হিন্দুদের কাছে চারধাম এর যাত্রা সম্পূর্ণ করলে মানবজীবন ধন্য। এই চার ধামের মধ্যে অন্যতম এবং গুরুত্বপূর্ণ হল কেদারনাথ ধাম। এটি উত্তরাখন্ড রাজ্যে অবস্থিত। ৬ মাস বাবা কেদারের এই ধাম বরফ আবৃত থাকে। তারপর এপ্রিল মাসে ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হয় এই কেদারনাথ ধাম (Kedarnath Dham)। ভক্তদের কাছে এই ধামের মূল্য অপরিসীম।
হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মনে করা হয় যে, ভগবান বিষ্ণু একবার নর এবং নারায়ণ রূপে এই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে ভগবান শিবের আরাধনা করেছিল। তপস্যা শেষ করার পর তিনি বর পেয়েছিলেন যে, হিমালয়ের কোলে তিনি শিবলিঙ্গ রূপে প্রতিষ্ঠিত হবেন। যেই স্থানে শিবলিঙ্গটি প্রতিষ্ঠিত হয় সেটি ছিল রাজা কেদারের জায়গা। শিবকে বলা হত রাজা কেদারের নাথ, তাই এই ধামটি কেদারনাথ ধাম (Kedarnath Dham) রূপেই পরিচিত।
বাবা কেদারনাথের এই ধামটি প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন পান্ডবরা। এই পবিত্র ধামটি বছরের ৬ মাস বরফে ঢাকা থাকে। আদি শঙ্করাচার্য প্রথম এই পবিত্র মন্দিরটি সংস্কার করেছিলেন। কি আছে এই পবিত্র মন্দিরের ভিতরে? এই মন্দিরের ভিতরে ঢুকলে আপনি দেখতে পাবেন শিবলিঙ্গ ছাড়াও বহু দেবদেবীর মূর্তি। যেমন পঞ্চপান্ডব, নন্দি, দেবী পার্বতী প্রভৃতির মূর্তি বিরাজমান।
২০১৩ সালে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি আর তার জলের চেপে চোরাবারি তালের মুখ খুলে গিয়ে তার জল নেমে এসে ভয়ংকর বন্যা ও জলের তোড়ে বিপর্যয় নেমে এসেছিল কেদারনাথ। সেই সময় এক বিশালাকার পাথর এসে মন্দিরের পিছনের গায়ে আটকে গিয়ে রক্ষা করেছিল মন্দিরটিকে। সেই বিশালাকার শিলাকে পূজা করা হয় ভিম শিলা রূপে। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, শিবলিঙ্গের সামনের অংশটি নেপালের পশুপতিনাথ মন্দিরে পুজিত হয় এবং পিছনের অংশটি কেদারনাথ জ্যোতির্লিঙ্গে পূজিত হয়ে থাকে।
কেদারনাথ ধাম (Kedarnath Dham) বছরের ছয় মাস বন্ধ থাকে এবং ছয় মাস খোলা থাকে। দীপাবলির পরে শীতের আমেজ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে যায় কেদারনাথের দরজা। ছমাস পরে গ্রীষ্মের সময় খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। দীর্ঘ এই টানা বন্ধের সময় এই মন্দিরের ভিতরে একটি বড় প্রদীপ জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকে। যদি কোন ব্যক্তির মৃত্যু এই কেদারনাথ ধামে হয় তাহলে সেই ব্যক্তি শিবের কৃপায় মোক্ষ লাভ করে। শিবের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গ এর মধ্যে অন্যতম হলো কেদারনাথ, রামেশ্বরম যা মানচিত্রে একই সরলরেখায় অবস্থিত।