Amber-Eyed Monalisa Bhosle: মহাকুম্ভের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল মোনালিসার চোখ। সোশ্যাল মিডিয়ার পর্দায় প্রায় ভেসে আসছে তার ছবি। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলায় তার প্রধান কাজ মালা বিক্রি করা। এক নেটপ্রভাবীর ক্যামেরায় বন্দি হয়ে তুমুল ভাইরাল হয়ে যায় তাঁর দু’টি চোখ। তার মায়াবী চোখের টানে লক্ষ লক্ষ ক্যামেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। কুম্ভমেলায় মোনালিসার চোখের মণি অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তার চোখের মণির রং নীল নয়, সবজেও নয়, আবার ঠিক বাদামিও নয়। মেটে সোনালি রঙের দুই মণিতে হলদেটে ভাবের ছোঁয়াই বেশি। এমন বিরল চোখের মণি সচরাচর দেখা যায় না।
অ্যাম্বার’-রঙা চোখ (Amber-Eyed Monalisa Bhosle) সকলে অবশ্য এমনটাই বলছে। ‘অ্যাম্বার’ এক প্রকার রজন। মধ্য এশিয়ার কিছু সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ধরনের চোখ দেখা গেলেও ভারতীয়দের মধ্যে এটি একেবারেই দেখা যায় না। সাধারণত স্পেন, দক্ষিণ আমেরিকা ও কিছু ক্ষেত্রে দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দাদের মধ্যে চোখের মণির এমন রং দেখা যেতে পারে। তা হলে রাজস্থানের চিতৌরগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা মোনালিসার চোখের রং এমন কেন হল?
এখানে কোন মায়া নেই বরং সবই হল জিনের খেলা। আমেরিকার ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর গবেষকেরা চোখের মণির রং নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছে। তাদের গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, এমন রঙের চোখ বিশ্বে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষেরই আছে। মেলানিন রঞ্জকের কারণেই চোখের মণির রং বদলায়। অবশ্য এই মেলানিন তৈরি হয় মেলানোসাইট্স নামের কোষ থেকে, যা থাকে চোখের মণিতে। যদি কোন ব্যক্তির চোখে মেলানিন বেশি থাকে, তা হলে মণির রং হবে গাঢ় বাদামি, যদি মেলানিন কম থাকে, তা হলে মণির রং হবে হালকা। যে সব মানুষের চোখের রং হালকা, তাঁদের মেলানিন কম থাকে, বাইরের আলো খুব সহজেই শুষে নিতে পারে তারা। তারপর সেটি প্রতিফলিত হয় এবং অনেকটাই হালকা দেখায়।
এই প্রতিবেদনে জানতে পারবেন চোখের মণির রং পরিবর্তনের আসল কারণ কি? মেলানিনেরও দু’টি ভাগ রয়েছে— ইউমেলানিন ও ফিয়োমেলানিন। ইউমেলানিনের ভাগ বেশি হলে চোখের মণির রং হবে কালচে বাদামি। আর ফিয়োমেলানিনের মাত্রা বাড়লে মণির রং বদলে হবে লালচে হলুদ। এই ফিয়োমেলানিনের মাত্রার হেরফেরেই চোখের মণির রং হলদেটে সোনালি বা মেটে সোনালি হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলেছে যে, ‘অ্যাম্বার’ রঙের চোখ (Amber-Eyed Monalisa Bhosle) যদি হয়, এক্ষেত্রে অবশ্যই ইউমেলানিন ও ফিয়োমেলানিন দুই-ই থাকবে, কেবল তাদের মাত্রার হেরফের হবে।
আরও পড়ুন:Sana Ganguly: সৌরভের মেয়ে সানা কোথায় কাজ করছে জানেন? কত টাকা স্যালারি পাচ্ছে সানা?
সবুজের কোন প্রভাব এই ধরনের চোখে থাকে না। পান্না-সবুজ চোখ অনেকেরই থাকে বটে, তবে তার কারণ আলাদা। আবার সমুদ্রনীল চোখ নিয়ে যাঁরা সৌন্দর্যপিয়াসিদের মুগ্ধ করেন, তাঁদের চোখের মণিতে কিন্তু মেলানিন থাকে না বললেই চলে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, যাদের চোখ বাদামি, তাদের চোখে মাত্রাতিরিক্ত মেলানিন থাকে। এর ফলে বাইরের আলো কম প্রবেশ করে সেখানে। আবার যাদের চোখ দেখে মনে হয় নীল, মেলানিনের পরিমাণ সেখানে একেবারে কম। ফলে বাইরের আলো শুষে নিতে পারে না, কিন্তু প্রতিফলন হয় অনেক বেশি।
চোখে মেলানিন বাড়বে না কমবে সেটাও কিন্তু জিনের উপর নির্ভর করে। কার চোখের মণির রং কী হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করে ওসিএ২ এবং এইচআরসি২ নামক দুই জিন। ওসিএ১ জিনের কারণেই চোখের মণিতে মেলানিনের তারতম দেখা যায়। মেলানিনের কারণে কারও চোখ বাদামি, কারও নীল আবার কারও মেটে সোনালি হতে পারে। তবে জিনগত বৈচিত্রের কারণে চোখের মণির রং বিভিন্ন রকমের হয়। বংশপরম্পরায় এটি সঞ্চারিত হতে থাকে। এমনও দেখা গিয়েছে, মা-বাবার চোখ নীল হলেও সন্তানের চোখ বাদামি হয়েছে। তবে কীভাবে এই জিনের রকমফের হচ্ছে, সেটা এখনো অজ্ঞাতই থেকে গিয়েছে।