নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজ্যজুড়ে বেড়ে চলেছে উত্তরোত্তর করোনা সংক্রমণ। আর ক্রমাগত এই সংক্রমণের প্রকোপে চলছে লকডাউন।অন্যদিকে দেখতে দেখতে কেটে গেল জুলাই মাসের অর্ধেক। বাঙালিদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন, দুর্গাপুজো হবে তো! যে দিনগুলির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে বাঙালি, যে দিনগুলি বাঙালির আবেগ ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে।
গতকাল এই প্রসঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দুর্গাপুজো বাংলায় ভালো করে করতেই হবে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কিভাবে দুর্গাপুজো হবে? এবিষয়ে বেশ কিছু স্বাস্থ্যবিধির সুপারিশ করা হয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো কমিটিগুলির সংগঠন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’ এর থেকে।
দুর্গাপুজো হলেও এই বছর জাঁকজমক বিশেষ কিছু হবেনা তা বলাইবাহুল্য। তা বাদে সুষ্ঠভাবে দুর্গাপুজো করার একটি ১৫ দফা গাইডলাইন বানিয়েছেন তারা। কলকাতার সব পুজো কমিটিগুলিকেই সেই গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। জানা যাচ্ছে পরবর্তীতে প্রস্তাবনা হিসেবে প্রশাসনের কাছেও এই গাইডলাইন প্রকাশ করবে এই ফোরাম।
যদিও পরবর্তীকালে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ রূপ নেবে অথবা এই প্রস্তাব কতটা মেনে পুজোর আয়োজন করা সম্ভব হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু আপাতত এই গাইডলাইনের উপরই ভরসা রাখছেন তারা।
দুর্গাপুজোর ১৫ দফা গাইডলাইন
১) পুজো মণ্ডপ ও প্রতিমার উচ্চতা খুব বেশী করা যাবে না।
২) দর্শনার্থীদের জন্য যদি পুজো কমিটি মণ্ডপের বাইরে থেকেই প্রতিমা দর্শনের সুযোগ করে থাকে তবে ভালো।
৩) মণ্ডপের ভেতরে থাকবে না বেশী জাঁকজমক। যতটা সম্ভব সাধারণ হবে মণ্ডপের ভেতরের কাজ।
৪) সমস্ত দর্শনার্থীদের মুখে বাধ্যতামূলক ভাবে থাকবে মাস্ক। তাদের হাত স্যানিটাইজ করতে হবে।
৫) মণ্ডপের মূল প্রবেশদ্বারে বাধ্যতামূলক ভাবে থাকবে থার্মাল গান। কারোর গায়ে জ্বর থাকলে মণ্ডপে ঢুকতে পারবেন না।
৬) একবারে ২৫ জনের বেশি দর্শনার্থীদের মণ্ডপ ঢুকতে পারবেন না।
৭) দর্শনার্থীদের জন্য প্রস্তাব রাখা হয়েছে শুধু রাতের বদলে সারাদিন ধরে ঠাকুর দেখার।
৮) রাতে ঠাকুর দেখার মূল আকর্ষণ আলোর আধিক্য। সেই কারণে রাতে ভিড় কমাতে আলোর চাকচিক্য কমানোর প্রস্তাব।
৯) পুজো চলাকালীন প্রত্যেকদিন মণ্ডপ ও প্রতিমা স্যানিটাইজ করতে হবে।
১০) পুজো মণ্ডপের বাইরের স্টলগুলির মধ্যে ৩ থেকে ৪ ফুট দূরত্ব রাখতে হবে।
১১) মণ্ডপের বাইরে খাবারের স্টলে রেডিমেড খাবারের উপর জোর দিতে হবে। স্টলে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা রাখা চলবে না।
১২) ঠাকুরের প্রসাদে কাটা ফলের পরিবর্তে গোটা ফল রাখতে হবে।
১৩) পুষ্পাঞ্জলি, সন্ধিপুজো থেকে আরতি সব ক্ষেত্রেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
১৪) মণ্ডপশিল্পী থেকে কর্মীদের স্বাস্থ্যের দায়িত্ব নিতে হবে পুজো কমিটিকে।
১৫) পুজো কমিটিগুলিকে দায়িত্ব নিয়ে এলাকা স্যানিটাইজ করতে হবে।
ইতিমধ্যেই এই ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, আপাতত এই গাইডলাইন প্রস্তাবনার আকারে মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হবে। পুজো কমিটিগুলিকে এই গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। তবে এই গাইডলাইনের বাস্তবতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। দুর্গাপুজোর সময় কলকাতার রাস্তায় ও মণ্ডপগুলিতে যে পরিমাণে ভিড় হয় তা সামলাতে নাজেহাল হতে হয় পুজো উদ্যোক্তাদের।
যেখানে একসাথে ২০০-৩০০ মানুষকে ছাড় দিলেও ভিড় সামাল দেওয়া যায় না, সেখানে ২৫ জন করে দর্শনার্থীদের মণ্ডপে ঢোকানোর প্রস্তাব কতটা সফল হবে সেই নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। আপাতত এই গাইডলাইন বা নির্দেশিকায় কথা বলা হলেও সমস্ত পরিস্থিতি নির্ভর করছে আগামীদিনে দেশ ও রাজ্যে করোনার গতিপ্রকৃতির উপর।