Tata Family Education: জানেন কি টাটা পরিবারের সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, শুনলে চমকে যাবেন

Prosun Kanti Das

Published on:

Advertisements

Tata Family Education: টাটা গোষ্ঠীর প্রাক্তন চেয়ারম্যান শিল্পপতি রতন টাটার মৃত্যু হয়েছিল চলতি বছরের অক্টোবর মাসে। টাটা গোষ্ঠী-সহ দেশের শিল্পমহল এখনও ভুলতে পারেনি সেই শোক। রতন টাটার মৃত্যু নাড়িয়ে দিয়েছে বহু অজানা তথ্য। এই পার্সি ব্যবসায়ী পরিবারের এক-একজন সদস্য হলেন অগাধ পাণ্ডিত্যের অধিকারী। টাটা গোষ্ঠীর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন জামশেদজি টাটা। তাঁকে বলা হয় ‘ভারতীয় শিল্পের জনক’। ১৮৩৯ সালের ৩ মার্চ গুজরাতের নভসারিতে জন্ম হয় তাঁর। জামশেদজির বাবা নুসেরওয়ানজি ছিলেন পার্সি পুরোহিত। পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে পা রাখেন ব্যবসায়ী জগতে।

Advertisements

আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য নুসেরওয়ানজি তার ছেলে অর্থাৎ জাদশেদজিকে খুব অল্প বয়সেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বম্বে অধুনা মুম্বইতে। সেখানকার এলফিনস্টোন কলেজ থেকে ‘গ্রিন স্কলার’ হিসাবে সসম্মানে উত্তীর্ণ হন টাটা গোষ্ঠীর এই প্রাণপুরুষ। জামশেদজির বড় ছেলে দোরাবজি টাটার জন্ম হয়েছিল ১৮৫৯ সালের ২৭ আগস্ট। ১৯০৪ সালে জার্মানিতে জামশেদজির মৃত্যু হলে তিনিই টাটা গোষ্ঠীর ব্যবসার হাল ধরেন। মুম্বইয়ের প্রোপ্রাইটারি হাই স্কুল থেকে প্রাথমিক পাঠ শেষ করেন তিনি (Tata Family Education)।

Advertisements

এরপর তিনি পাড়ি দিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে এবং ভর্তি হন কেমব্রিজের গনভিল ও কেয়াস কলেজে। মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে স্নাতক হন তিনি। টাটা স্টিল প্রতিষ্ঠায় তার অবদান সত্যি অনস্বীকার্য। দোরাবজির ছোট ভাই তথা জামশেদজির কনিষ্ঠ পুত্র রতনজি টাটার জন্ম ১৮৭১ সালের ২০ জানুয়ারি। তিনিও মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র ছিলেন (Tata Family Education)। টাটা গোষ্ঠীর তুলো ও বস্ত্র ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। রতনজির স্ত্রী ছিলেন একজন ফরাসি তরুণী যার নাম ছিল সুজ়ান ব্রিয়ার। এই দম্পতির সন্তানের নাম জাহাঙ্গির রতনজি দাদাভয় টাটা অর্থাৎ জেআরডি টাটা। তার জন্ম হয়েছিল প্যারিসে। ছোটবেলায় প্যারিসের জ্যানসন ডি সাইলি স্কুলের ছাত্র ছিলেন জেআরডি। তিনি পরবর্তীকালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি নেন। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন তাকে বাধ্য করেছিল বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিতে।

Advertisements

জেআরডি টাটা বিদেশ থেকে ভারতে এসেছিলেন ১৯২৫ সালে। তিনি পরিবারের ব্যবসাকে একটি নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেন। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে টাটা গোষ্ঠীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদে ছিলেন তিনি। তাঁর উদ্যোগেই অসামরিক বিমান পরিবহণ ব্যবসায় পা রাখে টাটা গোষ্ঠী। আর আমলে জন্ম হয়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার। জেআরডি টাটাকে ‘ভারতরত্ন’ এবং ‘পদ্মবিভূষণ’-এ সম্মানিত করেছিল ভারত সরকার। দেশের প্রথম বাণিজ্যিক পাইলট হিসাবে তিনি প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন। তাঁর বাবা রতনজি টাটা দত্তক সন্তান গ্রহণ করেন। তাঁরই নাম নাভাল টাটা।

