নিজস্ব প্রতিবেদন : ২০১৯ এর ব্যর্থতা ভুলে ১৪ জুলাই চাঁদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। ওই দিন ঠিক দুপুর ২:৩৫ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। উৎক্ষেপণের দীর্ঘ ৪০ দিন পর অবশেষে বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফল অবতরণ করে ল্যান্ডার বিক্রম (Lander Vikram)। ভারতের এমন সাফল্যের কান্ডারী ইসরোর বিজ্ঞানীরা দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছেন। ঠিক সেই রকমই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে এই মিশনের অংশ হিসাবে ছিলেন একাধিক মহাকাশ বিজ্ঞানী। এই সকল মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যেই অন্যতম একজন হলেন বিজয় কুমার দাই (Bijoy Kumar Dai)। দুঃস্থ চাষিবাসি পরিবারের এই মহাকাশ বিজ্ঞানীই এখন চাঁদ জয়ের অন্যতম কান্ডারী।
বিজয় কুমার দাই, এর আগে ২০১৯ সালের চন্দ্রাভিযান অর্থাৎ চন্দ্রযান-২ সঙ্গেও সরাসরি যুক্ত ছিলেন। তাঁর কাজ ছিল মহাকাশযানটির স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করা। গ্রাউন্ড স্টেশনের সাথে সমন্বয় স্থাপন করে মহাকাশযানে কমান্ড পাঠানো। কোনো প্রকার গলদ দেখা দিলে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এরপর আবারও চন্দ্রযান-৩ এর সঙ্গে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। উৎক্ষেপণের দিন থেকে শুরু করে চাঁদের মাটিতে ল্যান্ডিং সবেই গুরু দায়িত্ব ছিল তার। পরিবারের সদস্যদের তরফ থেকেও এই গুরু দায়িত্বের কথা জানানো হয়েছে।
বিজয় কুমার দাই বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের দক্ষিণ গ্রামে এক দরিদ্র চাষি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালে। বর্তমানে কর্মসূত্রে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। বাবা নারায়ন চন্দ্র দাই একজন চাষী। বিজয় কুমার দাই ছোট থেকে গ্রামেরই প্রাথমিক এবং উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। উচ্চবিদ্যালয়ে পড়াকালীন স্কুলের শিক্ষকরা তাঁর মেধার পরিধি উপলব্ধি করতে পারেন। কেননা তিনি এমন একজন পড়ুয়া ছিলেন যিনি কোনদিন কোন ক্লাসে প্রথম ছাড়া দ্বিতীয় হননি। যখন তিনি অষ্টম শ্রেণীতে পড়তেন তখন তাঁর মেধার জন্য তাঁর হাতে নিচু ক্লাসের দায়িত্বও দিয়ে দিতেন স্কুলের শিক্ষকরা (যখন শিক্ষক কম আসতেন)।
তিনি অষ্টম শ্রেণীতেই জাতীয় স্কলারশিপ অর্জন করেছিলেন। মাধ্যমিকে অঙ্কতে পেয়েছিলেন ১০০% নম্বর, যা স্কুলের ইতিহাসে ছিল প্রথম। গ্রামের স্কুল পড়াশোনার পর তিনি যান বেলুড় মঠে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে পড়াশোনার জন্য। তারপর একে একে কল্যাণী সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে উত্তীর্ণ, গেট পরীক্ষা দিয়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ECE থেকে এমটেক করতে করতে ইসরোতে একজন বিজ্ঞানী হিসাবে ২০০৭ সালে নিযুক্ত হন। একজন বিজ্ঞানী হিসাবে গবেষণা চালাতে চালাতে তিনি এমটেক সম্পূর্ণ করেন।
চন্দ্রযান ৩ চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে অবতরণ করার পর এতদিনের পরিশ্রম সফল হওয়ায় অন্যান্য মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতো বিজয় কুমারের চোখে মুখেও ফুটে উঠেছে সাফল্যের আনন্দ ছবি। সেই ছবি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। তবে এখনই এই মিশন সম্পূর্ণ না হওয়ায় খুবই ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছেন তিনি। শুধু সফলভাবে অবতরণ নয়, এখন ইসরোর বিজ্ঞানীদের মূল লক্ষ্য হলো সফলভাবে তথ্য সংগ্রহ করা। বিজয় কুমারের দাইয়ের ভাই বাপি দাই, দাদা বিনয় কুমার দাই, বাবা নারায়ণ চন্দ্র দাই, মা শ্যামলী দাই প্রত্যেকেই ছেলের এমন সাফল্যে গর্বিত। শুধু পরিবারের সদস্যরা নন, ছেলের এমন সাফল্যে গর্বিত গোটা জেলা থেকে শুরু করে রাজ্য, দেশ। প্রত্যেকের আশা আগামী দিনে বিজয় বাবু আরও সাফল্য অর্জন করবেন এবং দেশের হয়ে আরও আরও কাজ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। জয় হিন্দ।।