করোনা প্রতিরোধে বর্ধমানের খুদে বিজ্ঞানীর নয়া আবিষ্কার, অপেক্ষা সরকারি স্বীকৃতির

নিজস্ব প্রতিবেদন : সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা যখন করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কারে ব্যস্ত, তখন বর্ধমানের মেমারির একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী দিগন্তিকা আবিষ্কার করে ফেললেন করোনা প্রতিরোধের জন্য এক বিশেষ ধরনের মাস্ক। নোভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বঙ্গ তনয়ার এই নয়া আবিষ্কার গবেষণায় নবদিগন্ত খুলে দিতে পারে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ। অপেক্ষা কেবলমাত্র সরকারি স্বীকৃতির।

দিগন্তিকা বোস, পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বিদ্যাসাগর স্মৃতি বিদ্যামন্দির স্কুলের একাদশ শ্রেনীর ছাত্রী। দিগন্তিকার বক্তব্য, “যে দিন লকডাউন ঘোষণা হলো। জানলাম, পরীক্ষা হবে না। সেই তখন থেকেই ভাবতে ভাবতে মাথায় এসেছে এই ব্যাপারটা। এর জন্য বিশেষ পড়াশুনাও করেছি। সাত-আট দিন সময় লেগেছে। দেখতে পাচ্ছি, সাধারণ মাস্ক পড়ে সকলে ঘুরছেন। কিন্তু, এতে ভাইরাস আটকায় না। তাই আবিষ্কারের প্রচেষ্টা।”

দিগন্তিকার তৈরি এই ‘Pure air provider and Virus destroyer mask’ মাস্কটি পরে প্রশ্বাস নিলে বাইরের ধূলিকণা বা ভাইরাস কোনোভাবেই ফুসফুসে প্রবেশ করবে না। এই মাস্ক আবার কোভিড-১৯ পজেটিভদের জন্যেও উপকারী। করোনা পজেটিভ কোনো ব্যক্তি এই মাস্ক পড়া অবস্থায় যদি হাঁচেন বা কাশেন সেই নির্গত ড্রপলেটগুলি নষ্ট করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই বিশেষ ধরনের মাস্ক।

দিগন্তিকার আবিষ্কৃত এই মাস্ক দুটি অংশে বিভক্ত। মাস্কটির প্রথম অংশে রয়েছে একটি একমুখী ভাল্ব ও মাস্কটির দ্বিতীয় অংশে রয়েছে দুটি আধার। প্রথম অংশ অর্থাৎ ভাল্বের কাজ প্রশ্বাস গ্রহনের সময় বাতাসে থাকা দূষিত পদার্থ, ভাইরাস ধ্বংস করে দিয়ে বিশুদ্ধ বাতাস মাস্কের ভিতর প্রবেশ করানো। আবার বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরী এই মাস্কটি প্রশ্বাস ত্যাগের সময় বা হাঁচি কাশিতে থাকা ভাইরাসের প্রোটিন ও লিপিড স্তর ভেঙে দিয়ে ভাইরাসকে ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম।

দিগন্তিকার এই আবিষ্কার ইতিমধ্যেই ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রকের বিশেষ পদক্ষেপ ‘কোভিড-১৯ সলিউশন চ্যালেঞ্জ’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অধিভুক্ত ন্যশনাল ফাউন্ডেশন ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানীদের কাছেও দিগন্তিকার এই আবিষ্কার পৌঁছেছে। এমনকি ওড়িশার বীর সুন্দর সি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির আইডিয়া ইনোভেশনের ‘হ্যাক ফর কোভিড-১৯’ উদ্যোগের অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে দিগন্তিকার এই আবিষ্কার।

বর্ধমান জেলার মেমারি পুরসভার সুলতানপুরের বাসিন্দা দিগন্তিকা মাত্র ১৫ বছর বয়সে দিগন্তিকা তার উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তৈরি করেছে এমন কিছু যন্ত্র যা তাক লাগিয়ে দিয়েছে সবাইকে। যেমন, আলোর প্রতিফলনকে কাজে লাগিয়ে এমন এক চশমা আবিষ্কার করেছিল দিগন্তিকা, যার সাহায্যে চারপাশের ৩১৫ ডিগ্রী দেখা যায় ঘাড়ের বা মস্তিষ্কের কোনরকম নড়াচড়া ছাড়াই। এছাড়াও সহজে গাছে ওঠার জন্য উদ্ভাবন করেছিল এক নতুন ধরনের জুতোর যার সাহায্যে বাঘ বা অন্য কোন হিংস্র পশুর আক্রমণ হলে সহজেই গাছে বা উঁচু স্থানে উঠতে পারবে মানুষ।
আবিষ্কারের তালিকায় রয়েছে ড্রিল করার সময় মেশিন ঘূর্ণনের ধুলোবালি আটকাতে ডাস্ট কালেক্টর।

এই আবিষ্কারের জন্য ‘২০১৭ এপিজে আবদুল কালাম ইগনাইট’ পুরস্কার পায় সে। এছাড়াও বর্তমানে অস্থিজনিত সমস্যা থেকে তৈরি হওয়া রোগ স্পন্ডেলাইসিস সংক্রান্ত এক স্মার্ট বেল্ট বানিয়েছে যা ‘স্মার্ট সার্ভিকেল কলার বেলট’ নামে পরিচিত। আর এই আবিষ্কারের জন্যই ‘২০১৮ এ পি জে আবদুল কালাম ইগনাইট’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল সে।