Unique Train Names: চেতক থেকে আন্দামান, ভারতীয় রেলের এই ১৬টি ট্রেনের নাম কেমন কেমন!

Prosun Kanti Das

Published on:

Advertisements

Know about several Unique Train Names of Indian Railways: সাশ্রয়ী মূল্য এবং আরামদায়কভাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার অন্যতম পরিবহন মাধ্যম হলো রেল পরিবহন। এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে প্রতিনিয়তই লাখো লাখো যাত্রী কাজের উদ্দেশ্যে বা ভ্রমণে দূরবর্তী স্থানে পাড়ি দেয়। ফলেই যাত্রীদের সুবিধার্থে এই রেলপথে এক্সপ্রেস, লোকাল নানা ধরনের ট্রেন চলে। ভারতীয় রেল বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়েই মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করে। জানতে আগ্রহী থাকে। তেমনি একটি বিশেষ বিষয় হল ট্রেনের নাম (Unique Train Names)। ভারতীয় রেল বিভাগে এমন কিছু কিছু ট্রেন রয়েছে যে ট্রেনগুলির নাম বেশ আকর্ষণীয়। কোনো ট্রেনের নাম সাহিত্যের সাথে যুক্ত, কোনোটা বিশেষ ব্যক্তিবর্গের নামে তো কোনো ট্রেন আবার ঐতিহাসিক স্থাপত্য বা স্থানের নামে নামাঙ্কিত। এমনি এমনি নামকরণ হয়নি তার পিছনে রয়েছে গল্প। আজকের প্রবন্ধে তেমনি বেশ কিছু ট্রেনের আকর্ষণীয় নাম এবং নামের উৎপত্তি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

Advertisements
চেতক এক্সপ্রেস

এই এক্সপ্রেসের রুট হল দিল্লির সরাই রোহিল্লা স্টেশন টু রাজস্থানের উদয়পুর। রাজস্থানগামী এই আকর্ষণীয় ট্রেনের নাম (Unique Train Names) কোন, বিশেষ ব্যক্তি বা স্থানের নামে নয়। বীর রানাপ্রতাপের ঘোড়ার নামে নামকরণ এই ট্রেনের। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায় বীর রানাপ্রতাপ সিংহের চৈতক রাজপুত বা চেতক নামে এক বিশেষ ঘোড়া ছিল। যে ঘোড়াটি ১৫৭৬ সালে হলদিঘাটের যুদ্ধে আহত হয়েও দায়িত্ব পালন করেন। প্রভু রানাপ্রতাপকে নিরাপস্থানে নিয়ে আসেন। আর তারপরেই মৃত্যু হয় সেই ঘোড়ার।

Advertisements
আন্দামান এক্সপ্রেস

নাম শুনে বোঝাই যাচ্ছে যে এই এক্সপ্রেসটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নামে নামাঙ্কিত। তবে নাম অনুযায়ী এই ট্রেনটি কিন্তু আন্দামানে চলে না। এই ট্রেনের রুট হল আন্দামান যাওয়ার প্রধান কেন্দ্র চেন্নাই টু জম্মু তাওয়াই। কারণ অনুসারে জানা যায় একসময় রেলমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেয়, দেশের অঙ্গরাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত কোনো অঞ্চলের নামে কোনো না কোনো ট্রেনের নামকরণ হবে। আর সেই অনুসারী চেন্নাই টু জম্মু তাওয়াই যেহেতু আন্দামানে যাবার প্রধান কেন্দ্র তাই এই রুটের ট্রেনের নামকরণ আন্দামান দেওয়া হয়েছে।

Advertisements
আম্রপালি এক্সপ্রেস

অসামান্য সুন্দরী নগরবধুর নামে নামাঙ্কিত হয় এই ট্রেনের নাম। বৈশালীর আম্রকাননে জন্ম হয় আম্রপালির। নগরবধূ হয়েও তিনি বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। বুদ্ধদেবের শিষ্য তিনি। বৌদ্ধ সাহিত্যে তাঁর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিহারের ভূমিকন্যা বলা হয় আম্রপালিকে। তাই বিহারগামী এই এক্সপ্রেসের নাম আম্রপালি। বিহারের কাটিহার টু পাঞ্জাবের অমৃতসর রুটে চলাচল করে এই ট্রেন।

