ছিল না ঘর, টিভি, সেই ছেলেই আজ সিনেমার পরিচালক, অনুপ্রেরণা জোগাবে আপনাকেও

Shyamali Das

Published on:

Advertisements

আব্দুল হাই : বাড়িতে টিভি বা বিনোদনের কোন আসবাবপত্র না থাকলেও শেষ হবে টান যে কোন মানুষকে পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তা প্রমাণ করেছেন সমীর কুমার পন্ডিত। সমীর কুমার পণ্ডিত হলেন বাঁকুড়ার ইন্দাস থানার অন্তর্গত বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা নন্দদুলাল পন্ডিত একজন দিনমজুর এবং অবসর সময়ে তিনি ঢোল, সানাই বাজাতেন।

Advertisements

সমীর পণ্ডিত স্থানীয় বাঙ্গালচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পড়াশোনা করেন। তারপর তিনি ভর্তি হন নুন্দুরী সুধীরচন্দ্র বিদ্যানিকেতনে। তবে সেখানে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করার পরেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন। বাড়িতে অসম্ভব আর্থিক অনটনের কারণে কোনদিন স্কুলে ব্যাগ নিয়ে যাওয়া হয়নি। জামাকাপড়ও সেই ভাবে জোগাড় করতে পারতেন না তার বাবা মা। এরই মধ্যে মা ক্যান্সার আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

Advertisements

পুরাতন জামা কাপড় পরে কাটানো সমীর পণ্ডিত অষ্টম শ্রেণী পড়াশোনা করার পর রাজমিস্ত্রির কাজে নিযুক্ত হয়ে যান। সেই কাজ করতে করতে হাতে ফোসকা পড়ে গেলে তার মেজ দাদা তাকে জয়পুর থানার হেতিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন এবং সেখানে হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। যাতে করে হোস্টেলে থেকে খেয়ে পড়ে পড়াশুনাটুকু করতে পারে এই কথা মাথায় রেখে। অন্যদিকে ক্যান্সার আক্রান্ত মা চিকিৎসার অভাবে মারা যান।

Advertisements

তবে সমীর পণ্ডিতের পড়াশোনার প্রতি এবং অভিনয় ও লেখালেখির প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিল। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই উচ্চমাধ্যমিকে ফার্স্ট ডিভিশনে পাস করার পর বাড়িতে কাউকে না বলেই কলকাতা চলে যান কাজে সন্ধানে। সেখানে বেলঘড়িয়ার একটি হোশিয়ারি কারখানায় কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে ওই কারখানার মালিক তার রেজাল্টের কথা জানতে পেরে তাকে কাজের ফাঁকেই পড়াশোনা করার সুযোগ করে দেন। সমাজতত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করার পাশাপাশি টলিপাড়ায় একাধিকবার উঁকি মেরেছেন কাজের সন্ধানে। তবে সেখানে কোন কাজ না পাওয়ার ফলে স্নাতক হওয়ার পর মুম্বই চলে যান।

কিন্তু সেখানেও কোন সুযোগ না মেলায় ফের কলকাতায় ফিরে আসেন এবং আবার পড়াশোনা শুরু করেন। সমাজতত্বে এমএ পাস করার পর ২০০৬ সালে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করে। এরপর ২০১২ সালে তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের মহাপ্রভু মন্দির থেকে মহাপ্রভুর ওপর তথ্যচিত্র নির্মাণের দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৮ সালে বাঁকুড়ার স্থানীয় ভাষা নিয়ে তার ছবি প্রকাশ পায় ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’। এর পাশাপাশি বাঁকুড়া পুলিশের সচেতনতামূলক বিভিন্ন তথ্যচিত্র বানানোর দায়িত্ব তিনি পান। আর বর্তমানে বাঁকুড়ার অভিনেতা অভিনেত্রীদের নিয়েই ‘দিবানি’ নামে একটি সিনেমা রিলিজ করেছেন, যে সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

Advertisements