আরো পড়ুন: কখন হাঁটলে ওজন কমবে তাড়াতাড়ি, জেনে নিন এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে

নাভাল টাটার জন্ম হয়েছিল ১৯০৪ সালে এবং তিনি ছিলেন মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র (Tata Family Education)। পরে অবশ্য তিনি লন্ডনে অ্যাকাউন্টিংয়ের একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স করেছিলেন। আন্তর্জাতিক স্তরে টাটা গোষ্ঠীর এই আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল জেআরডি টাটার হাত ধরেই। সেটাই এগিয়ে নিয়ে যান নাভাল। নাভালের প্রথম স্ত্রী ছিলেন সুনি। ১৯৩৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর তাঁর কোলে আসে এক পুত্রসন্তান। পালক পিতার নামানুসারে ছেলের নাম ‘রতন’ রাখেন নাভাল। টাটার প্রত্যেকটি ব্যবসাকে আন্তর্জাতিক স্তরে নতুন নাম দিয়েছেন রতন টাটা।

রতন টাটা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মুম্বইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুলে পড়াশোনা করেন। তারপর অবশ্য তিনি ভর্তি হন বাণিজ্য নগরীর ক্যাথিড্রাল অ্যান্ড জন ক্যানন স্কুলে (Tata Family Education)। পরবর্তীকালে রতন টাটা শিমলার বিশপ কটন স্কুল থেকে পাশ করার পর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেন। ১৯৬২ সালে আমেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্য বিদ্যার ডিগ্রি অর্জন করেন জামশেদজির এই উত্তরসূরি। ১৯৫৫ সালে নিউইয়র্ক সিটির রিভারডেল কান্ট্রি স্কুল থেকে স্নাতকের পাঠ শেষ করেছিলেন রতন টাটা। ১৯৯১ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন রতন টাটা। ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টাটা গ্রুপের অন্তর্বর্তিকালীন চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।

আরো পড়ুন: ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকল এই ঘটনার, সৌদি আরবে হল তুষারপাত

জেআরডি টাটার প্রতিষ্ঠা করা বিমান সংস্থা স্বাধীনতার পর চলে গিয়েছিল ভারত সরকারের অধীনে। কিন্তু রতন টাটা আবারো ফিরিয়ে নিয়ে আসেন সেই বিমান সংস্থাকে। রতন টাটার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাণকারী সংস্থা ফোর্ডের তৈরি ল্যান্ড রোভার ও জাগুয়ারকে টাটা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা। ২০০০ সালে পদ্মভূষণ ও ২০০৮ সালে পদ্মবিভূষণে তাঁকে সম্মানিত করে ভারত সরকার। রতন টাটার সৎভাই তথা নাভাল টাটার দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান হলেন নোয়েল টাটা। ১৯৫৭ সালে জন্ম হয় তাঁর। ইংল্যান্ডের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। বর্তমানে টাটা গোষ্ঠীর জনহিতকর শাখা ‘টাটা ট্রাস্ট’-এর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন তিনি।

বর্তমানে নোয়েল টাটার তিন সন্তান, মায়া, নেভিল ও লিয়া। মায়া বেইস বিজ়নেস স্কুল এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছে (Tata Family Education)। ‘টাটা নিউ’ অ্যাপটি তিনি প্রথম বাজারে লঞ্চ করেছিলেন। বেইস বিজ়নেস স্কুলের পড়ুয়া ছিলেন নেভিল টাটাও এবং লিয়া পড়াশোনা করছেন স্পেনের আইই বিজ়নেস স্কুলে। বর্তমানে ইন্ডিয়ান হোটেল কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন তিনি। অন্য দিকে ‘স্টার বাজার’ সংস্থাটির নেতৃত্বে রয়েছেন নেভিল। টাটা গোষ্ঠীর আনুমানিক সম্পত্তির পরিমাণ বর্তমানে ৩৩ লক্ষ কোটি টাকা। এই পরিবারের প্রত্যেকটি মানুষ তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং বুদ্ধির দ্বারা এই সম্পত্তি তৈরি করতে পেরেছে।

Advertisements