Know about the mysterious story behind Lokenath Baba’s picture: এখনকার যশোহর জেলা আর বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার বারাসত মহকুমার চৌরশী চাকলা গ্রামে লোকনাথ ব্রহ্মচারীর (Baba Lokenath Brahmmachari) জন্ম হয়েছিল ১১৩৭ বঙ্গাব্দ বা ইংরেজি ১৭৩০ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর পিতার নাম ছিল রামনারায়ণ ও মায়ের নাম ছিল কমলা দেবী। বহু পথ অতিক্রম করে তিনি প্রথমে আসেন কালীঘাটে, সেখানে এসে তিনি যোগ সাধনা শুরু করেন। এইভাবে গুরুর আদেশে বিভিন্ন স্থানে যোগ সাধনা ও ব্রত করে শেষ পর্যন্ত লোকনাথ ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন। ঢাকার বারোদি গ্রামের শ্রীলোকনাথের একটি প্রতিকৃতিকে ঘিরে এক রহস্য রোমাঞ্চকর ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায়।
বাবা লোকনাথের (Baba Lokenath Brahmmachari) বহু চেনা ছবিটির উৎস হলো একটি ফোটোগ্রাফ। এটি তুলেছিলেন দেশীয় রাজ্য ভাওয়ালের তৎকালীন রাজা। প্রায় ১৩০ বছর আগে সেই ফোটো থেকে একটি পেন্টিং তৈরির কথা ভাবেন ঢাকার বিখ্যাত নাগ পরিবারের প্রেমরঞ্জন নাগের স্ত্রী রেণুকা নাগ। ভাওয়ালের রাজার তোলা সেই ছবিটি রেণুকাদেবী দেখেন, যা ছিল নেহাতই ছোট— মাত্র ৩ ইঞ্চি বাই ৫ ইঞ্চি। পরবর্তীকালে রেণুকাদেবী ঢাকার এক প্রতিভাবান অথচ দরিদ্র শিল্পী দুর্গেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাবা লোকনাথের একটি পেন্টিং আঁকার বরাত দেন।
এরপর থেকেই শুরু হয় কিছু অদ্ভুত ব্যাপার। প্রথমেই দুর্গেশবাবু এ ফোর সাইজের একটি কাগজে প্রতিকৃতিটি আঁকতে শুরু করেন। তিনি প্রাথমিক স্কেচটি আঁকেন সাদা কাগজে চাইনিজ ইঙ্কে। আসল প্রতিকৃতিটি ছিল তাঁর সামনে দেওয়ালে টাঙানো। স্কেচ কিছুটা এগোনোর পরেই দুর্গেশবাবুর অদ্ভুত অনুভূতি হতে থাকে যা ব্যাখ্যাতীত। দুর্গেশবাবু ঘোরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘোরের অবস্থায় থাকাকালীন দুর্গেশবাবুর হাত অবিশ্বাস্য গতিতে চলতে থাকে। এ ফোর কাগজে বাবার (Baba Lokenath Brahmmachari) মুখাবয়বটি আঁকা শেষ হয় ঠিক তারপরই শরীরের বাকি অংশ অন্য কয়েকটি এ ফোর-এ এঁকে একত্র করে পূর্ণাঙ্গ রূপ দান করা হবে এমনটাই ঠিক হয়।
অবশেষে ঠিক হয় প্রতিকৃতির চোখ আঁকবেন কিন্তু চোখ আঁকতে গিয়ে দেখা দেয় যত বিপত্তি। তিনি অনুভব করেন ঘোরের মধ্যে আঁকা ছবিটি লুপ্ত হয়ে যায়। নিজের মতো প্রতিকৃতির চোখ আঁকেন তিনি। নাগ পরিবারের এক প্রবীণ সদস্যকে নিয়ে এসে সেই প্রতিকৃতি দেখানো হয়। তিনি জানান, বাল্যকালে তিনি বাবা লোকনাথকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তিনি যেমন চোখ এঁকেছিলেন তার সঙ্গে বাবা লোকনাথের চোখের কোনও মিল নেই। বহুবার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত অবস্থায় সেই ছবি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পড়ে থাকে। প্রায় দেড় বছর পরে একদিন শীতের রাতে দুর্গেশবাবু ঢাকায় বুড়িগঙ্গার ধারে একটি পার্কে বেড়াচ্ছিলেন। পার্কের বন্ধ দরজায় কেউ এসে দাঁড়িয়েছেন বলে মনে হয় তাঁর। যখনই তিনি মুখ তোলেন দেখেন একটি আচ্ছাদনে মুখটি ঢাকা একজন লোক। ফ্রেমে সেই পুরুষ তাঁর মুখাবরণটি সরান। দুর্গেশবাবু দেখতে পান, অতি তীব্র আলোকজ্যোতিসম্পন্ন চক্ষুদ্বয় নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্বয়ং শ্রীলোকনাথ (Baba Lokenath Brahmmachari)।
সেই মুহূর্তেই দুর্গেশবাবু জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরলে তিনি কাউকে আর দেখতে পাননি। তখনই তিনি একদৌড়ে রেণুকাদেবীর বাড়ি আসেন এবং দ্রুত হাতে প্রতিকৃতিতে চক্ষুদান করেন। পরের দিন সেই প্রবীণ ভদ্রেলোককে নিয়ে আসা হলে তিনি আশ্চর্য হয়ে যান। প্রকৃতপক্ষে এটিই শ্রীলোকনাথের প্রথম পেন্টিং। ছবিতে একটি মণি উর্ধ্বে আর একটি নিম্নে কেন? অনেকের মত, উর্ধ্বগামী চোখটি মহাবিশ্ব এবং নিম্নমুখী চোখটি অন্তঃস্থ জগতের প্রতীক। যা সমগ্র অধ্যাত্মবাদের মূলকথা। মহাযোগী লোকনাথ অতিলৌকিক দর্শন দ্বারা শিল্পী দুর্গেশবাবুকে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন, যার আজও সমাধান হয়নি।