নিজস্ব প্রতিবেদন : অতিমারি করোনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে তৃণমূল আর বিজেপির মধ্যে রাজনীতি। করোনা নিয়ে দুই রাজনৈতিক দল একে অন্যের সাথে উষ্ণ কথাবার্তাতে জড়িয়ে পড়লেও করোনা কিন্তু সাম্যবাদে বিশ্বাসী। করোনার কাছে দলীয় পতাকার সব রং-ই এক, করোনার কাছে ধনী-দরিদ্রও এক। তাই তৃণমূল থেকে বিজেপির সর্বস্তরেই ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমণ। আবার অনেকেই করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরে এসেছেন। করোনাকে হারিয়ে বাড়ি ফিরে আসা এই সকল যোদ্ধারা নিজের মুখেই শোনালেন অসম লড়াইয়ের কথা, বললেন করোনা মুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা।
তৃণমূলের থেকে উঠে আসা দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু অথবা বিজেপির লড়াকু নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়, করোনার কাছে সবাই এক। তাইতো কোনরকম দলাদলি না করে তৃণমূলের স্তর থেকে শুরু করে বিজেপি সব জায়গাতেই করোনা নিজের থাবা বসিয়েছে। খুশির খবর যে একজন বাদে বাদবাকি সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে।
রাজ্যের দমকল বিভাগের মন্ত্রী সুজিত বসু ২৮ শে মে করোনা আক্রান্ত হন। এরপর থেকে তিনি বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু ৩রা জুন তার শরীরে অস্বস্তি হতে থাকে। তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা হঠাৎ করে কমে যায়। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যে সকল রোগ থাকলে করোনা একেবারে শরীরে ঘাঁটি গেড়ে বসে শরীরকে কুপোকাত করে ফেলে সেই সকল রোগের মধ্যে একটি ছিল সুজিত বসুর শরীরে। তার সুগার ছিল। কিন্তু তবুও তিনি করোনাকে জয় করে ফিরেছেন। করোনাকে জয় করে বাড়ি ফেরা সম্পর্কে কী বললেন দমকল বিভাগের এই মন্ত্রী?
তিনি একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি কখনো মনের জোর হারান নি। আর সব সময় ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। তার বাড়িতে প্রতি সন্ধ্যায় আরতি হয়। সেই আরতীর প্রদীপ তার ছেলে তাকে প্রতিদিন দেখাতো। আর তিনি জানতেন যে তিনি সুস্থ হয়ে ফিরবেনই।
করোনা ধরা পরার ভয়ে যারা টেস্টই করাচ্ছেন না, তাদের উদ্দেশ্যে মন্ত্রীর বক্তব্য, “ভয় পাবেন না। ভয়ের কিছু নেই, কারণ আমারও সুগার ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি সবসময় জানতাম যে আমি ফিরবোই আর আমি এখান থেকে বেরোবোই।”
হুগলির বিজেপি সংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় ৩রা জুলাই করোনায় আক্রান্ত হন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই করোনাকে কাবু করে জয়ী হয়ে ফিরে আসেন লড়াকু এই নেত্রী। করোনা জয় প্রসঙ্গে কী বললেন লকেট?
লকেট বললেন, “আত্মবিশ্বাসটাই আমাকে জিতিয়েছে। আশেপাশের বেডে অনেক করোনা রোগী ছিল যাদের ক্রিটিকাল কন্ডিশন ছিল। আর সেই সকল খবর কানে ও আসছিল। তবু মনের মধ্যে জোর রেখেছিলাম যে কিছু হবে না। আতঙ্ক তো ছিলই কিন্তু সাথে মনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আর জোরও ছিলো যে কখনোই আমি হেরে যাবো না। মানসিকভাবে আমি দৃঢ় ছিলাম। মানে মানসিক জোর অনেক সময় অনেক ভাবে মানুষকে সাহায্য করে। করোনাকে পরাজিত করার ক্ষেত্রেও মানসিক জোর ভীষণভাবে দরকার।”
কলকাতা পুরসভার দুই নম্বর বরোর চেয়ারম্যান ৮৩ বছরের সাধন সাহাও করোনাতে সংক্রমিত হয়েছিলেন। তার বয়সের আর এই ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। তবু তিনি করোনা জয়ী হয়েছেন মনের জোড়কে সঙ্গী করেই। মনের জোড়ের কথা বলার পাশাপাশি সাধনবাবু এটাও বললেন যে, “আমরা যেন নির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতিগুলিকে গাফিলতি না করি। কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম পদ্ধতি গাফিলতি করার জন্যই সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।
সাধন বাবুর কথায়, “ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে কিছু নিয়ম পদ্ধতিগুলি মেনে চলতে হবে। যেগুলো আমি কিছুটা অ্যাভয়েড করেছি। আমার মেয়ে বার বার বলতো বাবা জামাটা চেঞ্জ করে নাও। আমি বলতাম, ও ছাড় তো কিছু হবে না। এই ধরনের গাফিলতিগুলোকে আমাদের সবার আগে ছাড়তে হবে।”
আর এই সকল করোনা জয়ীদের মুখ থেকে কথা শুনে যা বোঝা যায় তা থেকে দুটো বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
১) কোনরকম অবস্থাতেই মনের জোর হারালে চলবে না।
২) কতগুলো নিয়ম-পদ্ধতি ভীষণ ভাবে মেনে চলতে হবে। বাইরে থেকে এলে অবশ্যই জামা কাপড় বদলাতে হবে সঙ্গে সঙ্গে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।