নিজস্ব প্রতিবেদন : রাজেশ ওরাং, ভারত-চীন সেনা সংঘর্ষে ভারতীয় শহীদ জাওয়ানের তালিকায় জ্বলজ্বল করছে বীরভূমের বছর ২৬-এর এই জাওয়ানের নাম। শোকস্তব্ধ পরিবার শোক সামলে নিয়ে দাবি তুলেছেন, বদলার নেওয়ার। শহীদের পরিবার তারা, তাই চোখের জল মুছেও রাজেশের বাবা জানিয়েছেন, “ভারতের উচিত চিনকে এর যোগ্য জবাব দেওয়া! যাতে জওয়ানদের এই বলিদান ব্যর্থ না যায়!”
দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই চলছিলো ভারত-চীনের সীমান্ত সংক্রান্ত মনোমালিন্য। এই টানাপোড়েন দেখতে দেখতে অতিষ্ঠ রাজেশ চীনের প্রতি এতটাই তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন যে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সকলকেই বলতেন টিকটক আনইনস্টল করতে। নিজের ফোনে টিকটক অ্যাপ আনইনস্টলের পাশাপাশি পরিচিত কয়েকজনের ফোন থেকেও চায়না এই অ্যাপ আনইনস্টল করিয়ে তবেই ক্ষান্ত হন তিনি।
৮ মাস আগে শেষবারের মতো বাড়ি এসেছিলেন রাজেশ। পরিবারের সাথে শেষ কথা হয়েছিল দুই সপ্তাহ আগে। দুই সপ্তাহ আগে রাজেশ যখন ফোন করেছিলেন তখন তার খুড়তুতো ভাই অভিজিৎকে তিনি বলেছিলেন, “লকডাউন পড়ে যাওয়াই বাড়ি ফিরতে পারলাম না। এবার লকডাউন উঠে যাবে। আর আস্তে আস্তে সব কিছু খুলতে শুরু করবে। খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরব আমি। তারপর দিদির বাড়ি আত্মীয়দের বাড়ি ঘুরতে যাবো।”
হ্যাঁ বাড়ি তিনি ফিরবেন তবে কফিনে ঢাকা হয়ে। তিনি বাড়ি ফিরবেন পরিবারের গর্ব হয়ে, বীরভূমের গর্ব হয়ে, এই দেশের গর্ব হয়ে। শুধু ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছেটাই আর কখনো পূর্ণ হবেনা তার।
পরিবারের একমাত্র রোজগারে ছেলে ছিল রাজেশ। তার ওপরই দায়িত্ব ছিল ছোট বোনের বিয়ের। সেই সকল দায়িত্ব ফেলে রেখেই তিনি চলে গেলেন। রাজেশ বলেছিলেন আর একবছর পরই তিনি লাদাখ থেকে ট্রান্সফার হয়ে অন্য জায়গায় চলে যাবেন। কিন্তু তার নিয়তিতে অন্য কিছু লেখা ছিল, তাই সেই ট্রান্সফারের আর প্রয়োজন পরলো না! গত সোমবার ভারত-চীনের সীমান্ত সংঘর্ষ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পরিণত হয়। আর এই সংগ্রামেই শহীদ হলেন জওয়ান রাজেশ ওরাং।
মহঃবাজারের মালাডাং বংশীধর উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র রাজেশ, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর সিউড়ির বিদ্যাসাগর কলেজে ভর্তি হয়েও স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করেন নি। স্নাতক হওয়ার আগেই সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন তিনি ২০১৫ সালে। গ্রামের প্রথম কোনো ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ায় গোটা গ্রাম সেদিন গর্ব অনুভব করেছিল। ছেলের গর্বে পেশায় চাষী বাবা সুভাষ বাবুও সেদিন আনন্দিত হয়েছিলেন। মা ভেবেছিলেন অভাবের সংসারে ছেলে একটা চাকরি পেলেই ছেলের বিয়ে দেবেন। সেই মত সিউড়ির এক মেয়ের সাথে বিয়ের কথাবার্তাও এগিয়েছিলো।
কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। সানাইয়ের সুর হঠাৎ করে বদলে গেলো বিষাদে! ছেলের শহীদ হওয়ার খবর পেয়েই কান্নায় ভেঙে পড়লেন রাজেশের বাবা, আর শোকে জ্ঞান হারালেন রাজেশের মা।
উল্লেখ্য ভারত-চীন সেনা সংঘর্ষে অন্ততপক্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহীদ হয়েছেন। তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁদের এই বলিদানের জন্যই আমরা নিশ্চিন্তে ঘরের মধ্যে রাত কাটাতে পারছি। দেশের এই সকল অকুতোভয় প্রহরীদের উদ্দেশ্যে জানাই শ্রদ্ধা ও সেলাম।