পরশুরাম এক্সপ্রেস

এক্সপ্রেসের রুট হল কেরলের তিরুবনন্তপুরম থেকে বেঙ্গালুরু পর্যন্ত। তবে এই এক্সপ্রেসের নাম অন্যান্য নামগুলির থেকে একটু অন্যরকম। যা পুরাণের সাথে সম্পর্কিত। এই নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনী। জানা যায় ভগবান বিষ্ণুর অন্যতম অবতার পরশুরাম কোঙ্কন এবং মালাবার অঞ্চলকে সমুদ্রের গ্রাস থেকে রক্ষা করে তাঁর কুঠার অস্ত্রের মাধ্যমে। যা পরশুরাম ক্ষেত্র নামে পরিচিত। সেই ভূভাগের উপর দিয়েই ছুটে যায় এই ট্রেন। সেই অনুসারেই এই এক্সপ্রেসের নাম হয় পরশুরাম।

জিয়ারত এক্সপ্রেস

ভারতীয় রেল বিভাগের এই জিয়ারত এক্সপ্রেস ট্রেনের নামকরণের যোগ রয়েছে ভারতের ইসলামিক অন্যতম তীর্থক্ষেত্র আজমের শরিফের সাথে। এই এক্সপ্রেসদের রুট হল পার্টনার রাজেন্দ্রনগর টার্মিনাস থেকে রাজস্থানের অজমের পর্যন্ত। শোনা যায় মমতা ব্যানার্জি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই ট্রেনের নামকরণ জিয়ারত করা হয়।

আরও পড়ুন ? First Bullet Train Station: কেমন হতে চলেছে ভারতের প্রথম বুলেট ট্রেন স্টেশন! দেখে নিন ভিডিওতে

পুষ্পক এক্সপ্রেস

পরশুরাম এক্সপ্রেসের মত পুষ্পক এক্সপ্রেস নামের সাথেও জড়িয়ে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনী। কথিত রয়েছে লঙ্কার রাবণ রাজ একটি দ্রুতগতি সম্পন্ন রথ ব্যবহার করতেন। যে রথের নাম পুষ্পক। রথের আসল মালিক হন কুবের দেব। ফলেই রাবণের মৃত্যুর পর এই উড়ন্ত রথ ফিরে যায় কুবেরের কাছে। দ্রুতগামী ট্রেনের সাথে দ্রুতগামী এই রথের সম্পর্ক থাকায় এই ট্রেনের নামকরণ করা হয় পুষ্পক এক্সপ্রেস। যার রুট হল লখনৌ জংশন টু মুম্বাই সিএসটি।

মৎস্যগন্ধা এক্সপ্রেস

ভারতীয় রেল বিভাগের এই এক্সপ্রেস ছুটে যায় মুম্বাইয়ের লোকমান্য তিলক টার্মিনাস থেকে কর্নাটকের ব্যাঙ্গালুরর দিকে। অনেকেই মনে করেন মহাভারতের মৎস্যগন্ধা সত্যবতীর নাম অনুসারেই এই ট্রেনের নাম। কিন্তু না, মৎস্যজীবী অধ্যুষিত অঞ্চল কোঙ্কন রেলপথ অতিক্রম করে এই এক্সপ্রেস। সেই অনুসারেই এক্সপ্রেসের নাম মৎস্যগন্ধা হয়। পশ্চিম ভারতের আরব সাগরে অবস্থিত এই বিস্তীর্ণ উপকূল।

সপ্ত ক্রান্তি এক্সপ্রেস

বিপ্লব তত্ত্বের সাথে জড়িত রয়েছে এই এক্সপ্রেসের নাম। সপ্ত ক্রান্তির অর্থ হল সাতটি বিপ্লব। পুরুষ মহিলার সমতা, উচ্চবর্ণের মানুষদের দ্বারা নিম্ন বর্ণের মানুষদের উপর অত্যাচারের অবসান, বর্ণবৈষম্যের নিরসন, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের অবসান, জাতীয় স্তরের শ্রমমূল্যের মধ্যে সমতা, ব্যক্তিগত জীবনে রাজনৈতিক প্রভাব ও সরকারের হস্তক্ষেপের অবসান, পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রভৃতি বিংশ শতকের সাতটি বিপ্লবের কালকে একত্রিত করে রামমনোহর লোহিয়া। আর তাঁর এই তত্ত্বকে স্মরণীয় করার উদ্দেশ্যে এই এক্সপ্রেসের নাম দেওয়া হয় সপ্ত ক্রান্তি। যা বিহারের মুজাফ্ফরপুর এবং নয়া দিল্লির আনন্দ টার্মিনাসের রুটে যাতায়াত করে।

