নিজস্ব প্রতিবেদন : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষাদ্বীপ (Lakshadweep) ভ্রমণ এবং তারপর দেশবাসীদের সেই জায়গা একবার ঘুরে দেখার আবেদন জানানোর পর থেকেই শুরু হয়েছে মালদ্বীপ (Maldives) বনাম লাক্ষাদ্বীপের ঠান্ডা লড়াই। মালদ্বীপ বনাম লাক্ষাদ্বীপের এমন ঠান্ডা লড়াইয়ের পিছনে অবশ্য রয়েছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। মালদ্বীপের নেতা মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অপমান আর ভারত সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এই ঠান্ডা লড়াইকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।
মালদ্বীপ যেমন একটি ঐশ্বরিক সৌন্দর্যমন্ডিত দ্বীপপুঞ্জ, ঠিক সেই রকমই লাক্ষাদ্বীপও ঐশ্বরিক সৌন্দর্যমন্ডিত আরেকটি দ্বীপপুঞ্জ। ৩৬ টি দ্বীপের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে লাক্ষাদ্বীপ। ভারতের এই কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলটি মাত্র ৩২.৬৯ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে অবস্থান করছে। তবে আয়তনে ছোট হলেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং কৌশলগত অবস্থানের কারণে লাক্ষাদ্বীপ ভারতের অন্যতম সম্পদ।
কিন্তু অনেকেই জানেন না, ভারত স্বাধীন হওয়ার সময় পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল যে এই লাক্ষাদ্বীপ চলে যাচ্ছিল পাকিস্তানের হাতে। পাকিস্তান প্রায় দখল করেই নিয়েছিল লাক্ষাদ্বীপ। তবে সেই সময় লাক্ষাদ্বীপকে পাকিস্তানে যেতে দেননি স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল (Sardar Vallabhbhai Patel)। কিভাবে তিনি সেই কাজ করেছিলেন তা এখনো অনেকেই জানেন না।
আরও পড়ুন ? Maldives: ভারতীয়দের ছাড়া উপায় নেই! এই কারণে ভাতে মরে যাবে মালদ্বীপ
লৌহ মানব নামে পরিচিত সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের দৌলতে স্বশাসিত ভারতের বহু রাজ্য ভারতের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল কূটনৈতিক বুদ্ধি এবং দূরদৃষ্টির কারণে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে অনেক দেশে রাজ্য ছিল যেগুলি কিন্তু সরাসরি ব্রিটিশদের অধীনে ছিল না। এই সকল রাজ্যগুলি ভারত স্বাধীন হওয়ার পরেও ভারতের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু বল্লভভাই প্যাটেল সেই সকল রাজ্যের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিরলস প্রচেষ্টায় তাদের রাজি করিয়ে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করেন। এর পরিবর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা এবং তাদের প্রতিপত্তি সুরক্ষিত রাখতে পারবেন এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।
যদিও লাক্ষাদ্বীপের ক্ষেত্রে এমন কোন ঘটনা ছিল না। বরং লাক্ষাদ্বীপ পাকিস্তানের কাছে উজ্জ্বল একটি দ্বীপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এখানকার ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বসবাসের কারণে। লাক্ষাদ্বীপে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের বসবাস সবচেয়ে বেশি এবং সেটিকেই পাখির যোগ করেছিল পাকিস্তান। এর ফলে আরব সাগরে প্রতিপত্তি বিস্তারের ক্ষেত্রেও বড় ভবিষ্যৎ দেখছিল পাকিস্তান। যে কারণে লাক্ষাদ্বীপ দখলের জন্য তাদের তরফ থেকে একটি যুদ্ধ জাহাজও পাঠানো হয়েছিল। তবে এই খবর আগেই পেয়েছিলেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। খবর পেয়েই তিনি ভারতীয় নৌ সেনাদের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। মালাবার উপকূল থেকে কাছে হওয়ার কারণে পাকিস্তানি জাহাজটি নোঙ্গর ফেলার আগেই ভারতীয় নৌসেনারা সেখানে পৌঁছে তিরঙ্গা উড়িয়ে দ্বীপ দখলের পরিকল্পনা ভেস্তে দেন। এদিকে এই খবর পাকিস্তানি সেনাদের কাছে পৌঁছাতে তারা আর লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার সাহস করেননি। তারা মাঝপথ থেকে ফিরে যান।