লাল্টু : তিনি এখন বিশ্ব মাতাচ্ছেন। এই লোকটি হলেন বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের লক্ষীনারায়নপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের কুড়ালজুড়ি নামে একটি অজ গাঁয়ের বাসিন্দা বাদাম বিক্রেতা ভুবন বাদ্যকর। তার গান যেমন এখন রাজ্য দেশ ছাড়িয়ে দেশ বিদেশে পাড়ি দিয়েছে, ঠিক তেমনি তাকেও দেখা যাচ্ছে সেলিব্রেটিদের সঙ্গে নাচানাচি করতে। তবে তা হলেও এখনো হাল ফেরেনি এই ভাইরাল বাদাম বিক্রেতার।
ভাইরাল এই বাদাম বিক্রেতার হাল ফেরেনি এমনটা দিন কয়েক আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছিলেন বীরভূমের পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। তিনি লিখেছিলেন, ‘যার গানে এখন গোটা বিশ্ব নাচছে, দুঃখের বিষয় হলো তার অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি।’ ভুবন বাদ্যকরকে সেই একই কথা এবার বলতে শোনা গেল দাদাগিরির মঞ্চে সৌরভকে।
দাদাগিরির মঞ্চে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে দাদাগিরি দেখানোর পাশাপাশি কাঁচা বাদাম গানের স্রষ্টা ভুবন বাদ্যকরকে এদিন লক্ষ্য করা যায় দাদার সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখের কথা ভাগ করে নিতে। আসলে এই সুখ-দুঃখের কথা ভাগ করে নেওয়ার প্রসঙ্গটি ওঠে মূলত সৌরভ গাঙ্গুলির একটি প্রশ্নের ভিত্তিতে।
সৌরভ গাঙ্গুলী দাদাগিরির মঞ্চে ভুবন বাদ্যকরকে প্রশ্ন করেন, ভাইরাল হওয়ার পর কি সংসারের হাল ফিরেছে? দাদা সৌরভের সেই প্রশ্ন শুনে উত্তরে ভুবন বাদ্যকর বলেন, “একটা ভাঙা ঘরের মধ্যে সবাই আছি। দাদা, বৌদি, তাদের ছেলে মেয়ে, বউ, বেটা, নাতি-পুতি, সবাই একটা ঘরেই আছি”। এই কথা শুনে স্বাভাবিকভাবেই অবাক হয়ে যান সৌরভ।
সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখের কথা ভাগ করে নেওয়ার সময় ভুবন বাদ্যকর আরও যোগ করেন, “ছোট থেকে খেটে খেয়েছি। সংসারে অভাব। প্রতিদিন কাজ পাওয়া যাচ্ছে না, একদিন খাটছি, পাঁচদিন বসে। এরপর বাদাম বিক্রি শুরু করলাম”।
সম্প্রতি ভুবন বাদ্যকর বীরভূমের ইলামবাজারের একটি মিউজিক সংস্থা গোধূলি বেলা মিউজিকের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। এই সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার পরিপ্রেক্ষিতে ভুবন বাদ্যকর তিন লক্ষ টাকা পাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই দেড় লক্ষ টাকা তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং বাকি দেড় লক্ষ টাকা দিন কয়েকের মধ্যে তুলে দেওয়া হবে। তবে যেভাবে দিনের পর দিন দরিদ্রতা মধ্য দিয়ে তার দিন কেটেছে তাতে এত সহজে যে তার হাল ফিরবে না সেটাই স্বাভাবিক। কারণ তার যে কিছুই নেই। রয়েছে কেবলমাত্র একটি ত্রিপল দিয়ে ঢাকা ভাঙ্গাচোরা মাটির বাড়ি। যেখানেই দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন তিনি।