কাইফিয়ত এক্সপ্রেস

ঐতিহাসিক স্মৃতি সৌধ, পুরান বা স্থানের নাম নয়, এই এক্সপ্রেসের নামকরণ হয় উর্দু ভাষার কবি কাইফিয়াতে নামানুসারে। ভারতবর্ষের এক বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত কবি কাইফি আজমির। কবিতার পাশাপাশি হিন্দি ছবির গানও রচনা করতেন এই ব্যক্তি। ‘কাইফিয়াত’ নামে তাঁর সারা জীবনের কবিকৃতির একটি গ্রন্থ রয়েছে। আর সেই বিশেষ ব্যক্তির স্মরণেই আজমগড় ও দিল্লি রুটের এই এক্সপ্রেসের নাম হয় কাইফিয়ত।

লস্কর এক্সপ্রেস

এই এক্সপ্রেসের রুট হল মুম্বাইয়ের লোকমান্য তিলক টার্মিনাস থেকে আগর্ ক্যান্টনমেন্ট। পূর্বে এই এক্সপ্রেস গোয়ালিয়ার পর্যন্ত ছুটে যেত। যেখানে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের শিণ্ডের সামন্তশক্তির প্রধান সামরিক ঘাঁটি। এই সূত্রেই এই এক্সপ্রেসের নাম হয় লস্কর। কারণ ‘লস্কর’ কথার অর্থ হলো সৈন্য বা সেনা।

কান্ডারি এক্সপ্রেস

এই এক্সপ্রেসের নাম কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা কোনো ঐতিহাসিক স্থাপত্য অথবা জায়গার নামানুসারে নয়। কবি কাজী নজরুলের বিখ্যাত কবিতা ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ নামানুসারে এই এক্সপ্রেসের নামকরণ করা হয়। যে ট্রেনটি যাতায়াত করে হাওড়া টু দীঘা পর্যন্ত।

ফলকনুমা এক্সপ্রেস

ফলকনুমা কথার অর্থ হল স্বর্গের নক্ষত্র। যে প্রাসাদটি অবস্থিত হায়দ্রাবাদে। আর সেই প্রাসাদের নামানুসারে এই এক্সপ্রেসের নামকরণ করা হয় ফলকনুমা। যে ট্রেনটি হাওড়া থেকে সেকেন্দ্রাবাদের দিকে ছুটে যায়।

দীক্ষাভূমি এক্সপ্রেস

বর্তমানে ধানবাদ টু কোলহাপুর রুটে চলাচল করে দীক্ষাভূমি এক্সপ্রেস। যা পূর্বে নাগপুর থেকে গোয়া পর্যন্ত যাতায়াত করত। যে নাগপুরে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করে ভারতীয় সংবিধানের রূপকার বাবাসাহেব আম্বেদকর। আর সেই দীক্ষা গ্রহণের ঘটনাকে স্মরণীয় করতেই এই এক্সপ্রেসের নামকরণ করা হয় দীক্ষাভূমি।

অনন্যা এক্সপ্রেস

‘অনন্যা’ শব্দের অর্থ হলো ‘অতুলনীয়া’। একেশ্বরবাদের সাথে গভীরভাবে জড়িত রয়েছে এই শব্দ। আধ্যাত্মিকতাও জড়িয়ে রয়েছে এই শব্দের মধ্যে। তবে এই এক্সপ্রেসের এমন নামকরণের আসল ঘটনা এখনো অজ্ঞাত। পশ্চিমবঙ্গের শিয়ালদহ টু রাজস্থানের উদয়পুর সিটি হল এই এক্সপ্রেসের রুট।

সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস

রাজধানী দিল্লির সাথে দেশে বিভিন্ন জায়গা যুক্ত করতে এবং যাত্রাপথ সুগম করতে বিভিন্ন সুপারফাস্ট ট্রেন চালু করা হয়। মূলত রাজধানীর সাথে দেশের অন্যান্য জায়গাগুলিকে সম্পর্ক যুক্ত করায় এই এক্সপ্রেসের নাম দেওয়া হয় সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস।

অহিংসা এক্সপ্রেস

মহাত্মা গান্ধীর সাথে জড়িয়ে রয়েছে এই এক্সপ্রেসের নাম। বাপুর জীবনে জড়িয়ে থাকা ‘অহিংসা’ প্রসঙ্গ থেকেই এই এক্সপ্রেসের নামকরণ করা হয়। যেহেতু মহাত্মা গান্ধী আমেদাবাদে তাঁর আশ্রম তৈরি করেন। সেই অনুসারে গুজরাটের আমেদাবাদ থেকে মহারাষ্ট্রের পুনের মধ্যে চলাচলকারী এই ট্রেনের নাম অহিংসা এক্সপ্রেস (Unique Train Names) রাখা হয়।

Advertisements