নিজস্ব প্রতিবেদন : ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি জগত যে কতটা কঠিন, কতটা লড়াই করে এখানে নাম পেতে হয় তা বলতে গেলে যে তিনজন কিংবদন্তীর নাম উঠে আসে। তারা হলেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান আর মিঠুন চক্রবর্তী। এরা তিনজনই যথেষ্ট স্ট্রাগল করেছিলেন। একদিনে এরা বিখ্যাত হননি।
গড ফাদার ছাড়াই এই তিনজন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সামনের সারিতে এসে দাঁড়িয়েছেন। সেই দিক থেকে দেখতে গেলে এরা তিনজনেই আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা যোগান।
কলকাতা থেকে পুণেতে গিয়ে অভিনয় শিখেছিলেন মিঠুন। চোখে ছিলো স্বপ্ন বলিউডের নায়ক হওয়ার। এই জগৎটা যে কতটা কঠিন তা সেদিনই বুঝে গিয়েছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী। গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী থেকে মিঠুন চক্রবর্তী হওয়ার পিছনে ছিলো এক চূড়ান্ত স্ট্রাগেল। একসময় তিনি অমিতাভ-রেখার স্পট বয়ের কাজ করেছিলেন। এই দুজনের ব্যাগ বয়ে নিয়ে যেতেন মিঠুন। আর আজ অমিতাভ রেখার সাথেই উচ্চারিত হয় মিঠুনের নাম।
১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের ফিল্ম ‘মৃগয়া’তে অভিনয় করে মিঠুন জাতীয় পুরস্কার পান। এই সিনেমায় তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু এরপরও তাকে অভাবে পড়ে পরবর্তী কয়েকটি ফিল্মে অনেক ছোট ছোট রোলে অভিনয় করতে হয়েছিলো। অভাবের তাড়নায় তিনি বাছবিচার না করে সবেতেই রাজী হতেন।১৯৭৬ সালেই অমিতাভ রেখার ফিল্ম ‘দো অনজানে’তে মিঠুন ২ থেকে ৩ মিনিটের একটি ছোট একটা রোলে অভিনয় করেন। এই ফিল্মের শ্যুটিং চলাকালীনই তিনি আরও একটি কাজের অফার পান সেটি হলো স্পট বয়ের কাজ। অমিতাভ-রেখার স্পট বয় ছিলেন মিঠুন।
অমিতাভ ও রেখা যেখানেই যেতেন, মিঠুনকে সঙ্গে যেতে হত ব্যাগ বওয়ার জন্য। তিনি যদি কোনো কাজকে ছোট করে দেখতেন তাহলে আজ তিনি মিঠুন চক্রবর্তী হয়ে উঠতেন না। এরপর ১৯৭৮ সালে তার ফিল্ম ‘মেরা রক্ষক’ আবারও সুপার হিট হয়। অভিনয়ের পাশাপাশি নাচেও তিনি সমান দক্ষ ছিলেন, সেই দক্ষতাও তার উঠে আসে। ১৯৮২ সালে ‘ডিস্কো ডান্সার’ ফিল্মটির পর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয় নি। এই সিনেমার জন্য রাশিয়াতেও তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এরপর ১৯৯০ সালের ফিল্ম ‘অগ্নিপথ’-এ মিঠুন ছিলেন অমিতাভের সহ-অভিনেতা। মিঠুন তার কেরিয়ারে রেখার সাথে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। এরপর টলিউডে এলেন ১৯৭৮ সালে।
হ্যাঁ, এই সময় অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘নদী থেকে সাগরে’ ফিল্মই তার টলিউডের হাতে খড়ি। এই বাণিজ্যিক বাংলা সিনেমাটি বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছিলো। এরপর কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, ত্রয়ী ও অন্যায় অবিচার। এই তিনটি ব্লকবাস্টার বাংলা ফিল্ম করে মিঠুন বাঙালি দর্শকদের মন জিতে নেন। তারপর বলিউডের থেকে বাংলা সিনেমার দিকেই তিনি ঝুঁকে পড়লেন।
গুরু, মহাগুরু’র মিঠুন হয়ে উঠলেন টলিউডের রাজা।যদিও তিনি তেলুগু ও তামিল ফিল্মেও কাজ করেছেন। কিন্তু বাংলা ইন্ড্রাস্টিকে ভালোবেসে তিনি এখানেই থেকে গেলেন।