অন্যায় করলে হিন্দু-মুসলিম কাউকেই ছাড় নেই, টিকিয়াপাড়া প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন : সরকারের কাছে সকলে সমান। হিন্দু হোক অথবা মুসলমান অন্যায় করলে শাস্তি পেতেই হবে, টিকিয়া পাড়া ঘটনা প্রসঙ্গে বুধবার এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ঠিক কী ঘটেছিল টিকিয়াপাড়াতে?

মঙ্গলবার বিকেলে টিকিয়াপাড়ার বেলিলিয়াস রোডে একটি বাজারে প্রচুর মানুষ ভীড় করে আসেন। ভীড়কে নিয়ন্ত্রণে আনতে লকডাউনকে কার্যকর করতে তৎপর হওয়া পুলিশরাই রোষের শিকার হন। এটি সত্যি একটি লজ্জাজনক ঘটনা। যে কর্তব্য পালন করতে গিয়ে, অসচেতন মানুষকে সচেতন করতে গিয়ে, পুলিশকে মার খেতে হচ্ছে। প্রথম দিকে পুলিশ বুঝতেও পারেননি পরিস্থিতি কোন দিকে এগোতে চলেছে! এরপর বাধ্য হয়েই নামানো হয় র‍্যাফ। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে না! উল্টে জনতার রোষের মুখে পড়ে চার পুলিশ কর্মী আহত হন। পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভেঙে ফেলে মারমুখী জনতা।লকডাউন কার্যকর করতে গিয়ে পুলিশ এইভাবে রোষের শিকার হওয়ায় চারিদিকে এই ঘটনা নিয়ে নিন্দার সম্মুখীন হতে হয় সরকারকে।

গেরুয়া শিবির এই ঘটনার কড়া সমালোচনা করে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রশ্রয় পেয়েই রাজাবাজার থেকে মেটিয়াবুরুজ, পাকসার্কাস থেকে খিদিরপুরে লকডাউন মানা হচ্ছে না! বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা এই ঘটনার সমালোচনা করে বলেন, “এদের হাতে পুলিশ মার খেতে খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। গতকালের ঘটনা তা আরও বেআব্রু করে দিয়েছে মানুষের সামনে। আসলে আমরা যে বলছিলাম বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যে বলছিল রাজ্যের বিশেষ বিশেষ এলাকায় লকডাউন ঠিক মতো পালন হচ্ছে না, তখন দিদির খুব ঝাল লেগেছিল। কালকে সবাই দেখে নিয়েছে আসলে কী হচ্ছে বাংলায়!”

এরপর ২৯ এপ্রিল নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “টিকিয়াপাড়াতে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা ঘটা উচিত ছিল না।এটি একটি খারাপ ঘটনা।” বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, “টিকিয়াপাড়ায় একটা ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এর অ্যাকশন নেবে।তোমার কী? সারাক্ষণ শকুনির মতো বসে আছে। কখন একটা ডেড বডি আসবে আর ঠুকরে ঠুকরে খাবে।”

কোনো রকম ধর্ম না দেখেই যে অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে সরকার তাও এদিন মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে স্পষ্ট বলে দেন। বলেন, “এসবে আমরা জাত-ধর্ম দেখি না। অন্যায় করলে কোনো হিন্দু-মুসলমান নেই (সরকারের কাছে)। ক্রাইম ইজ ক্রাইম।”

গেরুয়া শিবিরের তরফ থেকেও তাঁর সরকারের সমালোচনা করা হয়েছিল, এদিন মুখ্যমন্ত্রীও এক হাত নিলেন গেরুয়া শিবির প্রসঙ্গে বলেন, “আপনারা যেখানে সরকার চালান সেখানে কী হচ্ছে? কই সেই সব নিয়ে তো আমরা বলতে যাচ্ছি না। আপনারা যদি মুখ খোলেন তাহলে আমিও আপনাদের প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবো। দিল্লিতে CAA র প্রতিবাদ করতে গিয়ে কত লোক মারা গিয়েছেন সেটা আমিও জানি। কিন্তু আমি এইসব চাই না।”

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার রাত্রেই রাজ্য পুলিশের তরফে ট্যুইট করে জানানো হয়, “টিকিয়াপাড়ার ঘটনাতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এরপর সেই ট্যুইটটি রিট্যুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী।সারারাত ঐ এলাকাতে তল্লাশি চালিয়ে পুলি ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে ওই ১৪ জনের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও রুজু করা হয়েছে।