদাম বিক্রি করে যা রোজগার হতো তাই দিয়েই সংসার চালাতেন তিনি। কোনোদিন ভাবেননি যে তিনি নিজের টাকা খরচ করে পাকা বাড়ি বানাবেন। সরকার থেকে তিনি বাড়ি করার জন্য ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। বাড়ির কিছুটা বাড়ির অংশ হয়। কিন্তু লকডাউনের কারণে বাকি টাকা খরচ করে ফেলায় আর বাড়ি করার স্বপ্ন বাস্তব হয়ে ওঠেনি।
এরপর কাঁচা বাদাম গান ভাইরাল হওয়ার পর ভাগ্য ফিরে যায় ভুবনের। হয় ভুবন জোড়া নাম। দেশের মাটি ছাড়িয়ে বিদেশেও ভাইরাল কাঁচা বাদাম গান। এই গানের জন্য তিনি বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন এমনকি টিভির রিয়েলিটি শো অনুষ্ঠানেও তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। এছাড়াও রাজ্য পুলিসের ডিজি তাঁকে ১ লক্ষ টাকা সহ তাঁকে সম্মানিত করেন। আর এই সব অনুষ্ঠানের টাকা সঞ্চয় করে তিনি তৈরি করছেন তাঁর নতুন স্বপ্নের বাড়ি।
ভুবন বাবু জানান, আজ মাথার ওপর ছাদ হয়েছে সেই কারণ আমি ভীষণ খুশি। সবই মানুষের আশীর্বাদের জন্য হয়েছে। তিনি তাঁর অনুষ্ঠানের টাকা সঞ্চয় করে এই বাড়ি তৈরি করছেন। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। নতুন বাড়ি নিয়ে গানও লিখে ফেলেছেন কাঁচা বাদাম গানের স্রষ্টা ভুবন বাদ্যকর, “ছিল না আমার বাসাবাড়ি এখন হল পাকা বাড়ি।”
প্রসঙ্গত, ভুবন বাদ্যকর নিজের শখ পূরণের জন্য মাস কয়েক আগে একটি সেকেন্ড হ্যান্ড চারচাকা গাড়ি কিনেছিলেন। কিন্তু সেই গাড়িটি তিনি চালাতে গেলে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এই গাড়ি নিয়ে নানান জায়গায় নানান টিপ্পনী শুরু হয়। তবে সম্প্রতি ভুবন বাধ্যকর সেই গাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন এবং সেই গাড়ি বিক্রির টাকাও এই বাড়ি তৈরীর কাজে লাগাচ্ছেন।