শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের নামে করোনা এক্সপ্রেস চালানো হচ্ছে, তোপ মমতার

নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজ্যে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। তবে এই সংক্রমণ বাড়লেও শুক্রবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগামী জুন মাস থেকে রাজ্যের বাসিন্দাদের যে আরও একগুচ্ছ ছাড় দিতে চলেছেন তা আজই তিনি নিশ্চিত করে দিলেন। জানিয়ে দিলেন জুন মাস থেকে খোলা যাবে মন্দির, মসজিদ, গির্জা সহ অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাসে ২০-র পরিবর্তে সব আসনেই যাত্রী বহন করা যাবে, ১০০% কর্মীদের নিয়ে খোলা যাবে অফিস।

তবে লকডাউন বাড়লেও শিথিলতা আনার ঘোষণার পাশাপাশি এদিন তিনি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়ে কেন্দ্রকে তোপ দাগেন। কেন্দ্রকে তোপ দেগে বলেন, “আপনারা কি করোনা এক্সপ্রেস চালাচ্ছেন? গাদাগাদি করে লোক নিয়ে ট্রেন চালাচ্ছেন। আর সংক্রমণ ছড়ালে দায় কে নেবে? কেন সুরক্ষা বিধি মানছেন না?”

প্রসঙ্গত, রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকরা ফিরে আসতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে সংক্রমণ। যেভাবে রাজ্যে প্রতিদিন শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ঢুকছে তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর এনিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, বাংলায় সংক্রমণ বাড়লে কেন্দ্র সরকার দায়িত্ব নেবে তো? এ নিয়ে তিনি বলেন, “মন্দির-মসজিদ, চার্জ, গুরুদ্বারে জমায়েত করতে বারণ করছে ভাইরাস ছড়াবে বলে। আর এদিকে নিজেরা কি করছে। ট্রেনে গাদাগাদি করে লোক আনছে। এমনকি ট্রেনের মেঝেতে বসিয়েও লোক আনছে। স্বাস্থ্য সচেতনতা বলতে কিছুই নেই। ট্রেনে জল নেই, খাবার নেই। এইভাবে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আগেই রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, “দেশের বিভিন্ন রাজ্য যদি ৯০ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা থেকে কোয়ারেন্টাইন অব্দি সমস্ত ব্যবস্থা করতে পারে , তাহলে পশ্চিমবঙ্গ কেন ব্যার্থ হচ্ছে। এটাই কি এগিয়ে বাংলার নমুনা?”

পাশাপাশি আজও তিনি সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, “প্রথম থেকেই রাজ্য সরকার শ্রমিকদের ফেরাতে ঢিলেমি করেছে। সব রাজ্য তাদের লোকজনদের ফেরালেও বাংলার নোডাল অফিসারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। নিজেরাই সব ঘেঁটে ফেলে এখন কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে।”

ঠিক একইভাবে বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীও জানিয়েছেন, “পরিযায়ী মানুষদের ধীরে ধীরে ট্রেনে ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ করেছিলাম, ট্রেনে ওঠার আগে ‘কোরোনা নেগেটিভ’ সার্টিফিকেট দিতে হবে, নামার পরে আবার পরীক্ষা করে, যেখানে যে যাবে তার ওপর নজরদারি রাখার দাবি করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী, আপনি ট্রেন নিতে রাজি হলেন না কিন্তু বাস, ট্রাক, গাড়ি আসতে বাধা রইলো না!!! হাজার হাজার বাস, ট্রাক, ছোট গাড়ি বাংলায় প্রবেশ করলো, আপনি তার খেয়াল করলেন না! পরিযায়ীরা আমার রাজ্যের মানুষ, শ্রমিক, ছাত্রছাত্রী, পর্যটক, চিকিৎসা করে ফেরা মানুষ, সবাই এরাজ্যের মানুষ, তারা কেউ কোরোনা-দৈত্য নয়, পরিযায়ী মানুষ নিয়ে আপনার বিষোদগার দুর্ভাগ্যজনক। লকডাউন কেন করতে হয়েছিল? কোরোনা মোকাবিলার জন্য স্থায়ী বা অস্থায়ী চিকিৎসা পরিকাঠামো তৈরি করার জন্য, আপনি কিছু করলেন না, আর এখন আপনার নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য পরিযায়ী মানুষদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন, এটা একজন মুখ্যমন্ত্রীকে শোভা দেয় না। বাংলায় কবে থেকে কোরোনা সংক্রমণ শুরু হয়? তখন পরিযায়ী শ্রমিকরা কোথায় ছিল?”