করোনা মোকাবিলায় ম্যাজিক দেখাচ্ছে কেরল, সুস্থ বেশিরভাগ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতের প্রথম এই রাজ্যেই ধরা পড়েছিল করোনা সংক্রমণ। আজ থেকে প্রায় ১২৪ দিন আগে দেশে প্রথম কেরলে করোনা সংক্রমণ ধরা পরে চীনের উহান ফেরৎ এক ছাত্রের শরীরে। তারপর প্রথম রাজ্য হিসাবে দেশের সবথেকে বেশি করোনা সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা পৌঁছায় এখানেই। অন্য রাজ্যগুলি তখন সেভাবে কিছুই টের পায়নি। কিন্তু আর নয়, ম্যাজিকের মতো ৩৭০-এ সংখ্যাটাকে আটকে দেয় তারা। পরে আবার ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে পৌঁছাই ৫০০ তে। অর্থাৎ বর্তমানে এই রাজ্যে করোনা সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা ৫০০। যেখানে তারপরে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়া মহারাষ্ট্র, দিল্লি, তামিলনাড়ু, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, তেলঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ ও অন্ধ্রপ্রদেশের মত রাজ্যগুলি কেরলের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে কয়েকগুণ। তবে কেরলের ম্যাজিক এখানেই শেষ নয়। আরও রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় দুর্দান্ত সাফল্য দেখিয়েছে এই রাজ্য তা অনস্বীকার্য। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের পরিকল্পনা আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী কে.কে. শৈলজার অক্লান্ত পরিশ্রমে বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরেছে রাজ্য। প্রথম দফায় ৩৭০-এ সংক্রমণ থামিয়ে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরতে শুরু করে। বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন শিথিল হয়। কিন্তু লকডাউন শিথিল হতেই হঠাৎ করে গত মাসে সংক্রমণের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে। তবে দ্বিতীয় দফার সংক্রমণও তারা দক্ষতার সঙ্গে সামলে নেয়। দ্বিতীয় দফায় মোট সংক্রামিত ব্যক্তির সংখ্যা পৌঁছায় ৫০০ তে। অর্থাৎ প্রথম দফা থেকে বারে মাত্র ১৩০। এরপর গত তিনদিনে আর এই রাজ্য থেকে কোন সংক্রমণের খবর নেই।

আর ওই মোট সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে এখনো পর্যন্ত সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৪৬২ জন। যে সংখ্যা পথ দেখাচ্ছে দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিকে। হাসপাতলে এখন চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন মাত্র ৩৪ জন। আর এই রাজ্যে মৃতের সংখ্যাটাও নজির গড়ার মতো। মৃত মাত্র চারজন, যাদের মধ্যে অবশ্য রয়েছে একজন নবজাতক শিশু।

বর্তমান পরিসংখ্যানের বিচারে কেরলে সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৯২.৪%, যা এযাবৎ ভারত তো দূরের কথা বিশ্বের যেকোনো দেশের সামনে নজিরবিহীন। সুস্থ হওয়ার হার যেমন নজিরবিহীন, ঠিক তেমনি নজিরবিহীন মৃত্যুর হারও। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই রাজ্যে মৃত্যুর হার মাত্র ০.৮০%। যেখানে গোটা ভারতে মৃত্যুর হার ৩.৩৯%।

তবে কেরলের সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনো পর্যন্ত ওই রাজ্যে ২১,৭২৪ জনকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩৭২ জন রয়েছেন হাসপাতালে আর বাকিরা সকলেই বাড়িতে। বর্তমানে এই রাজ্যে এখন আর কোন হটস্পট নেই। তাই এই রাজ্য শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক মহলেও ‘কেরল মডেল’ উচ্চ প্রশংসিত।

তবে কেরলের এই সাফল্যের পিছনে যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ জানা গিয়েছে। যার প্রথমটি হলো টেস্টিং।রাজ্যে করোনা সংক্রমণ খুঁজে বের করতে একের পর এক টেস্টের পথ বেছে নিয়েছিল এই রাজ্য। আর দ্বিতীয়টি হলো অভিজ্ঞতা। কেরল এর আগেও অনেকবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। সম্মুখীন হয়েছে ‘নিপাহ’ ভাইরাসের সংক্রমণের। এই ভাইরাসের সংক্রমণে এই রাজ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর এই সকল অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই এই রাজ্য আজ এখনও পর্যন্ত জয় করেছে করোনাকে।